মেহেরপুরে মাইকিং করে পেঁয়াজ বিক্রি

544

॥ দিলরুবা খাতুন ॥
মেহেরপুর, ২৯ মার্চ, ২০১৯ (বাসস) : ‘কিনবেন পেঁয়াজ। মাত্র ৬০ টাকায় ১০ কেজি। এ সুযোগ শুধুমাত্র আজকের জন্য, যারা ৪০ কেজি কিনবেন তাদের জন্য মাত্র ৫ টাকা কেজি।’ এভাবেই মাইকিং করে মেহেরপুর জেলা শহর ছাড়াও প্রত্যন্ত জনপদে প্রতিদিনই পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। দাম কম হবার কারণে সব শ্রেণীর মানুষই এমন অফারে কৃষকদের কষ্টে উৎপাদিত সুখ সাগর পেঁয়াজ কিনছেন।
লাভের আশায় প্রতিবারের ন্যায় এবারও সুখ সাগর পেঁয়াজের চাষ করে আশায় বুক বেঁধেছিলেন মেহেরপুরের কৃষকরা। তারা বলছেন, প্রতিবছরই সুখ সাগর পেঁয়াজ চাষ করে আমাদের কমবেশি লাভ হতো। তাই এবারও পেঁয়াজ চাষ করেছি, ফলনও হয়েছে আগের মতো ভালো। কিন্তু এবারের চাষে লাভের তো দূরের কথা প্রতি কেজিতে লোকসান গুণতে হচ্ছে তিন টাকা করে।
মুজিবনগর উপজেলার সুখসাগর পেঁয়াজ চাষি সলেমান হোসেন জানান- এক বিঘা জমিতে সুখসাগর জাতের পেঁয়াজ চাষ করতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৫০-৫২ হাজার টাকা। কিন্তু যে পরিমাণ ফলন হয়েছে তা বিক্রি করে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার বেশি ঘরে আসবে না।
মেহেরপুরের বড়বাজার নামের পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি সুখসাগর পেঁয়াজ এখন পাঁচ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে মিলছে সাত থেকে আট টাকা কেজি দরে। কৃষক পাচ্ছেন কেজি প্রতি তিন-চার টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন কৃষকদের উৎপাদন খরচও উঠছে না। সদর উপজেলার গোভিপুর গ্রামে পেঁয়াজ ফেরি করে অফারে বিক্রি করতে দেখা গেল সমির আলী নামের একজনকে। তিনি জানালের মুজিবনগরের চাষিদের কাছে ৫৫ কেজির পেঁয়াজের বস্তা কিনিছেন ২২০ টাকা করে। প্রতিদিন অফারে ৮ থেকে ১০ বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। লাভ করছেন সাত থেকে আটশ’ টাকা করে।
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর, আনন্দবাস, গোপাল নগর সহ প্রায় সব গ্রামেই সুখসাগর জাতের পেঁযাজ চাষ করেন চাষিরা। তবে জেলার সদর ও গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে তাহেরপুরী জাতের পেয়াজ চাষটা বেশি হয়। চলতি বছর সুখসাগর জাতের পেঁয়াজ চাষ করে তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। প্রতিকেজি পেঁয়াজ উৎপাদন করতে সাত টাকা খরচ হলেও বিক্রি করতে হ্েচ্ছ মাত্র চার থেকে সাড়ে চার টাকায়।
শিবপুর গ্রামের পেয়াজ চাষি আবুল কালাম জানান, তিনি এ বছর পেয়াজ চাষ করেছেন ১০ বিঘা জমিতে। প্রতিবিঘা জমিতে তিনি খরচ করেছে ৫২ হাজার টাকা করে। বিঘাপ্রতি জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ মণ। এক বিঘা জমির পেঁয়াজের বর্তমান বাজার মূল্য ৩০ হাজার টাকা। প্রতিবিঘায় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, ভাল দাম পাওয়ার আশায় জমিতে পেঁয়াজ রেখে দিলেও তা ফেটে যাচ্ছে। ফেটে যাওয়া পেঁয়াজ বিক্রি হয় না। তিনি বলেন, পেঁয়াজ চাষ করে যেভাবে এ গ্রামের উন্নতি হয়েছে। এবার সেভাবেই গ্রামের মানুষ গুলো পেঁয়াজ চাষ করে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। পেঁয়াজ চাষি আবুল কালামের মত রফিকুল ইসলাম, বাবুল জোয়ার্দার, হায়াত আলী, আদম আলী, আশিক গাজীর সাথে কথা বললে একই চিত্র ভেসে উঠে। মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলা থেকে প্রতিদিন অন্তত ৩০ ট্রাক পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে বাজারজাত করছে কৃষকরা।
মেহেরপুর তহবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবু হানিফ জানান, সুখসাগর জাতের পেঁয়াজ সাইজে বড়। এ পেঁয়াজের চাহিদা নি¤œ ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের কাছে। তাছাড়া এ পেঁয়াজ বেশি দিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। যার ফলে চাহিদা না থাকায় চাষিদের কম দামেই পেঁয়াজ বিক্রি করে দিতে হয়।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, চলতি বছরে জেলায় ১ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে সুখসাগর ও তাহেরপুরী নামের এ দুই জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মুজিবনগর উপজেলাতে শুধু সুখসাগার জাতের পেয়াজ চাষ করেন চাষিরা। তিনি স্বীকার করেন- পেঁয়াজ চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কাঙ্খিত মূল্য না পেয়ে।