বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : নিরপরাধ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে র‌্যাবের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

148

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-র‌্যাব প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী-ভাষণ
নিরপরাধ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে র‌্যাবের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

র‌্যাবের কার্যক্রমকে আরো গতিশীলকরণে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের কল্যাণে, জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে এবং মনে রাখতে হবে যেহেতু সকলেই এই দেশের সন্তান তাই দেশের উন্নতি হলে, আর্থসামাজিক উন্নয়ন হলে এর সুফলটা নিজ নিজ পরিবারের সদস্যরাই পাবে, দেশের মানুষই পাবে। সেই সাথে গ্রামে গঞ্জে যারা বসবাস করেন তাঁদের ভাগ্যের উন্নতি হবে। বাংলাদেশেই সার্বিকভাবে দারিদ্র মুক্ত হয়ে গড়ে উঠতে পারবে।
তিনি বলেন, দেশটার উন্নয়ন হলে কেউ গৃহহীন থাকবে না,সকলেই আবাসন সুবিধা, অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা সহ মৌলিক সুবিধাগুলোগুলো নিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচার সুযোগ লাভ করবে এবং সমগ্র জাতিই উন্নত সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে উঠবে, যে সপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
কয়েক দফায় বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, আবাসন সংকট সমাধান এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনে যানবাহনের সুবিধা বৃদ্ধিতে তাঁর সরকারের উদ্যোগের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে আমরা যতটা স্বাবলম্বী হতে পারবো ততটাই আমরা সুযোগ-সুবিধা দিতে পারবো এবং আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই সুন্দরভাবে যেন তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারে সেটাই আমরা চাই। এজন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যেন স্ব -স্ব ক্ষেত্রে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে তাঁদের সেই কাজের সুবিধাটা আমরা করে দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় র‌্যাবের প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেম, আন্তরিকতা,সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের পেশাগত দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র এবং মাদক দ্রব্য উদ্ধার, জাল মুদ্রা, জাল পাসপোর্ট প্রস্তুতকারি, অবৈধ ভিওআইপি বিরোধী অভিযান এবং ভেজাল বিরোধী সহ নানা অভিযানে র‌্যাব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এবং অগ্রণী ভ’মিকা পালন করেছে।
তিনি বলেন,কাজেই র‌্যাবের সদস্যগণ দেশের অভ্যন্তরে সাধারণ মানুষের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় যে অবদান রেখেছে আমি এটুকু বিশ্বাস করি যে, দেশের মানুষেরও একটা আস্থা ও বিশ্বাস র‌্যাবের সদস্যদের প্রতি জন্মেছে এবং তাঁরা র‌্যাবকে যথেষ্ট সম্মানের চোখে দেখে।
সুন্দরবন এলাকায় জলদস্যুদের দমন করে তাঁদের সাধারণ জীবনে পুণর্বাসনে প্রধানমন্ত্রী র‌্যাবের বিশেষ ভ’মিকা উল্লেখ করে তিনি র‌্যাবের সদস্যদের ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘তারা এই পুরো এলাকাটা দস্যুমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।’
সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করার জন্য তাঁর সরকার ২০১২ সালে একটি টাস্কফোর্স করে দেয় এবং যৌথবাহিনী প্রায়ই সেখানে অভিযান পরিচালনা করতো বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
কেউ যদি দস্যুতা ছেড়ে দিয়ে সাধারণ জীবনে ফিরে আসে তাহলে তিনি তাঁদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেবেন মর্মে অতীতে প্রদত্ত ঘোষণার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই অঞ্চলের ৩২টি বাহিনীর প্রায় ৩২৮ জন জলদস্যু এ পর্যন্ত আত্মসমর্পন করেছে । তাঁদের আমরা আর্থিক সহায়তা দিয়ে ঘর-বাড়ি তৈরি এবং তারা যেন তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে সুন্দরভবে জীবন যাপন করতে পারে তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি ।’
তিনি বলেন, দস্যুতা ত্যাগকারিদের ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজে পড়শোনা করছে এবং একটি স্বাভাবিক জীবন যাপন প্রক্রিয়ার মধ্যে চলে এসেছে। দস্যুর সন্তান হিসেবে কেউ আর অপমাণিত হচ্ছে না। একটা সম্মান জনক জীবন-যাপন করতে পারছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, যারাই নানারকম সমাজবিরোধী কাজে যুক্ত তারা যদি আত্মমসমর্পন করে তাহলে তাদেরকে পুনর্বাসনে তাঁর সরকার একই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
দেশে শান্তি বজায় থাকার পাশাপাশি জনগণ যেন সুন্দরভাবে বাঁচার সুযোগ যেন পায় সেটা নিশ্চিত করাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিষাক্ত কুফল তুলে ধরে এর কারণে একটি পরিবার ও সমাজ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে আশংকা ব্যক্ত করে সমাজকে মাদক মুক্ত করার জন্য এ সময় সরকারের জঙ্গিবাদ বিরোধী গণসচেতন কার্যক্রমের ন্যায় সকলকে সম্পৃক্ত করে সমন্বিত কর্মসূচি চালুর বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি জঙ্গিবাদকে কেবল বাংলাদেশে নয় একটি বৈশ্বিক সমস্যা আখ্যায়িত করে বলেন, এটি বিশ্বব্যাপী বিরাজমান একটি সমস্যা হলেও এক্ষেত্রে আমরা বেশ কিছুা সফলতা অর্জন করতে পেরেছি । গোয়েন্দা সংস্থা সহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন শ্রেনী পেশার জনগণকে একত্রিত করে এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার কারণে এই সফলতা এসেছে।
তিনি বলেন, ‘একদিকে র‌্যাবের অভিযান এবং অপরদিকে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির ফলে জঙ্গিবাদ দমণে আমাদের সফলতা অর্জিত হয়। আর এক্ষেত্রে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর যে সাফল্য তা আজ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত।’
প্রধানমন্ত্রী জঙ্গি দমনে র‌্যাবের সাফল্যের প্রশংসা করে বলেন, আমরা চাই ভবিষ্যতে আর কখনও এদেশে যেন জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।
জঙ্গিবাদ সৃষ্টির পেছনে অতীতে কতিপয় রাজনৈতিক দলের মদদ থাকার প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন,‘এখানে দুর্ভাগ্য যে, কোন কোন রাজনৈতিক দল মদদ দিয়ে আসছে। যেমন গত নির্বাচনে তারা একটা প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, সেখানে র‌্যাবের একটি সফল অভিযানের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক দলের অফিস থেকে বিশাল অংকের অর্থ ধরা পড়ে। আর এর পরেই আমরা দেখেছি তাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে চলে আসে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে আর কেউ যেন এ ধরনের মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে বাধাগ্রস্থ করতে না পারে। তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাসস/অনু-এফএন/১৫০৫/-আসচৌ