ইউএই’র সহায়তায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় বিশ্বমানের ‘হেলথ সিটি’ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার

939

চট্টগ্রাম, ২২ মার্চ ২০১৯ (বাসস) : চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় বিশ্বমানের ‘হেলথ সিটি’ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
ইউএই’র চ্যারিটেবল প্রতিষ্ঠান শেখ জায়েদ বিন আল নাহিয়ান ফাউন্ডেশনের রাঙ্গুনিয়াস্থ ১১০ একর পরিত্যক্ত ভূমিতে এটি গড়ে তোলা হবে।
এক ছাদের নিচে সব ধরনের সুবিধা সম্বলিত বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এ হেল্থ সিটিতে বিশেষায়িত হাসপাতাল ছাড়াও থাকবে মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউটসহ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। মরণব্যাধী ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের জন্য আলাদা ইউনিট প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাবও পরিকল্পনায় হয়েছে।
এদিকে আজ শুক্রবার সকালে রাঙ্গুনিয়াস্থ ‘হেল্থ সিটি’ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন বাংলাদেশে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত এইচ ই সাইয়েদ মুহাম্মেদ আল মাহিরী। পরিদর্শনকালে আরব আমিরাতের বিভিন্ন সংস্থার আরো চারজন সদস্য এবং বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল তার সাথে ছিলেন।
রাষ্ট্রদূত এসময় প্রকল্প এলাকাটির সীমানা প্রাচীরসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখে পরিত্যক্ত জমিটি মানবসেবার কাজে ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেন। প্রকল্প এলাকা সংলগ্ন কর্ণফুলি নদীর তীরের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখে তিনি বিমোহিত হন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. সাইফুল্লাহিল আজম বাসসকে জানান, আজ শুক্রবার রাতে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে ‘হেল্থ সিটি’ নিয়ে ইউএই’র রাষ্ট্রদূতসহ আরব আমিরাতের পরিদর্শন টিমের বৈঠক করার কথা।
সংশ্লিস্ট সুত্র জানায়, প্রস্তাবিত হেলথ সিটিতে প্রাথমিক ভাবে ৬৪ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল দিয়ে শুরু করা হলেও ক্রমান্বয়ে তা ১২০ শয্যায় উন্নিত করা হবে বলে প্রকল্পটির ডিটেইল প্ল্যানে প্রস্তাব করা হয়েছে। আধুনিক মেটারনিটি সেবা নিশ্চিত করতে একটি অপারেশন থিয়েটারকে সার্বক্ষণিক দুজন সার্জনসহ প্রস্তুত রাখা হবে। অপর অপারেশন থিয়েটার ব্যবহার হবে জেনারেল সার্জারিতে। মা ও শিশুদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের উন্নত হাসপাতাল গুলোর ন্যায় সব ধরণের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে প্রস্তাবিত রাঙ্গুনিয়া শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান হাসপাতাল। এটিকে বাংলাদেশের অন্যতম বিশেষায়িত জেনারেল হাসপাতালে পরিণত করা হবে।
তথ্যমন্ত্রী ও রাঙ্গুনিয়া থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদ শেখ জায়েদ বিন আল নাহিয়ান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরব আমিরাত সফরকালে সে দেশের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনায় রাঙ্গুনিয়ায় তাদের পরিত্যক্ত ভূমিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি নজরে আনলে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আসেন রাষ্ট্রদুতের নেতৃত্বে পরিদর্শন দল।
২০২০ সাল নাগাদ হাসপাতালটির নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছেন শেখ জায়েদ বিন আল নাহিয়ান ফাউন্ডেশন।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এমরুল করিম রাশেদ জানান, ১৯৯১ সাল থেকে অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা ভূমিতে আরব আমিরাতের প্রয়াত বাদশা আল নাহিয়ানের প্রকল্পে বিশ্বমানের হাসপাতাল নির্মাণসহ বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম চালাতে নাহিয়ান পরিবারের সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এরই ধারাবাহিকতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিভিন্ন ধাপ এগুচ্ছে। এবার এ প্রকল্পটির দ্রুত বাস্তবায়নে মন্ত্রী তৎপর রয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, পরিত্যক্ত ১১০ একর জমিতে আরব আমিরাতের সহায়তায় একটি হেলথ সিটি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালোচ্ছে সরকার। সেখানে যদি বিশ্বমানের বিশেষায়িত হাসপাতালসহ মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলা যায়, তাহলে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যসেবায় এটি হবে একটি মাইলফলক।