বাজিস-২ : বিরূপ জলবায়ুর প্রভাবে বরগুনায় বিলুপ্ত হচ্ছে নানা প্রজাতির পাখি

199

বাজিস-২
বরগুনা-বিলুপ্ত হচ্ছে পাখি
বিরূপ জলবায়ুর প্রভাবে বরগুনায় বিলুপ্ত হচ্ছে নানা প্রজাতির পাখি
বরগুনা, ২২ মার্চ, ২০১৯ (বাসস) : জেলায় দেশী বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তন ও মানুষসৃষ্ট পরিবেশ দুষণের কারণে এক সময়ের সুপরিচিত বউকথা কও, বালিহাঁস, সরাইল, রাতকানা, কানাবক, লালবক, গুজিবক, জ্যাঠাবক, ডুবডুবি, ধুসর কায়েল, তোতাপাখি, টিয়া, ঘুঘু, দলঘুঘু, সুঁইচোর, ডাহুক, পানকৌড়ি, কোরা, বদর কবুতর, সাতভায়রা, মাছরাঙ্গা, গাংচিল, ফেচকে, কাঠঠোকরা, দোলকমল, দইরাজ, চড়–ই, তিত মুরগী প্রভৃতি পাখি এখন আর সচরাচর দেখা যায়না।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ূ পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ, অক্সফামের দূর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস প্রকল্পের সাবেক ব্যবস্থাপক (ডিআরআর ম্যানেজার) সাব্রীনা মমতাজ জানান, জলবায়ূ পরিবর্তন জনিত ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে বন্যা, ঝড় এবং তীব্র তাপদাহে দেশীয় প্রজাতির পাখির জীবনধারন সরাসরি এবং দূর্যোগ পরবর্তী সময়ে মারাত্মক ভাবে প্রভাবিত হয়। দূর্যোগে ব্যাপক প্রাণহানী এবং পরে খাদ্যাভাবসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পাখির সংখ্যা ক্রমশ কমছে।
আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও পাখির জন্য হুমকি হয়ে পড়েছে। আলাপকালে জানালেন, আমতলী সরকারি কলেজের পদার্থ বিদ্যা বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক উত্তম কুমার কর্মকার। তিনি মোবাইল ফোনের টাওয়ারগুলোর তেজস্কৃয়তার (রেডিয়েশন) কথা উল্লেখ করে জানান, যেসব এলাকায় এ টাওয়ারগুলো স্থাপন করা হয়েছে সেইসব এলাকায় টাওয়ারের কাছাকাছি ওই প্রকারের তেজস্কৃতায় অভিযোজন চড়–ই পাখি বিরল হয়ে পড়ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় কৃষকরা কোন কিছু না ভেবেই বেশির ভাগ জমিতে লিবাইমিড, ড্রাইমেক্রন, কারবিক্রন, ডায়াজিনন ১৪ জি, পাদান ১০ জি, মেটাসিসটকস, সুমিথিয়ন, ডিওটি, বিএইসসি, এড্রিন, এলড্রিন, সেভিন ডাস্ট ইত্যাদি আগাছা নাশক, কীটনাশক ও জমিশোধক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করেন। ফসলের ক্ষেতে ক্লোরোনেটেড হাইড্রো কার্বনযুক্ত কীটনাশকের অপরিমিত ব্যবহার পাখি বিলুপ্তির প্রধানতম কারণ। এসব রাসায়নিক যে কোন প্রাণি দেহে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
প্রাণি সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডা. আলতাফ হোসেন জানান, রাসায়নিক কীটনাশকের অব্যাহত অপরিমিত ব্যবহারের ফলে শক্তিশালী প্রাণিদেহেও বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। এসবের প্রতিক্রিয়ায় স্ত্রী পাখির জননতন্ত্রের স্বাভাবিক ক্রিয়ার ব্যর্থতায় পাখিকুল বিলুপ্ত হচ্ছে। কীটনাশকের মধ্যে ডিডিটির প্রভাব সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও মারাত্মক। তিনি আরও বলেন, ভিটামিন ও খাদ্যে ক্যালসিয়ামের অভাবে পাখি ও হাঁস-মুরগির ডিমের খোসা পাতলা হয়। ডিডিটি এসব প্রাণিদেহের ক্যালসিয়াম বিপাক ও তার অতি প্রয়োজনীয় উৎসেচক কার্বলিক অ্যানহাউড্রেন প্রবাহ নিবৃত্ত করে, বাঁধাপ্রাপ্ত হয় লিভার থেকে নির্গত উৎসেচক অস্টোজেন। এ জন্য ডিমের খোসায় ক্যালসিয়ামের আস্তরণ ঠিকমতো জমে না। অনেক সময় আবার খোসাই হয় না। ফলে ডিম নষ্ট হয়ে যায়। এসকল কারণে পাখিকূলের বংশবৃদ্ধিই বন্ধ হয়ে পড়ে।
উদ্ভিদের ফলবতি হওয়া ও বংশ বিস্তারের জন্য পরাগায়নের অন্যতম মাধ্যম পতঙ্গ। অপরিকল্পিত রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগ করে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় ধ্বংস করতে গিয়ে উপকারী পোকাও মারা পড়ছে। এতে উদ্ভিদের ক্ষতির পাশাপাশি পাখিদের খাদ্যাভাব বা বিষক্রিয়া দেখা দেয়। আমরা প্রাকৃতিকভাবে পোকা দমনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করছি। জানালেন, কৃষি বিভাগের কৃষিবিদ মো. বদরুল হোসেন।
বাসস/সংবাদদাতা/১২৪০/-নূসী