রোনাল্ডো বিহীন জুভেন্টাসের প্রথম পরাজয়, মিলান ডার্বিতে ইন্টারের জয়

185

মিলান, ১৮ মার্চ ২০১৯ (বাসস) : ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডেকে বিশ্রামে রাখার খেসারতই যেন দিতে হলো জুভেন্টাসের কোচ মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রিকে। গতকাল জেনোয়ার কাছে ২-০ গোলে পরাজিত হয়ে মৌসুমে প্রথম পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেয়েছে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। এর ফলে অপরাজিত থেকে লিগ জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হলো জুভদের। দিনের অপর ম্যাচে মিলান ডার্বিতে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী এসিমিলানকে ৩-২ গোলে পরাজিত করে লিগ টেবিলের তৃথীয় স্থানে উঠে এসেছে ইন্টার মিলান।
গত মঙ্গলবার এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে শেষ ১৬’র দ্বিতীয় লেগের লড়াইয়ে দারুনভাবে নিজেদের ফিরিয়ে এনে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করার পর ম্যাচটির হ্যাটট্রিকম্যান রোনাল্ডোকে কালকের ম্যাচে বিশ্রামে রাখার সিদ্ধান্ত নেন আলেগ্রি। রোনাল্ডোর অনুপস্থিতিতে জুভেন্টাস ২-০ গোলে পরাজয়ের হতাশায় ডুবলেও টানা অষ্টম সিরি-এ লিগ শিরোপা জয়ের পথে বেশ ভালভাবেই এগিয়ে রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা নাপোলির সাথে জুভেন্টাসের পয়েন্টের ব্যবধান বর্তমানে ১৫। উদিনেসের বিপক্ষে ৪-২ গোলের দুই ম্যাচ পর জয় নিয়ে কাল মাঠ ছেড়েছে নাপোলি। কালকের ম্যাচে আর্সেনাল থেকে ধারে খেলতে আসা নাপোলি গোলরক্ষক ডেভিড ওসপিনা মাথায় আঘাত লেগে ৪৪ মিনিটে মাঠ ত্যাগে বাধ্য হন। পরবর্তীতে নেপলস হাসপাতলে তার মাথায় সিটি স্ক্যান করা হয়েছে।
চলতি মৌসুমে আগের ২৭টি ম্যাচের ২৪টিতেই জয়ী হয়েছিল জুভেন্টাস। বাকি তিনটিতে ড্র হয়েছে। তুরিনে জেনোয়ার সাথে মৌসুমের প্রথম ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল। ম্যাচ শেষে আলেগ্রি বলেছেন, ‘এটা কোন দূর্ঘটনা নয়। তবে আমি হতাশ। কারন অপরাজিত থেকে লিগ শেষ করার লক্ষ্য সকলেরই ছিল। কোন খেলোয়াড়ই সব ম্যাচে নিজের শতভাগ দিতে পারেনা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচ খেলে অনেকেই পরিশ্রান্ত ছিল।’
২০১৮ সালের এপ্রিলে নাপোলির বিপক্ষে সিরি-এ লিগে পরাজয়ের ম্যাচটি ছিল আলেগ্রির অধীনে জুভেন্টাসের প্রথম পরাজয়। তবে ২০১৭ সালের নভেম্বরে সাম্পদোরিয়ার বিপক্ষে পরাজয়ের পর কালকের ম্যাচটি ছিল প্রথম এ্যাওয়ে ম্যাচে পরাজিত।
তবে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নরা ইতোমধ্যেই এবারের মৌসুম কোপা ইতালিয়াতে আটলান্টা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে ইয়ং বয়েজ ও শেষ ১৬’র প্রথম লেগের লড়াইয়ে এ্যাথলেটিকো মাদ্রিকের কাছে পরাজিত হয়েছে। আলেগ্রি বলেন, এই পরাজয়টা আমাদের উপকারে আসবে। কারন হয়তবা আমরা মনে করতে পারি লিগ শিরোপা আমাদের কাছে এসে গেছে। এখনো আমাদের অন্তত পাঁচটি ম্যাচে জয়ী হতে হবে। আটলান্টার বিপক্ষে কোপা ইতালিয়ার ম্যাচটি এক্ষেত্রে উদাহরন হতে পারে। আন্তর্জাতিক বিরতির আগে এটাই আমাদের শেষ ম্যাচ। সে কারনে খেলোয়াড়রা বিশ্রাম নিয়ে একেবারে সতেজ হয়ে মাঠে ফিরতে পারবে।
পেশীর ইনজুরির কারনে দীর্ঘ ১০মাস বিশ্রামে থাকার পর জুভেন্টাসের সাবেক মিডফিল্ডার ২৬ বছর বয়সী স্টিফানো স্টুরারো কাল প্রথম জেনোয়ার হয়ে মাঠে নেমেছিলেন। বদলী বেঞ্চ থেকে উঠে আসার দুই মিনিটের মধ্যে ৭২ মিনিটে তার গোলে এগিয়ে যায় জেনোয়া। আরেক বদলী খেলোয়াড় গোরান পানডেভ ৮১ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুন করার পাশাপাশি দলের জয় নিশ্চিত করেন।
আলেগ্রি বলেছেন, ‘আমি স্টুরারোর জন্য খুশী। কারন মাঠে ফিরে আসার জন্য সে অনেক কষ্ট করেছে। আজ তার কারনেই ম্যাচের ভাগ্য বদলে গেছে।’
নাপোলি প্রথমার্ধে ওসপিনার ইনজুরি নিয়ে দু:শ্চিন্তায় থাকরেও শেষ পর্যন্ত জয় তুলে নেয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে। উদিনেস স্ট্রাইকার ইগনাসিও পুসেত্তোর সাথে বিরতির ঠিক আগে সংঘর্ষ হয় এই কলম্বিয়ান গোলরক্ষকের। তবে কোচ কার্লো আনচেলত্তি জানিয়েছেন সৌভাগ্যবশত: ইনজুরির মাত্রা ততটা গুরুতর নয়। তবে পুরো রাত তাকে হাসপাতালে পর্যবেক্ষনে রাখা হয়েছে।
ম্যাচের ১৭ মিনিটে আমি ইউনেসের কার্লিং শটে এগিয়ে যায় নাপোলি। ১৬ মিনিটে দ্রিয়াজ মার্টিনসের ক্রস থেকে হোসে ক্যালেয়ন ব্যবধান দ্বিগুন করেন। কিন্তু এই লিড বেশীক্ষণ ধাে রাখতে পারেনি নাপোলি। ৩০ ও ৩৬ মিনিটে কেভিন লাসাগনা ও সেকো ফোফানার পরপর দুই গোলে ম্যাচে ফিাে আসে উদিনেস। ৫৭ মিনিটে আবারো ক্যালেয়নের কর্ণার থেকে আরকাডিউস মিলিকের হেডে এগিয়ে যায় স্বাগতিক নাপোলি। ৬৯ মিনিটে মার্টিনস দলের জয় নিশ্চিত করেন।
এদিকে সান সিরোতে উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে ইন্টার মিলান শেষ পর্যন্ত জয় ছিনিয়ে নিয়ে আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার স্বপ্ন টিকিয়ে রেখেছে। ২০১৪ সালের পর থেকে এসি মিলান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার সুযোগ পায়নি। ম্যাচের তিন মিনিটে মাটিয়ান ভেসিনোর গোলে এগিয়ে যায় ইন্টার। ৫১ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুন করেন স্টিফেন ডি ভ্রিজ। ৬৭ মিনিটে স্পট কিক থেকে দলের পক্ষে জয়সূচক গোলটি করেন লটারো মার্টিনেজ। এসি মিলানের হয়ে ৫৭ মিনিটে টিমেয়ো বাকাইয়োকো প্রথম গোল করার পর ৭১ মিনিটে মাতেও মসাচ্চিও দ্বিতীয় গোল কওে দলকে লড়াইয়ে ফিরিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই গোল দুটি দলের পরাজয় আটকানোর জন্য যথেষ্ট ছিলনা।