বাজিস-৪ : জয়পুরহাটের রাস্তাঘাট আবার তালগাছে ভরে যাচ্ছে

152

বাজিস-৪
জয়পুরহাট-তালগাছ
জয়পুরহাটের রাস্তাঘাট আবার তালগাছে ভরে যাচ্ছে
জয়পুরহাট, ১৮ মার্চ, ২০১৯ (বাসস) : কবির ভাষায় ”ঐ দেখা যায় তালগাছ, ঐ আমাদের গাঁ” বা তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে উকি মারে আকাশে..। এসব ছড়া-কবিতা শিশুদের খুব প্রিয়। বর্তমান সরকারের নানা মূখী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে সেই হারিয়ে যাওয়া তালগাছে আবার ভরে যাচ্ছে জয়পুরহাটের রাস্তা-ঘাট।
কিছুদিন আগেও তালগাছ দেখতে কেমন জিজ্ঞাসা করলে খুঁজতে হতো এ গ্রাম থেকে ও গ্রামে, যা এখন সব খানেই চোখে পড়বে। কথায় আছে তালগাছ মানেই গ্রামের ঐতিহ্য, বাংলার ঐতিহ্য। আকাশ ছুঁই ছুঁই তালগাছ সেই আদিকাল থেকেই গ্রাম বাংলার শোভা বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে চলেছে। সারি সারি তালগাছে মানুষের মনও জুড়াতো। নিকট অতীতেও তালগাছ শোভা ছড়াতো। বজ্রপাত থেকে প্রাণহানী রোধ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা রক্ষা করতো ।
তালের পিঠা, তালের গুড়, তালের রস, তালের বীজের ভেতরের সাদা অংশটি গ্রামবাংলার মানুষের কাছে মজাদার খাবার। তালের পিঠা দিয়ে অতীতে জামাই বাড়ি, মেয়ের বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি সহ নানান আত্মীয়তার বন্ধন রচনা হতো বলে জানান, বেল আমলা গ্রামের আব্দুর রহিম ও আফতাব উদ্দিন।
এক সময় জয়পুরহাট জেলা সহ আশ পাশের জেলা গুলোতেও সড়কের পাশে, ঝোপ ঝাড়ে, জংগলে তালগাছ চোখে পড়তো। বর্তমানে কমই দেখা যায তালগাছের সারি। অতীতে গ্রাম, পাড়া, মহল্লা, জমি, পুকুর, মাঠ, মসজিদ, স্কুল-মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন স্থাপনা চিনতে বলা হতো উঁচু ওই তালগাছটার পাশে।
তালের গাছ ও পাতা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। তালের গাছের গুল দিয়ে গ্রামের সেমি পাকা ঘরের ছাদ দেয়ার কাজে ব্যবহার করা হতো বর্গা হিসেবে। গ্রাম গঞ্জের পুরনো মাটির ঘরবাড়িতে এখনো পাওয়া যাবে এর চিহ্ন। ঘরের বর্গা হিসেবে এটি মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী।
তাল পাতায় তৈরি হয় নানা ডিজাইনের হাতপাখা, যা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবহন করে। প্রতিটি বাসা-বাড়িতেই গরম আসলে আলপনা আঁকা তাল পাতার পাখা দেখা যেত। সময়ের পরিক্রমায় অযতœ, অবহেলা ও গুরুত্বের অভাবে ঐতিহ্যবাহী তালগাছ হারিয়ে যায়। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ও বজ্রপাত থেকে প্রাণহানী রোধ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সরকারের নির্দেশনায় পাঁচ উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের সার্বিক তত্বাবধানে দেড় লাখ তাল গাছের বীজ রোপণ করা হয়েছে এ জেলায়। বজ্রপাত থেকে প্রানহানী রোধ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলার পাঁচ উপজেলাতেই তালবীজ রোপণের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে জানান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির হোসেন। এতে হারিয়ে যাওয়া তালগাছে জেলার গ্রামীণ পর্যায়ের রাস্তাঘাট গুলো আবার ভরে উঠতে শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।
বাসস/সংবাদদাতা/কেইউ/১২১০/নূসী