নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটার আকারের জাটকা ধরা নিষিদ্ধ : মৎস্য প্রতিমন্ত্রী

208

ঢাকা, ১৫ মার্চ, ২০১৯ (বাসস) : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বলেছেন, নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত একটানা ৬ মাস ২৫ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চি সাইজের (আকার) জাটকা ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পৃথিবীর আরো ১৩টি দেশে ইলিশ পাওয়া গেলেও আমাদের সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে ইলিশের বিরাট অবদান রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশ এবং দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের ১২ শতাংশ। তাই ইলিশ আমাদের আমিষের চাহিদাপূরণের পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও দারিদ্র বিমোচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
‘কোনো জাল ফেলবো না, জাটকা-ইলিশ ধরবো না।’- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে আগামী কাল থেকে জাতীয় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০১৯ উদযাপন উপলক্ষে আজ শুক্রবার মৎস্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী ইলিশকে ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই পণ্য) উল্লেখ করে বলেন, ইলিশ আহরণে উপকূলীয় মৎস্যজীবীদের সরাসরি প্রায় ৫ লাখ এবং পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন, রপ্তানি ইত্যাদি কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ২৫ লাখ লোক জড়িত রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী খসরু ইলিশ সম্পদ রক্ষা এবং এর ক্রমবর্ধমান উন্নয়নে মৎস্য মন্ত্রণালয়ের গৃহীত কার্যক্রমের বর্ণনা দিয়ে বলেন, প্রতিবছর নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত জাটকা ধরা নিষিদ্ধকালে মৎস্য সংরক্ষণ আইনের আওতায় নদী, মাছঘাট, মৎস্যআড়ত ও বাজারে অভিযানসহ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এ সময়ে জেলেরা যাতে ক্ষুধায় কষ্ট না পায়, সে জন্য ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা প্রদান এবং জাটকা আহরণে বিরত অতিদরিদ্র জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিগত ২০০৮-০৯ অর্থবছরে যেখানে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ দশমিক ৯৯ লাখ মেট্রিক টন, সেখানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫ দশমিক ১৭ লাখ মে.টনে উন্নীত হয়েছে। এমনকি মা-ইলিশ রক্ষা পাচ্ছে এবং নিরাপদে ডিম ছাড়তে পারছে বলেই নিম্ন রমঘনা হতে ‘জাটকা’ আজ পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, সুরমায় বিস্তৃতিলাভ করেছে। পদ্মানদীর দুইপাড়ের জেলাসমূহ যেমন-ফরিদপুর, রাজবাড়ী, পাবনা, কুষ্টিয়া, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং যমুনা নদীর তীরবর্তী জেলা সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। জাটকা ও মা-ইলিশ রক্ষায় চলমান কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়ন করা গেলে সারাবছর ইলিশের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রতিমন্ত্রী জাটকা রক্ষার ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এবছরও ১৬-২২ মার্চ পর্যন্ত ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০১৯’ পালনে সর্বস্তরের জনগণের সহায়তাকামনা করেন। তিনি বলেন,বর্তমান সরকার জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালে জেলেদের ভিজিএফ খাদ্যসহায়তার পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭৪টি জেলে পরিবারের জন্য ৪০ কেজি হারে মোট ৩৯ হাজার ৭৮৮ মে.টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। চলতি বছর উপকূলীয় জেলাছাড়াও জাটকার সম্প্রসারিত নদীতীরবর্তী ১৩টি রজলার ৫১ উপজেলায় রমাট ৪৭ হাজার ৪৮০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বিগত তিনবছর যাবৎ মা-ইলিশ সংরক্ষণে জেলেদের ভিজিএফ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে এবং চলতি রমৗসুমে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ৭০৯টি রজলে পরিবারকে ২০ রকজি হারে রমাট ৭ হাজার ৯১৪ মে.টন চাল দেয়া হয়েছে। ২০০৮-০৯ হতে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত ১১ বছরে মোট ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৫২ মে.টন খাদ্য সহায়তা দেয়া হলেও ২০০৪-০৫ হতে ২০০৭-০৮ অর্থবছর পর্যন্ত এ সহায়তার পরিমাণ ছিল মোট ৬ হাজার ৯০৬ মে.টন।
সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব রইছউল আলম মন্ডল, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সাইদ মো. রাশেদুল হক, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড.ইয়াহিয়া মাহমুদসহ মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আগামীকাল ১৬ মার্চ ভোলা জেলার চরফ্যাশনে সামরাজ মৎস্যঘাটে সকাল ১১টায় মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠিত হবে। উদ্বোধনের পর সেখানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরুর নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য নৌ-র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে।