বাজিস-৯ : মেহেরপুরে তামাক চাষে কমছে জমির উর্বরতা

189

বাজিস-৯
মেহেরপুর-তামাক চাষ
মেহেরপুরে তামাক চাষে কমছে জমির উর্বরতা
মেহেরপুর, ১৪ মার্চ, ২০১৯ (বাসস) : মেহেরপুর তামাক চাষের অন্যতম জেলা। জেলার মাঠজুড়ে তামাক চাষ হচ্ছে। এসব তামাকের জমিতে একসময় মসুর, গম, যব, ছোলা, ভুট্টা, ধান ইত্যাদি আবাদ হতো। তামাক চাষে একদিকে যেমন বেড়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি অন্যদিকে কমছে এসব জমির উর্বরতা। ২০১৮ সালে এ জেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। এ বছর বেড়ে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টরে চাষ হয়েছে। যেসব জমিতে তামাকচাষ করা হয় সেসব জমিতে অন্য ফসল চাষে উৎপাদন হয় নামমাত্র।
ক্ষতিকর দিক জানা সত্বেও বিভিন্ন তামাক কোম্পানির লোভনীয় প্রস্তাবে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে জমির উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে সেদিকে খেয়াল করছেনা চাষিরা। তামক চাষিদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারিভাবেই উদ্যোগ এবং তামাকচাষ বন্ধে আইন প্রয়োজন বলে অনেকে মনে করছেন।
মেহেরপুর সদর উপজেলার মদনাডাঙ্গা, আমঝুপি, বারাদী, চাঁদবিল, শ্যামপুর, শালিকা, চকশ্যামপুর, নুরপুর, গাংনী উপজেলার বাওট, নওদা হোগলবাড়িয়া, বামুন্দী, দেবীপুর, করমদী, নওপাড়া, কাজীপুর, মটমুড়া, ভোমরদহ, আকুবপুর, ছাতিয়ান, মুন্দা, মাঝেরগ্রাম, চরগোয়ালগ্রাম, কুঞ্জনগর, সহগলবাড়িয়া, মোমিনপুর, নওদা মটমুড়া, বেতবাড়িয়া, কল্যাণপুর, সাহারবাটি, চেংগাড়া, আমতৈল, মানিকদিয়া, সিন্দুর কৌটা, বাদিয়াপাড়া, ধানখোলা, মহিষাখোলা, গাঁড়াডোব, গাঁড়াবাড়িয়া, সানঘাট এবং মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালিসহ বিভিন্ন গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে রয়েছে তামাকের চাষ।
কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষকদের সঙ্গে মাঠ দিবস, পরামর্শদানসহ কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করা হলেও তেমন সুফল মিলছেনা। বরং প্রতিবছরই তামাকচাষ বাড়ছে। সরেজমিনে জেলার গাংনী উপজেলার মাঠে যতদুর চোখ মেলে দেখা যায় শুধু তামাক আর তামাকই চোখে পড়ে।
গাংনীর ভোমরদহ গ্রামের তামাক চাষি নজরুল ইসলাম জানান, ঋণসহ তামাক কোম্পানির দেওয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কারণে চাষিরা তামাক চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। একই গ্রামের রহমান আলী জানান, প্রত্যেক বছর ৭/৮ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেন তিনি। তামাক চাষে পরিশ্রম বেশি হলেও অর্থকরী আবাদ এবং লাভজনক। তাছাড়া কোম্পানীগুলো তামাকচাষে আগাম সার ও কীটনাশক দেন চুক্তিবদ্ধ চাষিদের।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো.আক্তারুজ্জামান জানান, চলতি বছর মেহেরপুর জেলায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হয়েছে। গত বছর জেলায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছিল। তিনি জানান, তামাক চাষের ফলে জমির উর্বরতা শক্তি মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে। একই জমিতে কয়েক বছর তামাকের চাষ করার ফলে জমিতে বিশেষ ধরনের আগাছা জন্মে। এ আগাছা জমিতে একবার জন্মালে সে জমিতে আর কখনো অন্য ফসল চাষ করা সম্ভব হয়না। তিনি জোর দিয়ে বলেন- কৃষি নির্ভর মেহেরপুর জেলাতে ধান, গম উৎপাদনে জেলার চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় খাদ্যভা-ারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকে রেখে আসছে দীর্ঘবছর। এভাবে চামাকচাষ চলতে থাকলে ভবিষ্যতে জেলার চাহিদা মেটাবার সামর্থ থাকবেনা।
বাসস/সংবাদদাতা/কেইউ/১৩৫০/নূসী