রোনাল্ডোর হ্যাটট্রিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে জুভেন্টাস

220

তুরিন (ইতালি), ১৩ মার্চ ২০১৯ (বাসস) : অসাধারণ এক হ্যাটট্রিকে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো জুভেন্টাসকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে দিয়েছেন। মঙ্গলবার শেষ ১৬’র দ্বিতীয় লেগের লড়াইয়ে এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদকে রোনাল্ডোর হ্যাটট্রিকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে দুই লিগ মিলিয়ে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে শেষ আট নিশ্চিত করে ইতালিয়ান জায়ান্টরা।
দুই অর্ধে দু’টি হেডের সাহায্যে পর্তুগীজ সুপারস্টার দুই গোল করেন। এছাড়া ম্যাচের শেষের দিকে স্পট কিক থেকে গোল করে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন। ঘরের মাঠ তুরিনে পুরো ম্যাচেই স্বাগতিক জুভেন্টাসের আধিপত্য ছিল। আগামী শুক্রবার শেষ আটের ড্র অনুষ্ঠিত হবে।
ম্যাচ শেষে হ্যাটট্রিকম্যান রোনাল্ডো বলেছেন, ‘এই রাতটা সবসময়ই আমাদের জন্য বিশেষ একটি রাত হয়ে থাকে। এটা শুধুমাত্র আমি গোল পেয়েছি সে কারণে নয়, পুরো দল জিতেছে যা সত্যিই বিশেষ কিছু। এটাই একটি চ্যাম্পিয়ন দলের মানসিকতা। এ কারণেই জুভেন্টাস আমাকে দলে নিয়েছে। যাদুকরী একটি রাতে আমি দলকে সহযোগিতা করতে পেরেছি, এটা আমার কাছে অনেক কিছু।’
মাদ্রিদের ঘরের মাঠে প্রথম লেগে দিয়েগো সিমিয়োনের দলের যে দাপট ছিল তার কিছুই কাল তারা দেখাতে পারেনি। আর সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে জুভেন্টাস। পরাজয়ের সাথে সাথে আগামী ১ জুন ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোতে ঘরের মাঠে ফাইনাল খেলার স্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হলো না সিমিয়োনের শিষ্যদের।
জুভেন্টাসের কোট মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রি বলেছেন, ‘আজ ছেলেরা দারুণ পরিণত একটি ম্যাচ খেলেছে। ম্যাচটিতে নিজেদের সেরাটা দেবার জন্য সবাই মুখিয়ে ছিল। আমি তাদের অভিনন্দন জানাতে চাই। ঠিক এটাই আমরা প্রথম লেগে প্রত্যাশা করেছিলাম। এই ধরনের ম্যাচে অনেক ঝুঁকি থাকে। খেলোয়াড়দেরও মানসিকভাবে দারুণ চাঙ্গা থাকতে হয়।’
এই নিয়ে অষ্টমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লিগে হ্যাটট্রিকের কৃতিত্ব অর্জন করলেন রোনাল্ডো। এর আগে ২০১৬ সালের এপ্রিলে উল্ফসবার্গের বিপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদ প্রথম লেগে ২-০ গোলে পরাজিত হলেও পর্তুগীজ তারকার হ্যাটট্রিকে আবারো লড়াইয়ে ফিরে এসেছিল গ্যালাকটিকোরা। কালকের ম্যাচটি যেন তারই প্রতিচ্ছবি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনাল্ডো এর মাধ্যমে পুরো টুর্নামেন্টে ১২৪ গোল করলেন। এবার করেছেন মাত্র চার গোল।
গত বছর গ্রীষ্মে ৩৪ বছর বয়সী রোনাল্ডোকে ১০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে দলে ভিড়িয়েছিল জুভেন্টাস। এই চুক্তির পিছনে একটাই লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অধরা শিরোপাটিকে দীর্ঘদিন পর ঘরে তোলা। ১৯৯৬ সালে সর্বশেষ ইউরোপের সর্বোচ্চ আসরে শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছিল ইতালিয়ান জায়ান্টরা। গত চার বছরে দুইবার ফাইনালে খেলে রানার্স-আপ ট্রফি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে জুভেন্টাসকে।
কালকের ম্যাচের ফেডেরিকো বার্নারডেশি ও মারিও মান্দজুকিচকে নিয়ে পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর বিজয়ী রোনাল্ডো শুরু থেকেই আক্রমনাত্মক মেজাজে খেলতে থাকেন। প্রথমার্ধ প্রায় পুরোটাই আলেগ্রির দলের দখলে ছিল। এই অর্ধে সর্বমোট নয়টি শট গোলপোস্টে করেছে জুভেন্টাস। জুভেন্টাসের হয়ে ৫০০তম ম্যাচ খেলতে মাঠে নেমেছিলেন অধিনায়ক গিওর্গিও চিয়েলিনি। ম্যাচর শুরুর চার মিনিটের মধ্যে চিয়েলিনি গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিলন। কিন্তু ভিএআর প্রযুক্তির সহায়তায় দেখা গেছে গোলের আগে রোনাল্ডো এ্যাথলেটিকো গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাককে ফাউল করেছেন। ফলে গোলটি বাতিল হয়ে যায়। শক্তিশালী রক্ষনভাগের জন্য পরিচিত এ্যাথলেটিকো ২৭ মিনিট পর্যন্ত জুভেন্টাসকে আটকে রেখেছিল। কিন্তু এরপর আর শেষ রক্ষা হয়নি। বার্নারডেশির নিখুঁত ক্রসে রোনাল্ডো হেড করে দলকে এগিয়ে দেন। এক মিনিট পর বার্নারডেশির কার্লিং ফ্রি-কিক অল্পের জন্য বাইরে চলে যায়। রোনাল্ডো হেডের সাহায্যে দ্বিতীয় গোলের সুযোগ নষ্ট করেন। বিরতির ঠিক আগে মিরালেম পাজানিকের কর্ণার থেকে চিয়েলিনির হেড ওবলাক ক্লিয়ার করেন। আলভারো মোরাতা এ্যাওয়ে গোলের সুযোগ নষ্ট করেন।
কিন্তু বিরতি থেকে ফিরে হুয়াও কানসেলোর ক্রসে রোনাল্ডো হেডের সাহায্যে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুন করেন। বদলী বেঞ্চ থেকে উঠে আসার সাথে সাথে তরুন মোয়েস কিন সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। ৮৬ মিনিটে ডি বক্সের ভিতর বার্নারডেশিকে ফাউলের অপরাধে এ্যাঞ্জেল কোরিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টির নির্দেশ দেন ডাচ রেফারি বিওন ক্ইুপার্স। স্পট কিক থেকে রোনাল্ডো এ্যথলেটিকোর বিপক্ষে ২৫তম পেনাল্টি গোল পূরণ করেন। এটি ছিল এ্যাথলেটিকোর বিপক্ষে তার চতুর্থ হ্যাটট্রিক।