ওয়াগনার-বোল্ট তোপে ওয়েলিংটন টেস্টেও ইনিংস ব্যবধানে হারলো বাংলাদেশ

488

ওয়েলিংটন, ১২ মার্চ ২০১৯ (বাসস) : দুই বাঁ-হাতি পেসার নিল ওয়াগনার ও ট্রেন্ট বোল্টের বোলিং তোপে নিউজিল্যান্ডের কাছে ওয়েলিংটন টেস্ট ইনিংস ও ১২ রানের ব্যবধানে হারলো সফরকারী বাংলাদেশ। পঞ্চম ও শেষ দিনের মধ্যাহ্ন-বিরতির আগেই ম্যাচ হারলো টাইগাররা। অর্থাৎ বৃষ্টির কারনে প্রথম দুই দিন ভেস্তে যাবার পর পরের আড়াই দিনেই টেস্ট হারলো বাংলাদেশ। এই আড়াই দিন ২০১.৫ ওভার লড়াই করেছে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড।
দ্বিতীয় টেস্ট জিতে তিন ম্যাচের সিরিজ জয়ও নিশ্চিত করলো স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকলো কেন উইলিয়ামসনের দল। হ্যামিল্টনে সিরিজের প্রথম টেস্ট ইনিংস ও ৫২ রানে জিতেছিলো নিউজিল্যান্ড। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এই নিয়ে ৪০বার এবং নিউজিল্যান্ডের কাছে সপ্তমবারের মত ইনিংস ব্যবধানে ম্যাচ হারলো বাংলাদেশ।
২২১ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে চতুর্থ দিন শেষে ৩ উইকেটে ৮০ রান করেছিলো বাংলাদেশ। ইনিংস হার এড়াতে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিন আরও ১৪১ রান করতে হতো বাংলাদেশকে। দুই মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিথুন ২৫ ও সৌম্য সরকার ১২ রান নিয়ে দিন শেষ করেছিলেন। আগের দিন সাদমান ইসলাম ২৯, মোমিনুল হক ১০ ও তামিম ইকবাল ৪ রান করে আউট হন।
পঞ্চম দিনের শুরুটা ভালোই ছিলো দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মিথুন ও সৌম্যর। দেখেশুনেই খেলছিলেন তারা। উইকেট ধরে রাখাই প্রধান লক্ষ্য ছিলো মিথুন-সৌম্যর। কিন্তু দিনের দশম ওভারে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তারা। সৌম্যকে ২৮ রানে থামিয়ে দেন বোল্ট। তার ৫৭ বলের ইনিংসে ৫টি চার ছিলো। ৫৫ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর আগের দিন জুটি বেঁেধছিলেন মিথুন-সৌম্য। জুটিতে ৫৭ রান যোগ করতে সক্ষম হন তারা।
দলীয় ১১২ রানে সৌম্য ফিরে যাবার পর ক্রিজে মিথুনের সঙ্গী হন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। নিউজিল্যান্ড বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পথেই ছিলেন তারা। তবে বেশি দূর এগোতে পারেননি মিথুন-মাহমুদুল্লাহ। এবার বাংলাদেশ শিবিরে আঘাত হানেন ওয়াগনার। হাফ-সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় পৌছে ৪৭ রানে থেমে যান মিথুন। ১০৫ বল মোকাবেলা করে ৭টি চার মারেন তিনি। মাহমুদুল্লাহ’র সাথে মিথুনের ৪০ রানের জুটি ছিলো।
মিথুন ফিরে গিলে স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের শেষ ভরসা হিসেবে ক্রিজে আসেন উইকেটরক্ষক লিটন দাস। প্রথম ইনিংসে ৩৩ রান করা লিটন এবার হতাশ করেন। ওয়াগনারের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ১ রানেই বিদায় নেন লিটন। তাতেই বাংলাদেশের ইনিস হারের পথ তৈরি হয়ে যায়। কারন ক্রিজে মাহমুদুল্লাহ থাকলেও, লোয়ার-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করাটাও ছিলো বোকামি।
তারপরও শেষ চেষ্টায় কমতি রাখেননি মাহমুদুল্লাহ। লিটনের বিদায়ের সময় মাহমুদুল্লাহ’র নামের পাশে ছিলো ৩২ রান। এ অবস্থায় এক প্রান্ত ধরে মারমুখী মেজাজে ব্যাট করতে থাকেন মাহমুদুুল্লাহ। তাই নিজের মুখোমুখি হওয়া ৪৯তম বলেই হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন তিনি। টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৬তম ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি ছিলো এটি।
হাফ-সেঞ্চুরির পরও নিজের লড়াই চালিয়ে গেছেন মাহমুদুল্লাহ। নয় নম্বরে নামা মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে দলের স্কোর দু’শ পার করেন মাহমুদুল্লাহ। অস্টম উইকেটে এই দু’জন দলকে উপহার দেন ৩৩ রান। এরমধ্যে ২২ বলে ১৬ রান আসে ফিজের ব্যাট থেকে। ২টি ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান মুস্তাফিজ।
দলীয় ২০৩ রানে মুস্তাফিজের বিদায়ের ছয় বল পর থেমে যান মাহমুদুল্লাহও। টাইগার নেতাকে আউট করেন ওয়াগনার। অধিনায়কের বিদায়ের এক বল পরই নিজেদের ইনিংসের ইতি টানে বাংলাদেশ। ২০৯ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ১২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬৯ বলে ৬৭ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। ওয়াগনার ৪৫ রানে ৫টি ও বোল্ট ৫২ রানে ৪ উইকেট নেন। এই নিয়ে সপ্তম ও বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয়বারের মত পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিলেন ওয়াগনার।
ম্যাচ সেরা হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের রস টেইলর। প্রথম ইনিংসে ২১২ বল মোকাবেলা করে ১৯ চার ও ৪ ছক্কায় ২০০ রান করেছিলেন টেইলর। ৬ উইকেটে ৪৩২ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষনা করে নিউজিল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করেছিলো ২১১ রান।
আগামী ১৬ মার্চ থেকে ক্রাইস্টচার্চে শুরু হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্ট।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ২১১/১০, ৬১ ওভার (তামিম ৭৪, লিটন ৩৩, ওয়াগনার ৪/২৮)।
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস : ৪৩২/৬ডি, ৮৪.৫ ওভার (টেইলর ২০০, নিকোলস ১০৭, আবু জায়েদ ৩/৯৪)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস :
তামিম ইকবাল বোল্ড ব বোল্ট ৪
সাদমান ইসলাম ক ওয়াটলিং ব হেনরি ২৯
মোমিনুল হক ক সাউদি ব বোল্ট ১০
মোহাম্মদ মিথুন ক সাউদি ব ওয়াগনার ৪৭
সৌম্য সরকার ক টেইলর ব বোল্ট ২৮
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ক বোল্ট ব ওয়াগনার ৬৭
লিটন দাস ক বোল্ট ব ওয়াগনার ১
তাইজুল ইসলাম ক লাথাম ব ওয়াগনার ০
মুস্তাফিজুর রহমান বোল্ড ব বোল্ট ১৬
আবু জায়েদ অপরাজিত ০
এবাদত হোসেন বোল্ড ব ওয়াগনার ০
অতিরিক্ত (লে বা-৪, ও-৩) ৭
মোট (অলআউট, ৫৬ ওভার) ২০৯
উইকেট পতন : ১/৪ (তামিম), ২/২০ (মোমিনুল), ৩/৫৫ (সাদমান), ৪/১১২ (সৌম্য), ৫/১৫২ (মিথুন), ৬/১৫৮ (লিটন), ৭/১৭০ (তাইজুল), ৮/২০৩ (মুস্তাফিজ), ৯/২০৯ (মাহমুদুল্লাহ), ১০/২০৯ (এবাদত)।
বোলিং :
বোল্ট : ১৬-৫-৫২-৪, সাউদি : ১২-১-৫৭-০ (ও-১), হেনরি : ৯-৩-৪০-১ (ও-১), গ্র্যান্ডহোম : ৫-০-১১-০ (ও-১),ওয়াগনার : ১৪-৪-৪৫-৫।
ফল : নিউজিল্যান্ড ইনিংস ও ১২ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : রস টেইলর (নিউজিল্যান্ড)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড।