সংসদ কার্যকর ও প্রাণবন্ত করতে জাতীয় পার্টি বিরোধীদলে রয়েছে : গোলাম মোহাম্মদ কাদের

968

সংসদ ভবন, ১১ মার্চ, ২০১৯ (বাসস) : জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, সংসদকে কার্যকর ও প্রাণবন্ত করতে জাতীয় পার্টি বিরোধীদলে রয়েছে।
তিনি আজ সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর ও সমাপনী বক্তৃতায় বলেন, ‘সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি জবাবদিহিতা মূল কথা। জবাবদিহিতাহীন সরকার বেশি দিন সুশাসন নিশ্চিত করতে পারে না। আরেকটি ব্যবস্থা ছিল গতবারের মতো সরকার ও সরকারে বাইরে মিলে থাকতে পারতাম, এতে আমাদের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা বাড়তো। ফলে জাতীয় পার্টি সম্পূর্ণরূপে বিরোধীদলে থেকে সরকারকে জবাবদিহিতার মধ্যে রাখার ভূমিকায় রয়েছে। এতে সংসদ কার্যকর ও প্রাণবন্ত হবে।
বর্তমান সংসদ ও জাতীয় পার্টির ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সাথে মহাজোট গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। কথা ছিল নির্বাচন এক সাথে করবো এবং নির্বাচিত হলে আমরা একসাথে সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করবো। কিন্তু নির্বাচনে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য একটি মহাবিপর্যয় দেখা গেল। তাদের সংখ্যায় এতো নগন্য যে, তারা যে সংসদে আসবে, এই অবস্থা ছিল না। এখন আবার সংসদে আসবে কি আসবে না, এ ব্যাপারে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা। এ কারণে মহাজোটের সদস্যদের নিয়েই সংসদ গঠিত হয়। আমরা একটি জাতীয় সরকার গঠন করতে পারতাম, কোন বিরোধীদল থাকতো না। এখানে বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধিত্ব থাকতো না।’
তিনি সংসদ কার্যকর করার স্বার্থে বিরোধীদলকে সংসদে পর্যাপ্ত সময় দেয়ার সুযোগ দেয়ার আহবান জানান।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, মহাজোট থেকে নির্বাচিত হয়ে বিরোধীদলের ভূমিকায় থাকাকে অনেকে পাতানো খেলা বলছে, পাতানো খেলার অর্থ হলো যে খেলার ফলাফল আগে থেকেই সবাই জানে। এদেশের সংবিধান অনুযায়ী যে দল বেশি সংখ্যক আসনে জয় লাভ করবে, সে দল সরকার গঠন করবে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি তাঁর ১৫৮ পৃষ্ঠার ভাষণে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্মকান্ডের বিবরণ তুলে ধরেছেন। আগামী দিনেও এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
বিরোধীদলের উপনেতা বলেন, বিগত ১০ বছরে দেশ উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এটাকে শুধু ধরেই রাখেনি, তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এটি দেশের জন্য একটি সাফল্যজনক ঘটনা। এর জন্য বিশ্ববাসী এদেশের প্রশংসা করছে। এছাড়া মাথাপিছু আয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি একটি যুগান্তকারী সাফল্য। জিডিপির আকার বৃদ্ধি পেয়ে বাংলাদেশ ৪১তম স্থানে অবস্থান করছে। ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরের তুলনায় জিডিপি ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
জিডিপি বাড়ার পাশাপাশি তিনি কর্মসংস্থান সৃষ্টির আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, কর্মসংস্থানের হার বাড়াতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি দেশের মানুষের আয় বৈষম্য কমানোর ব্যাপারে নজর দিতে হবে। মেগা প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখার বিষয়েও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, চালকের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে দেশে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারকে আরো বেশি দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নিমতলী থেকে শিক্ষা না নেয়ার কারণেই চক বাজারের অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিমতলী দুর্ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ১৭ দফা সুপারিশ দিয়েছিল। কিন্তু এসব সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি। এবার দুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী কঠোর হাতে এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে নিজেই নেমে পড়েছেন। এজন্য দেশবাসী আশাবাদী।
তিনি বলেন, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জেলা পর্যায়ে হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার স্বল্পতা দূর করতে হবে।