বাসস ক্রীড়া-৬ : ‘ফিরে আসার জন্য প্রস্তুত হও’ : এ্যাথলেটিকোর বিপক্ষে ম্যাচের আগে রোনাল্ডোর অনুরোধ

150

বাসস ক্রীড়া-৬
ফুটবল-প্রিভিউ
‘ফিরে আসার জন্য প্রস্তুত হও’ : এ্যাথলেটিকোর বিপক্ষে ম্যাচের আগে রোনাল্ডোর অনুরোধ
তুরিন, ১১ মার্চ ২০১৯ (বাসস) : আগামীকাল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ১৬’র দ্বিতীয় লেগের লড়াইয়ে এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে জুভেন্টাস। আগের লেগে ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকা ইতালিয়ান জায়ান্টদের সামনে দলের মূল ভরসা ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর জ্বলে ওঠার কোন বিকল্প নেই।
তুরিনে ঘরের মাঠ আলিয়াঁজ এরিনাতে অনুষ্ঠিতব্য ম্যাচকে সামনে রেখে জুভেন্টাস টেলিভিশনে রোনাল্ডো বলেছেন, ‘প্রথম লেগে ২-০ গোলে পরাজয় আমরা কোনভাবেই আশা করিনি। কিন্তু ফুটবলে সবকিছুই সম্ভব। নিজেদের মাঠে ঘরের সমর্থকদের সামনে আমরা কিছু করে দেখাতে চাই। এটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাত, এখানেই নিজেদের প্রমানের সবচেয়ে বড় সুযোগ এখন আমাদের হাতে। দলের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও দারুণ আশাবাদী। ভক্তদের উদ্দেশ্যে আমি একটি কথাই বলবো, ইতিবাচক চিন্তা করো, আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখো। ফিরে আসার জন্য প্রস্তুত হও।’
টানা সাতবারের ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন জুভেস্টাস গত বছর গ্রীষ্মে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ১০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে রোনাল্ডোকে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে উড়িয়ে এনেছিল শুধুমাত্র একটি লক্ষ্য নিয়েই, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ২৩ বছরের শিরোপা খরা কাটানো। গত এপ্রিলে তুরিনের কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়ালের হয়ে ৩৪ বছর বয়সী এই পর্তুগীজ তারকার ওভারহেড কিক জুভেন্টাসকে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় করে দিয়েছিল। ২০১৬ সালের এপ্রিলে জার্মান দল উল্ফসবার্গের বিপক্ষে প্রথম লেগে ২-০ গোলে পরাজিত হবার পরেও রোনাল্ডোর হ্যাটট্রিকে রিয়াল পরের রাউন্ডে উন্নীত হয়েছিল।
তেমনই পারফরমেন্স এবারও দলের সেরা তারকার কাছ থেকে আশা করছে জুভেন্টাস। ইউরোপের সর্বোচ্চ আসরে জুভেন্টাস আটবার পিছিয়ে থেকেও লড়াইয়ে ফিরে এসেছিল। এর মধ্যে ছিল ১৯৯৬ সালের কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচটি। এই আসরে জুভেন্টাস চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা অর্জন করেছিল। এর আগে ১৯৮৫ সালে প্রথমবারের এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জয় করেছিল জুভেন্টাস। কিন্তু পাঁচবার তাদের রানার্স-আপ ট্রফি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। যার মধ্যে গত চার বছরে দু’বার তারা ফাইনালে উঠেছিল।
ইতালিয়ান স্পোর্টস দৈনিক কোরিয়ার ডেলো স্পোর্ট লিখেছে, ‘সিআর সেভেন এখানে এসেছে সেই লক্ষ্য পূরণ করতে। এই টুর্নামেন্টে ক্রিস্টিয়ানো কখনই ভুল করেনি। লা লিগা শিরোপা কিংবা ক্লাবের বাণিজ্যিক কারণ পূরণ করতে রোনাল্ডো জুভেন্টাসের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেনি। দীর্ঘদিনের হতাশার প্রহর কাটিয়ে ওঠার অপেক্ষায় আছে জুভ।’
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে রোনাল্ডো সর্বমোট পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয় করেছে। এর মধ্যে গোল করেছেন ১২১টি যার মধ্যে তার দেয়া ৫৭টি গোলে ম্যাচের ফলাফল নির্ধারিত হয়েছে। গত ছয় মৌসুম ধরে তিনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার মর্যাদা লাভ করেছেন। যদিও এবারের আসরে গোল করেছেন মাত্র একটি। মাদ্রিদের পারফরমেন্সের তুলনায় যা একেবারেই নগন্য। এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যাচের পর থেকে লিগেও রোনাল্ডো কোন গোল পাননি। এ পর্যন্ত সিরি-এ লিগে করেছেন ১৯ গোল। তার থেকে এক গোল বেশি করে সাম্পদোরিয়ার ফ্যাবিও কুয়াগলিয়ারেলা এখন পর্যন্ত শীর্ষ গোলদাতা হিসেবে নিজেকে বহাল রেখেছেন।
কালকের ম্যাচের আগে জুভেন্টাসের সামনে সব বড় সমস্যা হচ্ছে তাদেরকে এমন একটি দলের বিপক্ষে অন্তত দুই গোল করতে হবে যারা মূলত শক্তিশালী রক্ষণভাগের জন্য বিখ্যাত। দিয়েগো সিমিওনের এ্যাথলেটিকো বর্তমানে লা লিগায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এ পর্যন্ত লিগে তারা মাত্র পাঁচ গোল হজম করেছে। এ্যাথলেটিকোর বিপক্ষে ক্যারিয়ারে ২২ গোল করা রোনাল্ডো বলেছেন, ‘সবাই জানে তারা অত্যন্ত শক্তিশালী দল। তারা নিজেদের দারুনভাবে রক্ষা করতে পারে। ম্যাচে তারা অনেক বেশী ঝুঁকি নেয় ও কাউন্টার এ্যাটাকে খেলতে পছন্দ করে। কিন্তু আমরাও প্রস্তুত। তাদের হারানোর জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই আমরা করবো। ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়াই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’
উল্ফসবার্গের সাবেক ম্যানেজার ডিয়েটার হেকিং বিশ্বাস করেন রোনাল্ডোই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন। তিনি বলেছেন, রোনাল্ডোর পক্ষে সবই সম্ভব। সে একাই তিন গোল করতে পারে, আমাদের বিপক্ষে যেভাবে করেছিল। ইউরোপের দলগুলোর মধ্যে এ্যাথলেটিকোর রক্ষণভাগ সেরা। রোনাল্ডোকে ছাড়া জুভেন্টাসের এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব। যদি বলি আমার দেখা খেলোয়াড়দের মধ্যে রোনাল্ডো সবচেয়ে শক্তিশালী নয় তবে মিথ্যা বলা হবে।
২০১৪ সালের পর থেকে জুভেন্টাসের কোচ হিসেবে ১০টি শিরোপা জয় করা মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রির ভাগ্যও অনেকটাই এই ম্যাচের উপর নির্ভর করছে। তিনি নিজেও সেটা জানেন। ৫১ বছর বয়সী আলেগ্রি বলেছেন, আমি জানি আমাদেরকে নিয়ে ভক্তদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। আমি আসার পর থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগই ক্লাবের মূল লক্ষ্য ছিল। তবে জুভেন্টাস বিদায় নিলে সবাই যদি একে ব্যর্থতা মনে করে তবে সেটাও ঠিক হবে না।
বাসস/নীহা/১৫৪৫/মোজা/স্বব