যুদ্ধাপরাধে ময়মনসিংহের ৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ

199

ঢাকা, ১০ মার্চ, ২০১৯ (বাসস) : মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ময়মনসিংহের পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে আজ এক সংবাদ সম্মেলনে এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন তুলে ধরেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঁচ আসামির মধ্যে তিনজন আটক আছেন। তারা হলেন- ময়মনসিংহের ধোবাউড়া পশ্চিম বালীগাঁও গ্রামের মো. কিতাব আলী ফকির (৮৫), মো. জনাব আলী (৬৮) এবং মো. আ. কুদ্দুছ (৬২)। এছাড়া অপর দু’জন এখনো পলাতক থাকায় তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে ২৫ জনকে সাক্ষি করা হয়। মামলার ৫০ পৃষ্ঠায় মূল প্রতিবেদনসহ অন্যান্য নথিপত্র এখন প্রসিকিউশন বরাবর হস্তান্তর করা হবে।
আসামীদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ৩০ মে থেকে ৯ সেপ্টেম্বর অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও দেশান্তরিত হতে বাধ্য করাসহ মোট দু’টি অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট থেকে তদন্ত শুরু করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মনোয়ারা বেগম।
তাদের বিরুদ্ধে দুই অভিযোগের একটি হলো, ১৯৭১ সালের ৩০ মে আসামিরা ময়মনসিংহের বর্তমান ধোবাউড়া থানাধীন বালিগাঁও গ্রামের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী হিসেবে চিহ্নিত হাতেম আলী ওরফে গেন্দা মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতিকালীন তাকে আটক করার উদ্দেশ্যে তার বাড়িতে হামলা করে।
এসময় পলায়নরত হাতেম আলীকে তার বাড়ির উঠানে এনে নির্যাতন চালায়। পরিবারের সদস্যরা তাকে রক্ষা করতে এলে তাদের তিনজনকে একসঙ্গে গাছে বেঁধে রেখে তাদের বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র লুণ্ঠন ও পরে তাদের তিনজনকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘরে ঢুকিয়ে রেখে বাইরে থেকে আসামিরা দরজায় তালা দিয়ে চলে যায়। পরে পার্শ্ববর্তী ভারতের শিববাড়ী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা খবর পেয়ে হাতেম আলীকে উদ্ধারের পর তিনি তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এরপর আসামিরা এ সংবাদ জানতে পেরে হাতেম আলীর বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংস করে দেয়।
অন্য অভিযোগে বলা হয় , ১৯৭১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আসামিরা তাদের সঙ্গে সশস্ত্র রাজাকার ও পাকিস্থান দখলদার বাহিনী নিয়ে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থানাধীন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও সহযোগিতাকারী হিসেবে চিহ্নিত তারাকান্দি গ্রামের শহীদ নূর মোহাম্মদ হোসেন আকন্দের বাড়িতে হামলা চালিয়ে নূর মোহাম্মদসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা ও নাতবউকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। পরে একই গ্রামের মো. ইছহাক আলী, মো. জমসেদ আলী (গুনা), মো. আব্দুর রাজ্জাক, মো. আব্দুল হেকিমসহ উক্ত গ্রামের পার্শ্ববর্তী এলাকার মো. সিরাজ আলী, মো. হায়দার আলী, মো. আব্দুল লতিফ, মো. মীর কাশেম, মো. রমজান আলীসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ২৮জনসহ মোট ৪১ জনকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও ৪৫ জনকে গুলি করে হত্যা করে।
একই আক্রমণের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার পক্ষে ও মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় এবং সহযোগিতাকারী হিসেবে চিহ্নিত তারাকান্দি গ্রামের মাহমুদ হোসেন আকন্দ ও মিয়া হোসেন আকন্দের বাড়িতে হামলা করে ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র লুণ্ঠন ও মোট ২২টি টিনের ঘরে অগ্নিসংযোগ করে।