ভোলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ২ বছরে প্রায় ৪০ লাখ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন

260

ভোলা, ১০ মার্চ, ২০১৯ (বাসস) : জেলার ৭ উপজেলার ২১৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকে গত ২ বছরে (২০১৭-১৮ সাল) ৩৮ লাখ ৬৫ হাজার ৪৬২ জন রোগী চিকিৎসা সেবা পেয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ৬৩ হাজার ৮০০, নারী ২৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯৮৬ ও শিশু রয়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার ৬৭৬ জন। ২০১৭ সালে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছে ২১ লাখ ১২ হাজার ৪৩৩ জন ও ২০১৮ সালে পেয়েছেন ১৭ লাখ ৫৩ হাজার ২৯ জন। এছাড়া প্রায় ৪ হাজার মা নিরাপদে এসব ক্লিনিক থেকে সন্তান প্রসব করে সুস্থ আছেন। এ সময়ের মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র পাঠানো হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার রোগী। প্রচার-প্রচারণা ও মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে ক্লিনিকগুলোতে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ এ উদ্যোগের ফলে উপকূলীয় এ জেলার গ্রামঞ্চলের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মান এখন উন্নত হয়েছে। এখন আর অপ-চিকিৎসায় জীবন দিতে হচ্ছেনা গ্রামীণ জনপদের বাসিন্দাদের। সম্পূর্ণ সরকারিভাবে ঘরের কাছে এমন স্বাস্থ্য সেবা পেয়ে খুশি দ্বীপ জেলার বাসিন্দারা।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. রথীন্দ্রনাথ মজুমদার বাসস’কে জানান, বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে বহুমুখী সেবা প্রদান করা হয়। চিকিৎসা সেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা, বিভিন্ন বিষয় পরামর্শ, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, পুষ্টি বিষয়ক জ্ঞান, গর্ভবতী মায়েদের সেবা, শিশু ও মহিলাদের বিভিন্ন টিকাসহ মোট ৩১ ধরনের ওষুধ এখান থেকে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয। এছাড়া নির্দিষ্ট এলাকায় যক্ষা রোগীদের নিয়মিত তদারকি করা হয়। এখানকার চিকিৎসা প্রদানের আন্তরিকতায় মানুষের মধ্যেও আস্থার ভাব তৈরি হয়েছে বলে সিভিল সার্জন জানান।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ক্লিনিকের আভ্যন্তরীন ও বহিরাঙ্গিক পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করার জন্য প্রতি মাসের প্রথম রোববার কমিউিনিটি দিবস পালন করা হচ্ছে। একইসাথে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে রোগীদের শতভাগ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু ক্লিনিকে সংস্কার কাজ চলছে।
জেলার বিচ্ছিন্ন উপজেলা মনপুরা। নদী বেষ্টিত এ উপজেলার মানুষ চাইলেই জেলা সদরে উন্নত চিকিৎসার জন্য আসতে পারে না। আবার প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতেও বেগ পেতে হয়। তাই এখানকার মানুষের কমিউনিটি ক্লিনিকই ভরসা। উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের চর গোয়ালিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা মো. কামাল উদ্দিন বাসস’কে বলেন, স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে এখানকার বাসিন্দাদের কমিউনিটি ক্লিনিকই নির্ভরতার প্রতীক। প্রতিদিনই এখানে রোগীদের ভিড় থাকে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এখানে চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন ৮০৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৬৭৩ ও মার্চের ৯ তারিখ পর্যন্ত ৩১৬ জন রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছে।
এখানে চিকিৎসা নিতে আসা তাহেরা বেগম (৫৫), মনিজা খাতুন (৫৮), রানু বেগম (৫৪) ও ফজিলত বেগম (৫১) বলেন, এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ওষুধ খেয়েই আমাদের রোগ সারে। খুব বেশি সমস্যা না হলে এখান থেকেই পরিবারের সবাই চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।
সদরের ধনীয়া ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা পেয়ে রিকশা চালক খোকন হাওলাদারের স্ত্রী হাজেরা বিবি বলেন, তার ২ বছরের শিশু পুত্রকে নিয়ে এসেছেন চিকিৎসার জন্য। ছেলের জ্বরের চিকিৎসা ও ওষুধ বিনামূল্যে পেয়ে খুব খুশি সে। হাজেরা বলেন, গরীব মানুষের জন্য এ ক্লিনিকই ভরসা। সবার পক্ষে যাতায়াত খরচ দিয়ে সদর হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব হয় না।