বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : নারী সমাজকে নিজেদেরই সক্ষমতা অর্জন করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

163

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-নারী দিবস
নারী সমাজকে নিজেদেরই সক্ষমতা অর্জন করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা এখন সব জায়গায় এগিয়ে গেছে। চাকরি-বাকরি, খেলাধুলা সব ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে। এমনকি আমাদের মেয়েরা এভারেস্টও জয় করে ফেলেছে। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে এখন অনেক নারী কাজ করেন। এমনিতে নারী পাইলট আছেন। আগামীতে নারীরা বিমান বাহিনীতে ফাইটার জেট চালাবে।’
’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনিই সেনাবাহিনীতে প্রথম নারীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এছাড়া আমি প্রথম কয়েকজন নারীকে সচিবের পদমর্যাদা দেই।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, জাতির পিতা নারীদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা প্রথম যে সংবিধান দিলেন সেখানে তিনি মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত নারী আসন দেন। তিনি মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করে দিয়েছিলেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন- ‘একজন মেয়ে যদি অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীনতা অর্জন করে তাহলে সমাজে তার ভালো অবস্থান হয়।’ ‘আগে জুডিশিয়াল সার্ভিসে কোনো নারীর চাকরির সুযোগ ছিল না। বঙ্গবন্ধু এই আইন বাতিল করে দিয়েছেন’ উল্লেখ করে সরকার প্রধান নাজমুন আরাকে জেলা জজের পদ থেকে হাইকোর্টে পদায়ন করার তথ্যও জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জেলা ডিসি, এসপির পদে মেয়েদের বাধা ছিল। এরপর আমি যাকে প্রথম নারী এসপি করে মুন্সীগঞ্জে আনলাম। তিনি দায়িত্ব নিয়েই ডাকাত ধরে ফেললেন। তার এ কাজের সঙ্গে আমিও জয়ী হয়ে গেলাম।’ নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ এবং পারিবারিক সহিংসতা থেকে সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে তাঁর সরকার কঠোর শাস্তির বিধান রেখে ‘পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ এবং পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা-২০১৩ প্রনয়ন করেছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি এ সময় নারী নির্যাতন প্রতিরোধে তাঁর সরকারের ডিএনএ আইন-২০১৪, বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭, যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৮ প্রণয়ন এবং একই সঙ্গে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ এর সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহ মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯ এর তফসিলভুক্ত করণের উল্লেখ করেন।
সারাদেশের নারী উন্নয়নে তাঁর সরকারের পদক্ষেপসমূহের উল্লেখ প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০৩ (সংশোধিত) ও পারিবারিক পর্যায়ে সংঘটিত নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম-এর মাধ্যমে ৬৭টি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সেইসাথে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন ১০৯ চালু রয়েছে। অসহায় ও নির্যাতিত মহিলাদের দ্রুত ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে ৬টি বিভাগে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল ও মহিলা সহায়তা কর্মসূচি চালু থাকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সারাদেশে ৪ হাজার ৮শ’ ৮৩টি ক্লাবের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের জীবন যাত্রার ইতিবাচক পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে ‘অ্যাকসেলারেটিং একশন টু এন্ড চাইল্ড ম্যারেজ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
নারীদের পুনর্বাসন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে জাতির পিতা ‘নারী পুনর্বাসন বোর্ড’ গঠন করেন এবং সংবিধানে নারীর সমানাধিকার নিশ্চিত করেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনা-২০১৩ গ্রহণ এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে নারী উন্নয়নে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৪২ কোটি টাকার জেন্ডার বাজেট প্রণয়নের উল্লেখ করেন।
এছাড়াও, মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাসে উন্নীত করা এবং পিতার নামের পাশাপাশি মাতার নাম অন্তর্ভুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা সহ ৮টি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে ১৯ হাজার ৯২৯ জন কর্মজীবী নারীর আবাসন সুবিধা প্রদান, কর্মজীবী নারীদের জন্য ৯৪টি ডে-কেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে ৩৬ হাজার ১৮৩ জন শিশুকে দিবা যতœ সেবা প্রদান এবং ২০০৯-২০১৮ জুন পর্যন্ত ৮টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা এবং ৪২৬টি উপজেলায় ২ লাখ ১৭ হাজার ৪৪০ জন সুবিধাবঞ্চিত দুস্থ নারীকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদানের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় ৭ জেলার ৮ হাজার উপকারভোগী নারীকে স্বাবলম্বী করতে মাথাপিছু এককালীন ১৫ হাজার টাকা অনুদান এবং প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
নারীকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ‘জয়িতা’ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৮৩ কোটি ২২ লাখ ৬০ লক্ষ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে জেলাভিত্তিক মহিলা প্রশিক্ষণ প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী ৬৪টি জেলায় ২৮ হাজার জন নারীকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শিক্ষা, খেলাধুলা, পেশাগত কাজ, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশী নারীদের সফলতার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। এ সময় প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী তাঁর অর্জিত ‘লাইফ টাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন অ্যাম্পাওয়ারমেন্ট’ অ্যাওয়ার্ড দেশের মানুষ এবং বিশ্বের নির্যাতিত নারীদের উৎসর্গ করেন। তিনি বলেন, ‘এ অ্যাওয়ার্ড আমার নয়, এটা দেশের মানুষের। আমি যে অ্যাওয়ার্ডই পাই না কেন তার ভাগিদার এ দেশের মানুষ।’
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ‘লাইফ টাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন অ্যাম্পাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ৭ মার্চ বার্লিনে সিটি কিউব আইটিবি প্রাঙ্গণে ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান উইমেন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে এ পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়।
জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এ পদক গ্রহণ করেন। নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদান এবং দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে নেতৃত্বের জন্য এ পদক অর্জন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিনের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখে ‘জয়িতা’ পদক বিজয়ীদের হাতে সনদ ও পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৭৫০/কেএমকে