বাসস দেশ-১৫ : দোহাজারি-কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে

151

বাসস দেশ-১৫
কক্সবাজার-প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প
দোহাজারি-কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে
কক্সবাজার, ৬ মার্চ, ২০১৯ (বাসস) : দোহাজারি-কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে এ রেল লাইন নির্মাণ কাজের প্রায় ২১.৫১ শতাংশ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। শেষ হয়েছে গ্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের কাজও। ২০২২ সালের মধ্যেই এ প্রকল্পটি চালু হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি পরিদর্শনের জন্য গত সপ্তাহে কক্সবাজারে আসেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। রেলমন্ত্রী প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বৈঠকে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, দোহাজারি-কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে এ অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। পর্যটকরা কম সময়ে অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারবেন।
তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের সার্বিক কাজ এগিয়ে চলেছে। কিছু জায়গায় যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেগুলো দূর করা সম্ভব হবে। কোনভাবেই যেন প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।’
মন্ত্রী পরে কক্সবাজার সদর, রামু, চকরিয়ায় রেল লাইন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ঘুরে দেখেন। সরেজমিনে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ও রামুর প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায় বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। এখানে রাস্তা নির্মাণ ও মাটি ভরাটের কাজ চলছে। কিছু জায়গায় জিও টেক্সটাইল বসানো হচ্ছে। গাড়ি ও আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করছেন প্রচুর শ্রমিক।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেল লাইন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মো. মফিজুর রহমান বলেন, এ রেল লাইনের নির্মাণ কাজ, সেতু নির্মাণের কাজসহ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন চলমান উন্নয়ন কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে। রেললাইনের রাস্তা নির্মাণসহ অনেক কাজ দৃশ্যমান হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন- কক্সবাজারের ঈদগাঁও মৌজায় ক্যাম্প অফিস কাম কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। রামুতে মেটেরিয়াল টেস্টিং ল্যাবরেটরী নির্মাণ শেষ। কিছু অংশে ব্যাক ফিলিং সহ মোট ২৯ কিলোমিটার অংশে নির্মাণ কাজ চলছে।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম হয়ে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার যাওয়ার পথে রামুতে হবে জংশন স্টেশন। সেখান থেকে একটি লাইন চলে যাবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দিকে। আরেকটি লাইন পূর্বদিকে মিয়ানমারের কাছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম যাবে। সৈকতের স্টেশনটি হবে বিশাল ঝিনুক আকৃতির। এ ঝিনুকের ভেতরেই হবে প্লাটফর্ম এবং যাত্রী আসা-যাওয়া ও বসার লাউঞ্জ। প্রকল্পের কাজের তদারকি করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দোহাজারি-কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইনি জটিলতায় ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে কিছুটা ধীরগতি এবং বন বিভাগের কিছু জায়গা না পাওয়ায় নির্মাণ কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়।
সূত্র জানায় প্রকল্পের কিছু জমি নিয়ে মামলার কারণে ভূমি ক্ষতিপূরণের ৩৭৮ কোটি টাকা বিতরণ বন্ধ রয়েছে। খুব শিগগিরই বিষয়টির সমাধান হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিমি, রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিমি এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবর্তন হবে। সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, কাগজের কাঁচামাল, বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহণ করা যাবে।
সূত্র জানায় ১২৮ কিমি রেলপথে স্টেশন থাকছে ৯টি। এগুলো হলো- সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাও, রামু, কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও ঘুমধুম। এতে থাকবে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হবে ৩টি বড় সেতু। এ ছাড়াও এ রেলপথে নির্মিত হবে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট এবং ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় তৈরি হবে একটি ফ্লাইওভার, রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং।
সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান আগামী ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পের শতভাগ কাজ শেষ হবে। এ রেলপথ ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে করিডরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবে। এটি আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে। এ রেলওয়ে নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ-ভারত- মিয়ানমার-চীন হয়ে যাবে ইউরোপের তুরস্ক পর্যন্ত।
বাসস/সংবাদদাতা/নূসী/১৭০৫/মমআ/-কেকে