শেরপুরের চেল্লাখালী নদীর বুকে ফসলি মাঠ

191

শেরপুর, ৬ মার্চ, ২০১৯ (বাসস) : শুষ্ক মৌসুমে জেলার চেল্ল¬াখালী নদীর বুকে গড়ে উঠেছে ফসলি মাঠ। সেই মাঠে বোরো আবাদ করে স্থানীয় কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
চেল্ল¬াখালী নদী নালিতাবাড়ী সীমান্ত হয়ে পোড়াগাঁও, নন্নী, বাঘবেড় ও কলসপাড় ইউনিয়নসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় বয়ে চলেছে। সেচ সুবিধাসহ নানা কারণেই এ নদী এলাকার কৃষকদের আশির্বাদ হিসেবে কাজে আসে। প্রতি বছর এ নদীতেই বর্ষাকালে প্রবল বেগে প্রবাহিত হয় পাহাড়ি ঢল। এতে ফসলাদি, গবাদি পশু ও বাড়ি-ঘরের ক্ষতিসাধন হয়ে থাকলেও শীতকালে শুষ্ক মৌসুমে এ নদীর বুকেই জেগে ওঠে প্রায় ১৫ একরের বিস্তীর্ণর্ চর। যেখানে সামান্য পরিশ্রমেই গড়ে তোলা সম্ভব হয় ফসলি মাঠ। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি, বরং বেড়েছে চর ও আবাদের পরিমাণ।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমে ওই নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। তারপরও যেটুকুু পানির প্রবাহ আছে, সেটুকুকেই পুঁজি করেই ওই নদীর বুকে চাষাবাদ করেছে তীরবর্তী গ্রাম ও এলাকার কৃষকরা। এ নদীর পানি দিয়ে ও সাবমার্সেবল পাম্পের সাহায্যে পুরোদমে এলাকার কৃষকেরা বোরো ধান রোপণের কাজ করছেন জেগে ওঠা মাঠে। যেন নদীর বুক ও ধানের ক্ষেতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে আন্ধারপাড়া, আমবাগানসহ বেশ কয়েকটি এলাকার কৃষকরা বোরো ধানের আবাদ করেছেন। দূর থেকে দেখা যায় নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে সবুজের সমারোহ। যেখানেই পানি, সেখানেই আবাদের হাতছানি। সীমান্ত জনপদের কৃষকরা পাহাড়ি ওই নদীতে বিদ্যুতচালিত মর্টারের সাহায্যে (সেচযন্ত্র) বোরো ক্ষেতে সেচ দিচ্ছে। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একখন্ড জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। এরই মধ্যে অনেক জমির রোপিত ধানের চারা সবুজ হতে শুরু করেছে। স্থানীয় কৃষক হাসেম আলী জানান, ওই নদীর চরের ধানক্ষেতে পলিমাটি পড়ার কারণে তেমন সার প্রয়োগ করতে হয় না। ফলনও বেশ ভাল হয়। কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, ওই জেগে ওঠা চরে স্বল্প ব্যয়ে ও স্বল্প পরিশ্রমে বোরো আবাদ করে লাভের সম্ভাবনাই বেশি। স্থানীয় পোড়াগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ মিয়া জানান, স্বল্প পরিমাণে আবাদ হলেও ওই নদী থেকে উৎপাদিত ধান এলাকার দরিদ্র কৃষকদের পরিবারের জন্য সহায়ক হয়ে থাকে। একই কথা জানিয়ে বাঘবেড় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সবুর জানান, খননকাজ না করায় দিন দিন নদীটি নাব্যতা হারাচ্ছে। বৃষ্টি না থাকায় এ মৌসুমে নদীর বুক একেবারেই চরের মতো জেগে ওঠে। আর সেখানে আবাদ করে এলাকার কিছু দরিদ্র কৃষক লাভবান হচ্ছেন। এতে অবশ্য স্থানীয় কোন ঝামেলা হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফ ইকবাল বলেন, চলতি মৌসুমে গত বছরের তুলনায় বৃষ্টিপাত হয়নি বললেই চলে। শুষ্ক মৌসুমে এমনিতেই পানি শুকিয়ে যায়। তার ওপর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চেল্লাখালী নদী অনেকাংশেই জেগে ওঠেছে। নদীর জেগে ওঠা ওইসব অংশে স্থানীয় কৃষকদের একটি অংশ বোরো আবাদ করে লাভের স্বপ্ন দেখছেন। তবে নদীর খননকাজ হলে চরের মতো জেগে ওঠার সম্ভাবনা থাকবে না। বরং নাব্যতা ফিরে পেলে এলাকার আপামর কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন।