উইলিয়ামসনের ডাবল-সেঞ্চুরিতে ইনিংস হারের শংকায় বাংলাদেশ

219

হ্যামিল্টন, ২ মার্চ ২০১৯ (বাসস) : অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের ডাবল ও দুই ওপেনার জিত রাভাল ও টম লাথামের জোড়া সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যামিল্টন টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৭১৫ রানের পাহাড় গড়েছে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। উইলিয়ামন অপরাজিত ২০০, লাথাম ১৬১ ও রাভাল ১৩২ রান করেন। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ২৩৪ রানে অলআউট হয়। ফলে প্রথম ইনিংস থেকে ৪৮১ রানের লিড পায় নিউজিল্যান্ড। বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিন শেষে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ১৭৪ রান করেছে বাংলাদেশ। ইনিংস হার এড়াতে ৬ উইকেট হাতে নিয়ে আরও ৩০৭ রান করতে হবে বাংলাদেশকে।
জিত রাভালের ১৩২, টম লাথামের ১৬১ ও অধিনায়ক উইলিয়ামসনের অপরাজিত ৯৩ রানের কল্যাণে নিজেদের প্রথম ইনিংসে দ্বিতীয় দিন শেষে ৪ উইকেটে ৪৫১ রান করে নিউজিল্যান্ড।
তৃতীয় দিন নিল ওয়াগনারকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন উইলিয়ামসন। দিনের শুরুতেই ৭১ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ২০তম সেঞ্চুরি তুলে নেন কিউই অধিনায়ক। সেঞ্চুরির পর দলের সংগ্রহ বাড়ানোর সাথে সাথে নিজের রানকেও বড় করতে থাকেন উইলিয়ামসন। তাকে ভালোই সঙ্গ দেন ওয়াগনার। বেশ মারমুখী মেজাজে দ্রুত রান তোলার কাজটি করছিলেন তিনি।
ওয়াগনারকে স্ট্রাইক দেয়ার কাজটা সহজেই করছিলেন উইলিয়ামসনও। তবে হাফ-সেঞ্চুরি থেকে ৩ রান দূরে থাকতে ওয়াগনারকে বিদায় দেন অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা বাংলাদেশের পেসার এবাদত হোসেন। ৬টি চার ও ৩টি চারে ৩৫ বলে ৪৭ রান করে উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে থামেন ওয়াগনার। উইলিয়ামসনের সাথে ৬০ রানের জুটির মধ্যে ওয়াগনারেরই ছিলো ৪৭ রান।
এরপর উইকেটরক্ষক বিজে ওয়াটলিং জুটি বাঁধেন উইলিয়ামসনের সাথে। এই জুটিতে রান তোলায় পারদর্শীতা দেখিয়েছেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। ৬২ রান করেন তিনি। তবে ৩১ রানে থেমে যান ওয়াটলিং। বাংলাদেশের অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের দ্বিতীয় শিকার হবার হন তিনি। এই জুটি যোগ করেন ৯৬ রান।
ওয়াটলিং-এর বিদায়ে ক্রিজে উইলিয়ামসনের সঙ্গী হন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। নিজের ইনিংসের শুরু থেকেই মারমুখী মেজাজ ধারণ করা গ্র্যান্ডহোম ৩৮তম বলেই হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। তবে বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলছিলেন উইলিয়ামসন। ১৬৩তম ওভারের শেষ বলে চার মেরে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল-সেঞ্চুরি পূরণ করে ফেলেন উইলিয়ামসন। তার প্রথম ডাবল-সেঞ্চুরিটি ছিলো ২০১৫ সালে। ওয়েলিংটনে শ্রীলংকার বিপক্ষে অপরাজিত ২৪২ রান করেছিলেন উইলিয়ামসন।
নিজের ডাবল-সেঞ্চুরির পরই ৬ উইকেটে ৭১৫ রানে ইনিংস ঘোষনা করেন উইলিয়ামসন। এই প্রথমবারের মত সাতশ রানের কোটা স্পর্শ করে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহে রেকর্ড গড়লো নিউজিল্যান্ড। বল হাতে বাংলাদেশের পক্ষে ২টি করে করে উইকেট নিয়েছেন সৌম্য সরকার ও মেহেদি হাসান মিরাজ। ৪৯ ওভার বল করে ২৪৬ রান খরচ করেন মিরাজ। এছাড়া ১টি করে উইকেট নিয়েছেন এবাদত ও অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
৪৮১ রানের লিড নিয়ে চা-বিরতির আগে নিজেদের প্রথম ইনিংস ঘোষনা করে নিউজিল্যান্ড। ফলে রানের পাহাড়ে পিষ্ট হয়ে নিজেদের দ্বিতীয় শুরু করতে হয় বাংলাদেশকে। এবারও শুরুটা ভালো ছিলো বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সাদমান ইসলামের। প্রথম ইনিংসে ৫৭ রানের জুটি গড়া তামিম-সাদমান জুটি এবার করেন ৮৮ রান। তামিম-সাদমান জুটিতে ভাঙ্গন ধরান নিউজিল্যান্ডের পেসার ওয়াগনার। ৩৭ রান করা সাদমানকে শিকার করেন প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়া ওয়াগনার। ৫টি চারে ৭১ বলে ৩৭ রান করেন সাদমান।
সাদমান ফিরে যাবার আগেই টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৬তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন প্রথম ইনিংসে ১২৬ রান করা তামিম। সাদমানের ফিরে যাবার পর ক্রিজে গিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা প্রদর্শন করেছেন মোমিনুল হক ও মোহাম্মদ মিথুন। মোমিনুল ৮ ও মিথুন ০ রান করে আউট হন।
এরপর মনসংযোগ হারিয়ে ফেলা তামিম আউট হন ৭৪ রানে । ১২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮৬ বলে নিজের ইনিংসটি সাজান তিনি। তামিম যখন ফিরেন তখন দলের স্কোর ৪ উইকেটে ১২৬ রান। তবে দিনের শেষভাগে আর কোন বিপদ হতে দেননি সৌম্য ও মাহমুদুল্লাহ। অবিচ্ছিন্ন ৪৮ রানের জুটি গড়েন তারা। সৌম্য ৩৯ ও মাহমুদুল্লাহ ১৫ রানে অপরাজিত আছেন। নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট ৫৩ রানে ২ উইকট নেন।
এরপর উইকে
স্কোর কার্ড (তৃতীয় দিন শেষে) :
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ২৩৪/১০ ৫৯.২ ওভার (তামিম ১২৬, লিটন ২৯, সাদমান ২৪, ওয়াগনার ৫/৪৭)।
নিউজিল্যান্ড ইনিংস প্রথম ইনিংস (আগের দিন) ৪৫১/৪, ১১৮ ওভার, উইলিয়ামসন ৯৩*, ওয়াগনার ১* :
জিত রাভাল ক খালেদ ব মাহমুদুল্লাহ ১৩২
টম লাথাম ক মিথুন ব সৌম্য ১৬১
কেন উইলিয়ামসন অপরাজিত ২০০
রস টেইলর এলবিডব্লু ব সৌম্য ৪
হেনরি নিকোলস বোল্ড ব মিরাজ ৫৩
নিল ওয়াগনার ক লিটন ব এবাদত ৪৭
বিজে ওয়াটলিং ক লিটন ব মিরাজ ৩১
কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম অপরাজিত ৭৬
অতিরিক্ত (লে বা- ৭, নো-২, ও-২) ১১
মোট (৬ উইকেট, ডি., ১৬৩ ওভার) ৭১৫
উইকেট পতন : ১/২৫৪ (রাভাল), ২/৩৩৩ (লাথাম), ৩/৩৪৯ (টেইলর), ৪/৪৪৯ (নিকোলস, ৫/৫০৯ (ওয়াগনার), ৬/৬০৫ (ওয়াটলিং)।
বাংলাদেশ বোলিং :
জায়েদ : ৩০-৫-১০৩-০,
এবাদত : ২৭-৪-১০৭-১ (ও-১, নো-১),
খালেদ : ৩০-৬-১৪৯-০ (নো-১),
সৌম্য : ২১-১-৬৮-১ (ও-১),
মিরাজ : ৪৯-২-২৪৬-২,
মাহমুদুল্লাহ : ১-০-৩-১,
মোমিনুল : ৫-০-৩২-০।