বাজিস-২ : মেহেরপুরে সজনে ফুলে ফুলে গাছ ভরে গেছে

186

বাজিস-২
মেহেরপুর-সজনে -ফুল
মেহেরপুরে সজনে ফুলে ফুলে গাছ ভরে গেছে
মেহেরপুর, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ (বাসস) : জেলায় ফুলে ফুলে ভরে গেছে সজনে গাছগুলো। প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগ না হলে জেলায় কোটি টাকার সজনে বিক্রি হবে বলে কৃষি বিভাগ মনে করছেন।
সজনে অর্থকরী পুষ্টিমান হবার কারণে এর চাহিদা রয়েছে। পাশাপাশি উচ্চ মূল্য পাওয়ায় সজনের ডাল রোপন করতে উৎসাহিত হচ্ছে অনেকেই। বসতবাড়ীর আশপাশে রাস্তার ধারে ক্ষেতের আইলে লাগানো সজনে গাছ যতœ ছাড়াই অবহেলার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে। সজনে পুষ্টি ও ভেজষ গুণে ভরা সবজি হিসেবে খুব দামি। সজনের ব্যাপক চাহিদা ও উচ্চ মুল্যে বিক্রি হওয়ায় উপজেলার কৃষকরা এখন পতিত জমিতে পরিকল্পিতভাবে সজনে গাছ লাগিয়ে লাভবান হচ্ছে।
সজনে বিশ্বের অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি বৃক্ষ। এ গাছের পাতা, ফুল, ফল, ব্যাকল ও শিকড় সবই মানুষের উপকারে আসে। সজনের পুষ্টি গুণ অনেক বেশী। এ গাছের অনেক গুণ থাকার জন্যই হয় তো, এ গাছকে যাদুর গাছ বলা হয়। কাঁচা সবুজ পাতা রান্না করে, ভর্তা করে ও বড়া ভেজে খাওয়া যায়। ফল সবজির মত রান্না করে খাওয়া যায়, ফল পাকলে সে সব ফলের বীজ বাদামের মতো ভেজে খাওয়া যায়।
সজনের পাতা, ফল, ফুল, বীজ, ছাল, মূলের ভেষজগুণও আছে। তাই সজনে গাছের বিভিন্ন অংশ ভেজষ চিকিৎসায় কাজে লাগে। সজনের পাতার পুষ্টিগুণ বেশী, যেভাবে খাওয়া হোক না কেন তা শরীরে পুষ্টি যোগাবে, আর ঔষধী গুন তো আছেই। সজনের পাতায় যে পরিমাণ পুষ্টি রয়েছে তা অনেক পুষ্টিকর খাবারেও নেই। যেমন, ডিমের চেয়ে বেশী আমিষ, দুধের চেয়ে বেশী ক্যালশিয়াম, কমলার চেয়ে বেশী ভিটামিন সি, কলার চেয়ে বেশী ক্যালশিয়াম, গাজরের চেয়ে বেশী ভিটামিন এ আছে। তাছাড়া সজনের পাতা গুড়ো করে খাওয়ায় অন্তত ১৬টি উপকারী কথা জানা গেছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, বিপাকক্রিয়া ভালো রাখে, চোখ ও মস্তিস্কের পুষ্টি যোগায় প্রভৃতি।
সজনে সবজি যেমন উপাদেয় এর ভেজষ গুণও অসাধারণ। মৌসুমী নানা রোগব্যাধী নিরাময় ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষ করে জন্ডিস, বসন্ত, মূত্র সংক্রান্ত সমস্যা প্রাচীনকাল থেকে সজনে নানা ব্যবহার করে আসছে ইউনিয়ানী ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান জানিয়েছেন- জেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা মিলে প্রায় ৪০ হাজার গাছ আছে। গড়ে প্রতি বাড়ীতে কমপক্ষে ৩/৪ টি গাছ রয়েছে। এসব গাছ বাড়ীর পাশে ও ক্ষেতের আইলে লাগানো। গাছে ফলনও বেশী হয়। যতœ ছাড়াই এসব গাছ বেড়ে উঠেছে। দেশে ২টি জাত আছে সজনে ও নজনে। সজনের ফুল আসে জানুয়ারীতে আর নজনে ফুল আসে মার্চ মাস থেকে। তবে সব ফুল থেকে ফল হয় না। একটি থোকায় ১৫০টি মত ফুল হয়। ফুল ৪০ সেঃ মিঃ থেকে ৮০ সেঃ মিঃ পর্যন্ত লম্বা হয়। ফুল ফোটার ২ মাস পর ফল তোলা যায়। একটি বড় গাছে ৪’শ থেকে ৫’শ ফল ধরে। প্রতিটি ফলে ৩০-৪০ টি বীজ হয়। গাছ প্রতি সর্বোচ্চ ১২০ কেজি ফল পাওয়া যায়। মৌসুমের শুরুতে সজনের কেজি একশ টাকা কেজি বিক্রি হয়। দেশে সাধারণ ডাল কেটে ডাল রোপণ করে সজনে গাছ লাগানো হয়। ভারত থেকে হাইব্রিড সজনের জাত এদেশে এসেছে। এ জাতের বীজ বপন করে লাগাতে হয়। হাইব্রিড জাতের সজনে গাছে দু’বার ফুল আসে। তিনি আরও জানিয়েছেন- সজনে পুষ্টিকর সবজি হিসেবে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে সজনে ক্ষেত গড়ে তোলার জন্য উদ্ভুদ্ধ করা হচ্ছে। প্রতি বছর জেলায় সজনে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কৃষকরা সজনের উচ্চমূল্য পাওয়ায় তারা লাভবানও হচ্ছে।
বাসস/সংবাদদাতা/১৫৫৩/মরপা