বাসস দেশ-১৫ : সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঢাকা নগরীর জলাবদ্ধতা ও দূষণ রোধ করা সম্ভব

174

বাসস দেশ-১৫
নগরী-জলাবদ্ধতা
সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঢাকা নগরীর জলাবদ্ধতা ও দূষণ রোধ করা সম্ভব
ঢাকা, ৩ জুন, ২০১৮ (বাসস) : সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার মাধ্যমে ঢাকা নগরীর জলাবদ্ধতা ও দূষণ রোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আজ এক সেমিনারে তারা বলেন, ‘খাল, জলাধার ও নি¤œাঞ্চল দখল ও ভরাটের কারণে ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশন নালাগুলোয় প্রভাবশালীমহলের দখলদারিত্ব চলছে। প্রভাবশালীদের কারণে এসব দখলমুক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য এখন ঢাকাকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে হলে চারপাশের নদী ও বিদ্যমান ৪৩ খালসহ একটি প্রকল্প করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিতে হবে।’
‘ঢাকার জলাবদ্ধতার কারণ ও প্রতিকারের উপায়’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম-বাংলাদেশের (সিডিজেএফবি)।
সিডিজেএফবি’র সভাপতি অমিতোষ পালের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জল পরিবেশ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ম ইনামুল হক।
নগর বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঢাকা নগরীতে ৫০টির অধিক খাল ছিল। বর্তমানে এসব খালের বেশিরভাগই বেদখল হয়ে বাড়িঘর হয়ে গেছে। এসব উচ্ছেদ করে প্রয়োজনে নতুন করে খাল খনন করতে হবে।
তারা বলেন, বন্যা থেকে নগরীকে মুক্ত রাখতে নদী তীর দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ রয়েছে। বন্যার সময় স্লুইস গেট বন্ধ থাকে ও পানি পাম্প দিয়ে নিষ্কাশন করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড খালগুলো সচল রাখার জন্য নিজ দায়িত্বে সেগুলো বর্জ্যমূক্ত রাখবে বা নিয়মিত পরিস্কার করবে। আর নগরীর কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব থাকবে সিটি কর্পোরেশনের।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ‘ঢাকা নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নিষ্কাশনের মূল দায়িত্ব দিতে হবে। সড়ক ও মহল্লার বৃষ্টির পানি খোলা ড্রেন বা বক্সড্রেন দিয়ে নেমে খোলা খালে যাবে। সড়ক ও মহল্লা থেকে খাল পর্যন্ত বৃষ্টিার পানি নিষ্কাশনের কাজটি ওয়াসা নিতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড খালে আসা এই বৃষ্টির পানি নদীতে ফেলার ব্যবস্থা করবে।’
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, এমপি বলেন, দেশের অর্থনীতিসহ সব কিছু ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। কিন্তু, এটা হতে পারে না। ঢাকাকেন্দ্রিক সবকিছু করার এই সংস্কৃতি থেকে আমাদেরকে বের হয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, ঢাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানের জন্য চারপাশের নদী ও খালগুলোকে দখলমুক্ত করে নাব্যতা ও পানি ধারণের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এজন্য ঢাকার চারপাশের নদী ও খালগুলোকে প্রবহমান করতে সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র মো. জামাল মোস্তফা বলেন, ‘ঢাকা শহরের পানি কোথায় সরাবো? বুড়িগঙ্গার তলদেশে ময়লা-আর্বজনা। আমার জীবনে কখনো দেখিনি এই নদী ড্রেজিং করতে। তুরাগ, বালু দখলদারদের কবলে। ৭০-৭৫টি খাল ছিল, অথচ এখন ৪৩টির চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলোও দখলদারদের কবলে। নানামুখি উদ্যোগ নিয়েও সেবাসংস্থাগুলো এসব খাল দখলমুক্ত করতে পারছে না।
তিনি বলেন, ঢাকার চারপাশের নদী ও ৪৩ খালকে একটি প্রকল্পের আওতায় এনে ড্রেজিং করে প্রবহমান করতে হবে। প্রভাবশালী দখলদারদের খাল থেকে হঠাতে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সিডিজেএফবি’র সাধারণ সম্পাদক মতিন আব্দুল্লাহর সঞ্চলনায় সেমিনারে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা-সেপ এর নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলুল হক চৌধুরী, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর অরলা মারফি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শরীফ উদ্দিন, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রকল্পের পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, ঢাকা ওয়াসার পরিচালক এ কে এম সহিদ উদ্দিন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর সুরাইয়া বেগম ও সিনিয়র সাংবাদিক তৌফিক আলী আলোচনায় অংশ নেন।
বাসস/এএসজি/এমএসএইচ/১৮০০/-আরজি