বাজিস-২ : ভোলার চরাঞ্চলে ক্যাপসিক্যাম চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে

277

বাজিস-২
ভোলা-ক্যাপসিক্যাম-চাষ
ভোলার চরাঞ্চলে ক্যাপসিক্যাম চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে
ভোলা, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : মেঘনা নদীর বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে ক্যাপসিক্যাম চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরাঞ্চলে ধান, সয়াবিনের পাশাপাশি লাউ, শসা, কড়লা চিচিংগাসহ বিভিন্ন সবজির সাথে ক্যাপসিক্যাম চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর বিদেশি এ সবজি ক্যাপসিক্যাম চাষ করে ভাগ্য পরিবর্তন করছে বহু কৃষক। অল্প সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় বিদেশি এ সবজি চাষের কথা ভাবছেন এখন অনেকেই।
সরেজমিনে মেঘনা পাড়ি দিয়ে উপজেলা সদরের মাঝের চরে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ক্যামসিক্যাম চাষ হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, প্রায় ৭ বছর আগে ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মনির পাঠান নামের এক ব্যক্তি প্রথম ভোলাতে ক্যাপসিক্যাম চাষ শুরু করেন। মনির পাঠান জানান, আগে তিনি ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে ক্যাপসিক্যাম আমদানি করে ঢাকায় ব্যবসা করতন। এর জন্য তিনি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে ক্যাপসিক্যাম চাষের পদ্ধতি অবলোকন করেন এবং এক পর্যায়ে নিজেই এর আবাদ শুরু করেন।
প্রথম বছরই তিনি বাম্পার ফলন পেয়েছিলেন। তারপর তার দেখা দেখি অন্যান্য চাষিরাও ক্যাপসিক্যাম চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বর্তমানে ২০ থেকে ২৫ জন চাষি ক্যাপসিক্যাম চাষ করছেন। অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন এ সবজি চাষে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে।
মোঃ ছিদ্দিকুল্লাহ গত ৩ বছর ধরে মাঝের চরে ক্যাপসিক্যাম চাষ করছেন। এবছর ১ একর জমিতে ক্যাপসিক্যাম চাষ করেছেন। এতে তার প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ফলন ভাল হয়েছে । আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ক্ষেত থেকে ফলন বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান তিনি। অপর ক্যাপসিক্যাম চাষি মোঃ নিজাম উদ্দিন জানান, এবছর দেড় একর জমিতে ক্যাপসিক্যাম চাষ করেছি। আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকার ক্যাপসিক্যাম বিক্রি করেছি। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আরো ৫ লাখ টাকার ফলন বিক্রি করতে পারবো।
মোঃ নয়ন মিয়া বাসস’কে বলেন, গত বছর অসময় বৃষ্টি হওয়ায় কিছুটা পোকার আক্রমণ ছিল। এবছর বৃষ্টি নেই তাই ক্ষেতে কোন পোকার আক্রমণ নেই। মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, আগের বছর ক্যাপসিক্যামের পাইকারী বাজারে দাম কম ছিল। তাই ভাল লাভ হয়নি। এবছর পাইকারী বাজারে ক্যাপসিক্যামের কেজি প্রতি ১০০ টাকা দর রয়েছে। তাই অনেক লাভ হবে। ফলে অনেকেই এ সবজি চাষের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
মোঃ মনির পাঠান বাসস’কে বলেন, আমি গত কয়েক বছর ধরে দেখেছি মাঝের চরে ক্যাপসিক্যাম চাষ করে অনেকে লাখ লাখ টাকা লাভ করেছে। তাই এবছর আমি নতুন করে ক্যাপসিক্যাম চাষ শুরু করি।
ভোলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ১১ হেক্টর জমিতে ক্যাপসিক্যাম চাষ হয়েছিল। এ বছর ১৬ হেক্টর জমিতে ক্যাপসিক্যাম চাষ হয়েছে। তার মধ্যে ভোলা সদর উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে ক্যাপসিক্যামের আবাদ হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশি এ সবজির আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, ক্যাপসিক্যাম চাষ ও বিদেশে রপ্তানিতে সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা পাইনা। যদি সরকারিভাবে আমরা সহযোগিতা পাই তাহলে ভোলার চরাঞ্চলে ক্যাপসিক্যাম চাষে বিপ্লব ঘটাতে পারতাম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক বিনয় কুমার দেবনাথ বাসস’কে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে মেঘনার চরে ক্যাপসিক্যাম চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বর্তমানে ক্যাপসিক্যাম চাষিদের কৃষি বিভাগ সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছে। ভোলায় বাণিজ্যিকভাবে ক্যাপসিক্যাম চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি ও চাষিদের সরকারিভাবে সহযোগিতার বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।
বাসস/এইচএএম/কেইউ/১১২৭/নূসী