বাজিস-১ : সাতক্ষীরায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি মানুষের জীবনকে করেছে আলোকিত

169

বাজিস-১
সাতক্ষীরা-সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি
সাতক্ষীরায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি মানুষের জীবনকে করেছে আলোকিত
সাতক্ষীরা, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : জেলার ৭ উপজেলার ৭৮ ইউনিয়নের গ্রাম-গ্রামান্তরে বেগবান ধারায় চলছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। এতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, বয়স্ক-বিধবা, হতদরিদ্র মানুষ আশার আলো বুকে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন সামনের দিকে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা খুঁজে পেয়েছেন বাঁচার আশ্বাস। জেলায় এসিডদগ্ধ প্রতিবন্ধীরা ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে আত্মকর্মসংস্থানে আত্মনিয়োগ করেছে। সব মিলিয়ে সাতক্ষীরায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি তুলেছে সামাজিক জীবনে আলোড়ন। সমাজ প্রগতির ধারা হচ্ছে প্রাণবন্ত।
সাতক্ষীরার সদর উপজেলার ফিংড়ি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের এ টগবগে যুবক আজ ৭১ বছরের বৃদ্ধ। সামান্য পৈতৃক জমি বর্তমানে তার আয়ের প্রধান উৎস। ১০ হাজার টাকা মাসিক মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা নিজের ও তার স্ত্রীর চিকিৎসা বাবদ ব্যয় হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা খায়ের জানান অভাব অনটনের মধ্যেও মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা আমাদের আশার আলো যুগিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের যে সম্মানিত করেছেন তাতে তিনি খুশি।
আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগরের রহিমা বিবি প্রতি মাসে পাঁচশ টাকা বিধবা ভাতা তুলে ছেলের সংসারে ব্যয় করেন। এতে করে ছেলে ও বৌমা এবং নাতি নাতনির কাছে তার মর্যাদা অক্ষুণœ থাকছে। তালা উপজেলার বারুইপাড়া গ্রামের সতীশ অন্যের পানের বরজে দিনমজুরের কাজ করেন। প্রতি মাসে ৫শ টাকা সরকার থেকে বয়স্ক ভাতা পেয়ে শান্তিতে দিন কাটাচ্ছেন। কালিগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুরের নাজমা স্বামী-ননদ-শাশুড়ির অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে পিত্রালয়ে অবস্থান করছেন। মহিলা অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে করছেন দরজির কাজ। এখন তার জীবনে শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে। কলারোয়ার চন্দনপুর ইউনিয়নের মদনপুরে এসিডদগ্ধ করিমন বিবি গাভী পালন লোন নিয়ে কাজ করছেন। দুধ বিক্রি ও গাভী মোটাজাতকরণ করে চলছে তার সংসার।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেবাশীষ সরদার জানান, জেলার সাত উপজেলার ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ হাজার ২২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা ১০ হাজার টাকা হিসেবে ২৭ কোটি ৪৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বয়স্ক ভাতা বাবদ সাতক্ষীরা জেলায় ৬২ হাজার ৪শ ১৯ জনের মাসিক ৫০০ টাকা হিসেবে বরাদ্দ করা হয়েছে ৩৭ কোটি ৪৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুস্থ মহিলা ভাতা বাবদ মাসিক ৫০০ টাকা হিসেবে ২৬ হাজার ৫শ ৪৬ জনকে ১৫ কোটি ৯২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে বরাদ্দ। অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধীদের মাসিক ৭০০ টাকা হিসেবে ১৫ হাজার ৯১৩ জনকে বছরে ১৩ কোটি ৩৬ লাখ ৬৯ হাজার ২০০ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। হিজড়া বিশেষ ভাতা হিসেবে ৩৩ জনকে মাসিক ৫০০ টাকা হিসেবে বছরে ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা দেয়া হচ্ছে বরাদ্দ। বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতা ২৪০ জনকে মাসিক ৫০০ টাকা হারে বছরে ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতিবন্ধী,হিজড়া ও বেদে ও অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করা হয়েছে বিশেষ উপবৃত্তি।
এতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা বাবদ ৭০০ টাকা মাধ্যমিক ৭৫০ টাকা ও উচ্চমাধ্যমিক ৮৫০ টাকা এবং উচ্চতর শিক্ষাবাবদ ১২০০ টাকা ১ হাজার ৬শ ৪৬ জনকে ১ কোটি ৬৬লাখ ৩৩ হাজার ৮০০ টাকা দেয়া হয়েছে চলতি অর্থবছরে। একজন হিজড়া শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি হিসেবে বছরে ৫ হাজার ৪শ টাকা বরাদ্দ করছেন সরকার। বেদে ও অনগ্রসর ২২৭ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি বাবদ বার্ষিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১২ লাখ ২ হাজার ৪শ টাকা।
চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সাতক্ষীরা জেলার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি খাতে মোট ৯৬ কোটি ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ৮শ টাকা বরাদ্দ দেওয়ায় বিভিন্ন দুস্থ এবং অস্বচ্ছল মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে আশার আলোকবর্তিকা।
বাসস/সংবাদদাতা/কেইউ/০৯৫১/নূসী