বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : রাজধানীতে মহিলাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ্যাপস ভিত্তিক যাতায়াত সেবা

431

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
রাজধানীতে মহিলাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ্যাপস ভিত্তিক যাতায়াত সেবা
ঢাকা, ৩ জানুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : রাজধানী ঢকাতে দিনকে দিন যেমন বাড়ছে লোক সংখ্যা, বাড়ছে যানবাহনও। কিন্তু তারপরও সেটা জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। যে কারণে চাকুরিজীবি নারী এবং স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদের বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তবে এর মধ্যে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় অফিসগামী নারীদের। তবে আশার কথা হচ্ছে রাজধানীতে গণপরিবহন সমস্যা মোকাবেলায় এগিয়ে এসেছে এ্যাপস ভিত্তিক বিভিন্ন যাতায়াত সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। এখন অনেক নারীই নির্দিস্ট সময়ে অফিক কিংবা নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছতে এখন ব্যাবহার করছেন এ সব এ্যাপস ভিত্তিক যাতায়াত সেবা। তাদেরই একজন মারিয়া সরকার। একটি গার্মেন্টসের উৎপাদন ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করা মারিয়াকে প্রতিদিন সকাল আটটার মধ্যে অফিসে পৌঁছতে হয়। কিন্তু অফিস দূরে হওয়ায় প্রতিদিনই ঝামেলায় পড়তে হয় তাকে। সাতটায় বাস স্টপে এসে দাঁড়ালেও প্রায় সময়ই গাড়িতে উঠতে পারেন না। এজন্য মাসের অনেক দিনই অফিসে পৌঁছাতে দেরী হত তার। এমনকি সকাল বেলায় সিএনজিও খুব একটা পাওয়া যায় না। আবার কোন সময় পাওয়া গেলেও তাদের সাথে দর কষাকষি করতেই চলে যায় ১০/১৫ মিনিট। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে এখন আর সেই ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না মারিয়াকে।
এখন তিনি ব্যবহার করছেন অ্যাপস ভিত্তিক যাতায়াত সেবা ‘পাঠাও’ এবং ‘উবার’। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে দুটি সেবার যেকোন একটি ব্যবহার করেই পেয়ে যান গাড়ি। মূলত মোটরবাইকই বেশী ব্যবহার করেন তিনি। ফলে এখন সাতটার কিছু সময় পরে বাসা থেকে বের হলেই হয়। সকাল বেলা ঢাকায় যানজট কম থাকায় খুব দ্রুত চলে আসতে পারেন অফিস। এমনকি এ সব এ্যাপস ভিত্তিক যাতায়াত সেবায় ভাড়াও আগে থেকে জানা যায় । যাতায়াত খরচ কিছুটা বেড়ে গেলেও এখন অনেকটা স্বত্তিতে আছেন বলে জানান মারিয়া। তিনি বলেন, মোটর সাইকেলে খুব দ্রুত অফিস পৌঁছে যেতে পারি। আসার সময়ও একইভাবে বাসায় ফিরি।
নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন চব্বিশ ঘন্টা মনিটরিং করে অ্যাপস প্রতিষ্টানগুলো। কোন রাস্তা কিভাবে আছে অর্থাৎ যান জটের অবস্থা সব মনিটরিং করা হয়।
তবে এ পর্যন্ত ড্রাইভারদের কাছ থেকে কোন অশালীন আচরন পাইনি জানান মারিয়। আর পেলেও অভিযোগ করার ব্যবস্থা আছে। ফলে খুব একটা অসুবিধা হবে না বলে জানান এ মহিলা কর্মকর্তা।
সদ্য ব্যাংকে চাকরী পেয়েছেন ঊষা দে। রাজধানীর বাংলা মোটরের এক ব্রাঞ্চে প্রথম পোষ্টিং। তার বাসা মিরপুর ১০ এর গোল চত্ত্বর। সকাল দশটায় অফিস হলেও নয়টা থেকে সাড়ে নয়টার মধ্যে অফিস ঢুকতে হয় তাকে। নতুন বলে এখনো অফিসের গাড়ি পাননি। তাই প্রতিদিনই অফিস আসার সময় পোহাতে হয় নানা ঝক্কিঝামেলা। একদিন তার অফিস কলিগ অ্যাপস ভিত্তিক যাতায়ত সেবা ব্যবহার করার পরামর্শ দিলেন। এমনকি তিনি ঊষার মোবাইলে ‘পাঠাও’ এর অ্যাপস ডাউনলোডও করে দিলেন। কিন্তু ভয়ে কয়েকদিন তা ব্যবহার করেননি ঊষা। একজন অপরিচিত পুরুষের পেছনে বসে মোটর সাইকেলে যাবেন…বিষয়টি তার কেমন যেন লাগছিল। কিন্তু এক দিন গাড়ীতে দীর্ঘক্ষণ উঠতে না পেরে মোবাইলে ডাক দিলেন এক মোটরসাইকেল ড্রাইভারকে। ভাড়াও তুলনামূলক কম। অন্তত সিএনজির চেয়ে অনেক কম। সাহস করে চলেও আসলেন অফিস। এখন তিনি আর গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করেন না। প্রতিদিন অফিসে আসার এবং অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় ব্যবহার করছেন অ্যাপসভিত্তিক যাতায়াত সেবা।
ঊষা বলেন, শুরুতে খুবই সংকোচ লাগত। কিন্তু কয়েকদিন ব্যবহার করার পর থেকে খুবই ভালো লাগছে। তিনি বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত নারীদের গাড়ীতে উঠতে প্রচন্ড কষ্ট হয়। আর অফিস টাইমে তো ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়ী পাওয়া যায় না। গাড়ী আসলেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। আবার ঠেলাঠেলি করে উঠলেও অনেক অযাচিত স্পর্শের সম্মুখীন হতে হয় মেয়েদের। তা ছাড়া অধিকাংশ বাসের হেল্পারদের আচার-আচরন খুবই নোংরা। অন্য দিকে এসব অ্যাপস ভিত্তিক যাতায়াত সেবায় কোন ধরনের ঝামেলা নেই। খুব দ্রুত গাড়ী পাওয়া যায়। আর মোটর সাইকেল-এ খুব দ্রুত অফিস পৌঁছে যাওয়া যায়।’
আবার খরচও অনেক কম। বিভিন্ন সময় ডিসকাউন্টের অফার থাকেই। এমনকি বেশ কয়েকবার ৩০ থেকে ৮০ টাকা দিয়ে অফিস পৌঁছে গেছি। আর সিএনজিতে এই ভাড়া নেয় সর্বনিম্ম দুইশ টাকা। এ ছাড়া সকাল বেলা বিশেষ করে অফিস টাইমে তো সিএনজি যেন সোনার হরিন।
‘পাঠাও’ এর একজন মোটর সাইকেল চালক মো. খোকন জানান, প্রথমে তাদের মোবাইল নাম্বার, ভোটার আইডি, ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ গাড়ীর কাগজপত্র নিয়ে হেড অফিসে দিকে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এরপর প্রতিষ্টানের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। সে সব প্রশিক্ষণে রাস্তায় গাড়ী চালানোর বিভিন্ন নিয়ম-কানুনসহ যাত্রীদের সাথে কিভাবে ব্যবহার করতে হবে তা শেখানো হয়। বিশেষ করে নারী যাত্রীদের সাথে ব্যবহারের বিষয়ে অত্যন্ত জোর দেওয়া হয়। তারপরও কিছু কিছু অঘটন ঘটে যায়। এক্ষেত্রে যাত্রীরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারেন অ্যাপসের মাধ্যমে। বিশেষ করে নারী ঘটিত যে কোন বিষয় খুব গুরুত্ত্বের সাথে দেখা হয় এখানে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাথে সাথে তার লাইসেন্স বাতিল করে দেয়। এবং আইনানুগ ব্যবস্থার নিতে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করে প্রতিষ্ঠান।
নিরাপদ ও নির্ধারিত সময়ে নির্দিস্ট গন্তেব্যে পৌঁছাতে সহায়ক হওয়ায় নারীর কাছে প্রতিদিনই বাড়ছে এসব এ্যাপস ভিত্তিক যাতায়াত সেবার জনপ্রিয়তা। সূত্র মতে প্রায় ৩৫ শতাংশ নারী বর্তমানে এসব অ্যাপস ভিত্তিক যাতায়াত সেবা গ্রহণ করছেন।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/ফই/স্বব/আহো/১৬৫৫/এসএইচ