বাজিস-৩ দিনাজপুরে কৃষিজাতপণ্য ভিত্তিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা

296

বাজিস-৩
দিনাজপুর-পরিকল্পনা
দিনাজপুরে কৃষিজাতপণ্য ভিত্তিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা
দিনাজপুর, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : জেলায় সরকার জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে কৃষিজাতপণ্য ভিত্তিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। জেলায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন অঞ্চল গড়ে উঠলে এখানে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সুজা-উর-রব চৌধুরী জানান, দিনাজপুর শহরে পুলহাট বিসিকের চালু কল কারখানাগুলোতে বিনিয়োগ, উৎপাদনসহ কর্মসংস্থানও বেড়েছে। এখন দিনাজপুর বিসিক শিল্পনগরী এখন সম্ভাবনার পথে হাঁটছে। শুধু পুলহাটে রয়েছে প্রায় শতাধিক অটো রাইস মিল এবং ৩ হাজারের অধিক হাসকিং রাইস মিল। চালের উৎপাদন বাড়াতে এই অঞ্চলে প্রতি বছরই চালকল আধুনিক প্রযুক্তির অটো রাইস মিল বেড়েই চলছে। এখানে উন্নত মানের চাল ছাটাই-বাছাই, মুড়ির চাল এবং ১টি টেকসই ক্রিম চাল উৎপাদনেপ্রসার ঘটেছে। এখানে প্রস্তুতকৃত মুড়ির চাল সারাদেশেই মুড়ি উৎপাদন ও সরবরাহে ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎকৃষ্টমানের চিকন চাল মিনিকেট ও নাজির শাইল এবং ভ্যারাইটি ব্রি-২৮, ৪৯ ও ৫০ জাতের চালের উৎপাদন ব্যাপকহারে হচ্ছে। উৎপাদিত চাল প্রতিদিন এখান থেকে দেশের রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। চালকলগুলোতে প্রায় ২০ হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারী ভাবে আরও সহযোগিতা ও নজরদারি বৃদ্ধি করা হলে এখানকার উৎপাদিত কাঠারী ভোগ ও চিনিগুড়া সুগন্ধি চাল দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে উচ্চমূল্যে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
এছাড়াও তিনি আরো বলেন, পুলহাট শিল্পনগরীতে রাইস মিল, ডাল মিল, ফ্লাওয়ার মিল, সেমাই ও সুজি মিল, আয়ুর্বেদিক ও কেমিক্যাল কারখানাসহ ৫৪টি চালু শিল্প ইউনিটগুলোতে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করেছে ২২ কোটি ২০ লাখ টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানে গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার পণ্য উৎপাদিত হয়েছে। এতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
বিসিক দিনাজপুরের উপ মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোঃ গোলাম রব্বানী জানান, দিনাজপুরের দশমাইল এলাকায় ৫০ একরের জায়গা বিসিক এক্সটেনশন করার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এখন সেটা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জেলার কাহারোল উপজেলার গড়নুরপুর মৌজায় চিনিকলের কান্তা ইক্ষু ফার্মের ১৯.৬১ একর এবং ব্যক্তি মালিকানার ৩০.৩৭ একর জায়গায় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তুলতে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এই শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য বিদ্যুৎ, যাতায়াত ব্যবস্থা ও পানির সুবিধা রয়েছে। জমি অধিগ্রহণের পর সম্ভাব্য ১৮৬টি প্ল্টে শিল্পনগরী কারখানা স্থাপনে স্থান নির্ধারণ করা হবে। এটি একটি কৃষিজাত পন্য ভিত্তিক শিল্পনগরী করার প্রাথমিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। প্রস্তাবিত শিল্পনগরীটি স্থাপন করা হলে এই অঞ্চলে বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও বিশেষ অবদান রাখবে।
তিনি আরও জানান, দিনাজপুরে বিসিক শিল্পনগরীর পাশাপাশি গড়ে তোলা হয়েছে শিল্প সহায়ক কেন্দ্র। এখানে শিল্পের রেজিস্ট্রেশন প্রদান, ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসুচী, পণ্য আমদানীর শুল্ক হ্রাসে সুপারিশ করা, মৌ খামারীদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদান, বেকার যুবকদের কারিগরি ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান, নতুন শিল্প উদ্যোক্তা চিহ্নিতকরণ এবং তাদের কারিগরী সেবা প্রদান করে থাকে। শিল্প উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন বাহারী পণ্যের নকশা বিতরণ, উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রজেক্ট প্রোফাইল বিতরণ করা হয়। এরপরেও শিল্প নগরী এলাকার রাস্তা-ড্রেনসহ বিভিন্ন উন্নয়নেও কাজ করে থাকে বিসিক।
বিসিকের প্রকৌশলী মোঃ গোলাম রব্বানী আরও জানান, দিনাজপুরের পুলহাট বিসিকের বরাদ্দ দেয়া ১৮৯টি প্লটে ৫৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে খাদ্য ও খাদ্যজাত রাইস মিল ৪১টি, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প ৫টি, কেমিকেল শিল্প ৪টি, বনজ শিল্প ১টি, টেক্সটাইল ২টি এবং আয়ুর্বেদিক খাতে ১টি শিল্প প্লটে উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। এছাড়া বিসিকের বাইরে ব্যক্তি মালিকানায় হাজার হাজার চাল শিল্প গড়ে উঠেছে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০ হাজার নারী-পুরুষ কর্মে নিয়োজিত রয়েছে।
দিনাজপুর সদর আসনের সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম জানান, দিনাজপুর দশমাইল এলাকায় ৪০০ একর জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে একটি পরিকল্পনা নির্ধারণ করে প্রস্তাব সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গত অর্থ বছর প্রেরণ করা হয়েছে। এখানে ব্যাপকহারে কলকারকানা স্থাপনে এলাকার শিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত পুরুষ-মহিলাদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে উৎপাদিত পণ্য দেশের বাইরে রপ্তানি করতে সৈয়দপুর বিমান বন্দরকে সরকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরিত করতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে জমি অধিগ্রহনেণ কাজ শুরু করেছে। ফলে প্রস্তাবিত দিনাজপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে একটি ব্যাপক ভুমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাসস/সংবাদদাতা/১৫৪৫/মরপা