বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : নতুন প্রজন্মকে দেশের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

310

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-গ্রন্থমেলা উদ্বোধন
নতুন প্রজন্মকে দেশের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

‘বইমেলা কেবল বই কেনা-বেচার জন্য নয়, বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালির ইতিহাস ত্যাগের ইতিহাস। আর সেটিই আমাদের অর্জন।’
তিনি বলেন, ‘বাইমেলায় গিয়ে বই কিনে নতুন বইয়ের ওপর হাত দেয়ার আনন্দই আলাদা। তবে বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ। তাই অন্যান্য লাইব্রেরির পাশাপাশি ডিজিটাল লাইব্রেবির পয়োজন রয়েছে। এর মাধ্যমে সহজে বই মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া যায়।
শেখ হাসিনা বলেন,‘ যখন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলাম না, তখন নিয়মিত বইমেলায় এসেছি। এখন মেলায় আসলে দর্শনার্থীদের সমস্যা হয়। নিরাপত্তার কারণে চলাচল বিঘœ হয়। এ কারণে আসতে পারি না। তবে মনটা বইমেলাতেই পড়ে থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন,১৯৪৮ সালে ভাষার জন্য আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের পথ ধরে আমাদের স্বাধিকার আদায়। আর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা করার উদ্যোগ ’৯৬ পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই নেয়া হয়।
তিনি বলেন, কানাডা প্রবাসী প্রয়াত রফিকুল ইসলাম, আবদুস সালামের মত প্রবাসী বাঙালিদের আন্তরিক উদ্যোগে এবং তৎকালীন আমাদের সরকারের প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো কর্তৃক ২১-এ ফেব্রুয়ারি ‘আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে পৃথিবীর সকল ভাষাগোষ্ঠীর মাতৃভাষা সংরক্ষণ, বিকাশ ও চর্চার লক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষার প্রতি মর্যাদা দেখিয়ে বঙ্গবন্ধু জাতীসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রী হবার পর প্রতিবছর তিনি নিজেও জাতিসংঘে বাংলাতেই ভাষণ দেন।
সরকার প্রধান এ সময় তাঁর সরকারের বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে বই তুলে দেয়া, বৃত্তি দেয়া, উপবৃত্তি প্রদানসহ শিক্ষা সম্প্রসারণের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে বলেন,‘ শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে মানুষ যাতে দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে তার জন্য আমরা কাজ করছি।’
শেখ হাসিনা তাঁর উন্নয়নের সাফল্য তুলে ধরে বলেন, আমরা মনে করি দেশকে আমরা আজকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছি। আমরা আজকে উন্নয়নশীল দেশ। আর্থসমাজিকভাবে বাংলাদেশ আরো উন্নত-সমৃদ্ধ হোক সেটাই আমরা কামণা করি।
তিনি জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় পুণর্ব্যক্ত করে বলেন,
‘বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র মুক্ত এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এই বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। যেখানে জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি বা মাদক- কোন কিছুর স্থান থাকবে না। বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ায় সবথেকে সমৃদ্ধশালী এবং শান্তিপ্রিয় দেশ, যেমনটি জাতির পিতা চেয়েছিলেন।’
প্রধানমন্ত্রী ঠিক ৩টায় অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান। এরপর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। সূচনা সঙ্গীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশন করা হয়। পরে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এই বার নিয়ে রেকর্ড ১৬ বারের মতো বইমেলার উদ্বোধন করেন তিনি।
মিসরীয় সাংবাদিক-গবেষক মহসিন আল আরিশির আরবিতে লেখা ‘হাসিনা হাকাইক আসাতি’ বইটির একটি কপি এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়া হয়।
মুসলিম প্রধান একটি দেশে একজন নারী হয়ে নেতৃত্বে এসে শেখ হাসিনা কীভাবে মানুষের দিনবদলের রূপকার হয়ে উঠলেন, সেই বিবরণ এই বইয়ে তুলে ধরেছেন আরিশি। বইটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ তরেছে বাংলা একাডেমী যার নাম ‘শেখ হাসিনা: যে রূপকথা শুধু রূপকথা নয়’।
পরে বইমেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী।
এবারের বইমেলায় ৫২৩টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। এছাড়া ১৮০টি লিটলম্যাগাজিনকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৪টি প্রতিষ্ঠানের ১৫০টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৯৫টি প্রতিষ্ঠানের ৬২০টি ইউনিটসহ মোট ৪৯৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭০টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ১৮০টি লিটলম্যাগকে ১৫৫টি স্টল দেয়া হয়েছে। ২৫টি স্টলে দুটি করে লিটল ম্যাগাজিনকে স্থান দেয়া হয়েছে। স্টল পেয়েছে অন্য ১৩০টি প্রতিষ্ঠান।
প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত গ্রন্থমেলা উন্মুক্ত থাকবে। ছুটির দিনে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে মেলা। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে এই অমর একুশে গ্রন্থমেলা।
বাসস/এএসজি-এফএন/২০১০/অমি