সাতক্ষীরায় জমে উঠেছে খেঁজুরের গুড় ও পাটালির হাট

238

সাতক্ষীরা, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : শীত মৌসুম শুরুর আগে থেকেই জেলায় নতুন স্বাদের খেঁজুরের গুড় ও পাটালির জন্য অধীর হয়ে ওঠেন শিশু-কিশোর, যুবক ও বৃদ্ধরা। দেখা যায় খেঁজুর গাছে গাছিদের ব্যস্ততার বিভিন্ন দৃশ্য। খেঁজুর গাছ কাটা থেকে শুরু করে রস আহরণ করে সেই রস থেকে গুড় তৈরি করা পর্যন্ত বেশ ব্যস্ত সময় পার করে থাকে গ্রামীণ জনপদের গাছিরা। জেলার গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে গাছিরা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি উপার্জনের জন্য খেঁজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে। খেঁজুরের রস ও গুড় থেকে তৈরি হয় পাটালি। জেলায় চলতি মৌসুমে ২৩৮ হেক্টর জমিতে ৮২৬ মেট্রিকটন খেঁজুরের গুড় ও পাটালির লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাতক্ষীরা জেলার উপ-পরিচালক অরবিন্দু বিশ্বাস জানান, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে ৮০ মেট্রিকটন গুড় ও পাটালির লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। কলারোয়া উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে ২৫ মেট্রিকটন, তালা উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে ৪৮০ মেট্রিকটন, দেবহাটা উপজেলায় ২৮ হেক্টর জমিতে ৫৬ মেট্রিকটন, কালিগঞ্জ উপজেলায় ৪২ হেক্টর জমিতে ৬৪ মেট্রিকটন, আশাশুনি উপজেলায় ৩৮ হেক্টর জমিতে ১৬ মেট্রিকটন ও শ্যামনগর উপজেলার ৩০ হেক্টর জমিতে ১০৬ মেট্রিকটন জমিতে অর্থাৎ সর্বমোট ২৩৮ হেক্টর জমিতে ৮২৬ মেট্রিকটন গুড় ও পাটালির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তালা উপজেলার সেনেরগাতি গ্রামের গুড় ব্যবসায়ী আনন্দ দাস জানান, জেলায় খেঁজুরের গুড় ও পাটালি সবচেয়ে তালা উপজেলায় বেশি তৈরি হয়। এরপরে কলারোয়া ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় খেঁজুর গাছ বেশি রয়েছে। খেঁজুরের গুড় ও পাটালির জন্য তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা, জাতপুর, খলিসখালী, খেসরা, নগরঘাটাসহ বেশ কিছু হাট রয়েছে। এছাড়া কলারোয়া উপজেলার খোরদহ, কলারোয়া, সোনাবাড়িয়া, সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙ্গা, ফিংড়ি, আখড়াখোলা এবং দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া, গাজীরহাট, টাউনশ্রীপুর, কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা, তারালি, মৌতলা ইত্যাদি স্থানে খেঁজুরের গুড় ও পাটালি প্রচুর বিক্রি হয়। এসব গুড় ও পাটালি যশোর জেলার কেশবপুর ও মনিরামপুর এবং খুলনা জেলার ডুমুরিয়াসহ বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা বিক্রির উদ্দেশ্যে কিনে নিয়ে যায়।
কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের গাছি নাসিরুদ্দীন জানান, আশ্বিন-কার্তিক মাসে খেঁজুর গাছ কাটা হয়। অগ্রহায়ণ থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত খেঁজুরের রসের আমেজ অন্যরকম। খেঁজুরের গুড় ও পাটালির স্বাদ ও গন্ধের কারণে এসময় জেলার বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ বেশ উৎসুক থাকেন। মহিলারা খেঁজুরের গুড়ের পিঠা ও পায়েস তৈরিতে পার করেন ব্যস্ত সময়। তাই বাজারে গুড় ও পাটালির যোগান দিতে হিমশিম খেতে হয় তাদেরকে।
সদর উপজেলার মুকুন্দপুর গ্রামের রোকেয়া বেগম বলেন, তার স্বামী গাছি। তিনি খেঁজুরের পাতা সংগ্রহ করে আনেন যা দিয়ে রোকেয়া বেগম তৈরি করেন পাটি, হাতপাখা ও বিভিন্ন শৌখিন কারুশিল্প। আর এসব হাতে তৈরি জিনিসপত্র তাদের সংসারে এনেছে স্বাচ্ছন্দ্য। আবার শুকনো পাতা জ্বালানির কাজেও ব্যবহৃত হয়।