২১ আগস্ট মামলায় দন্ডিত দুই পলাতক আসামীর আত্মসমর্পণ : কারাগারে প্রেরণ

255

ঢাকা, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া রায়ে দন্ডিত ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান ও আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাদের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়।
ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালত আজ এ আদেশ দেয় বলে বাসস’কে জানান একশে আগষ্ট মামলায় প্রসিকিউশন টিমের অন্যতম সদস্য এডভোকেট আকরাম উদ্দিন শ্যামল।
গত ২৭ নভেম্বর একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আনা দুই মামলার রায়সহ ৩৭ হাজার তিন শ ৮৫ পৃষ্ঠার নথি পৌঁছে হাইকোর্টে। আসামীদের আপিল শুনানির জন্য (এডমিশন) গ্রহণ করা হয়েছে।
একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদন্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়ে গতবছর ১০ অক্টোবর রায় দিয়েছে বিচারিক আদালত। এছাড়া মামলার অন্য ১১ আসামীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে একুশে আগষ্টের ওই ঘটনায় আনা পৃথক মামলায় একই সঙ্গে বিচার অনুষ্টিত হয়। মামলায় ৩১ আসামী কারাগারে এবং ১৮ আসামী এখনো পলাতক।
রায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১৮ আসামী হলেন- লুৎজ্জামান বাবর, বিএনপি-জামায়াত জোটের সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে আবু জান্দাল, মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ, মো. উজ্জল, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক হানিফ। পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করার অভিযোগে দন্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত।
যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু। তাদেরকে দন্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দেয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়।
এছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হক, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদন্ড দিয়েছে আদালত।
১৪টি বিবেচ্য বিষয় নির্ধারণ করে তা পর্যালোচনা, সাক্ষ্য-তথ্য প্রমাণের আলোকে এ মামলার রায় ও আদেশ দেয়া হয়েছে বলে আদালতের রায়ে বলা হয়।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ, বর্বরোচিত ও নৃশংস গ্রেনেড হামলার ঘটনায় তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল¬ুর রহমানের পতœী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ভয়াবহ ওই ঘটনায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক মানুষ আহত হন। বর্বরোচিত ও নৃশংস ওই গ্রেনেড হামলার ঘটনার পরদিন ২২ আগষ্ট পুলিশ বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করে। মামলার বাদী মতিঝিল থানা পুলিশের ওই সময়ের সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) শরীফ ফারুক আহমেদ। ঘটনার প্রায় চার বছর পর ২০০৮ সালের ৯ জুন অভিযোগপত্র (চার্জসিট) দেয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে এ মামলা অধিকতর তদন্তের আদেশ হয় ২০০৯ সালের ১২ আগস্ট। তদন্ত শেষে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয় ২০১১ সালের ২ জুলাই। প্রথম অভিযোগপত্রের আলোকে অভিযোগ গঠন করা হয় ২০০৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। সম্পূরক অভিযোগপত্র আমলে নেয়ার পর অভিযোগ গঠন করা হয় ২০১২ সালের ১৮ মার্চ। ওই ঘটনায় হত্যা, হত্যা চেষ্টা, ষড়যন্ত্র, ঘটনায় সহায়তাসহ বিভিন্ন অভিযোগে একটি মামলা যাতে আসামী সংখ্যা মোট ৫২ জন (ইতোমধ্যে অন্য মামলায় তিন আসামীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় এখন আসামী ৪৯ জন)। একই ঘটনায় ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে (সংশোধনী-২০০২) অপর একটি মামলায় আসামী সংখ্যা ৩৮ জন।
আসামীদের মধ্যে ৩৮ জন উভয় মামলায়ই আসামী। এর মধ্যে এখন হত্যা মামলায় ৪৯ জন ও বিষ্ফোরক আইনের মামলায় ৩৮ জন আসামী।