বাজিস-৬
ঠেগামুখ-স্থল-বন্দর
আঞ্চলিক পরিষদের সাড়া না পাওয়ায় থেমে গেছে ঠেগামুখে স্থল বন্দর স্থাপনের কাজ
রাঙ্গামাটি, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ (বাসস) : জেলার বরকল উপজেলার সীমান্তবর্তী ঠেগামুখ এলাকায় সরকার ২০১০ সালে স্থল বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও আঞ্চলিক পরিষদের সাড়া না পাওয়ায় তা থেমে গেছে । পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী কোন বড় ধরণের স্থাপনা করতে গেলে পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের অনুমতি লাগে। কিন্তু আঞ্চলিক পরিষদ থেকে এখনো কোনো সাড়া না পাওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে স্থল বন্দর নির্মাণের কাজ।
রাঙ্গামাটি শহর থেকে নৌপথের প্রায় ১শ কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত বরকল উপজেলার ভূষনছড়া ইউনিয়নের ঠেগামুখ। এ ঠেগামুখের ওপারে রয়েছে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের দেমাগ্রি এলাকা। দুদেশের একমাত্র সীমানা হচ্ছে ভারতের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপত্তি কর্ণফুলী নদী । এ নদীর ওপর দিয়ে দুদেশের লোকজন নিজ নিজ দেশের পতাকার উড়িয়ে চলাচলসহ দু’দেশের জেলেরা একই নদীতে মাছ শিকার করে থাকেন। আবার সীমান্তের উভয় পাড়ের বসবাসকারী জনগোষ্ঠী হচ্ছেন চাকমা সম্প্রদায়ের। তাদের মধ্যে ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি মিল রয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১০ সালে তৎকালীন সরকার রামগড় ও ঠেগামুখে দুটি স্থল বন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নেয়, তার ধারাবাহিকতা ২০১২ সলে তৎকালীন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান ঠেগামুখ প্রস্তাবিত স্থলবন্দর এলাকা পরিদর্শন করেন। তাছাড়া দুই দেশের সরকারী উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা ঠেগামুখ এলাকা পরিদর্শন এবং ভারত সরকার মালামাল আনা নেয়ার ক্ষেত্রে ভারতের দেমাগ্রি এবং ঠেগামুখ খালের উপর ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ব্রীজ নিমার্ণে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ স্থল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে বাঁশ, কাঠ, চূনা পাথর ও স্টিলের পণ্য বাংলাদেশে আসবে আর বাংলাদেশ মেলামাইন সামগ্রী,পানির ফিল্টার,প¬াস্টিক সামগ্রী, জুতা,শীত বস্ত্র এবং বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেট ও চিপস ভারতে যাবে।
আর এসব বিষয়গুলোকে কাজে লাগিয়ে সরকার ২০১০ সালে বরকলে ঠেগামুখে স্থল বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী ভুমি অধিগ্রহণ ও বড় স্থাপনা নির্মাণে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ থেকে অনুমতি লাগে। গত ৮ বছরেও আঞ্চলিক পরিষদের কাছ থেকে সে অনুমতি মেলেনি।
ব্যবসায়ী প্রভাত কুমার চাকমা জানিয়েছেন, ঠেগামুখে স্থল বন্দর চালু নিয়ে এলাকার মানুষ বেশ দ্বিধাদ্বন্দে রয়েছেন। কারণ এ স্থল বন্দর চালু হলে স্থানীয় লোকজন ব্যবসা-বাাণিজ্য করার সুযোগ পাবে কিনা এবং সীমান্তের উভয় পাড়ের মানুষের মধ্যে বিয়ে- দেয়া-নেয়াসহ যে আত্বীয়তার বন্ধন রয়েছে তার ফাটল ধরবে কিনা। তবে তারা চান দেশের অর্থননৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে, ব্যবসা-বাণিজ্যের দুয়ার খুলতে ঠেগামুখে স্থল বন্দর চালু হোক।
বড়গাঙ (ঠেগামুখ) ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি কামিনী চাকমা জানান, স্থল বন্দর না হওয়াতে অনেকে চুরি করে ভারতে যায়। এ জন্য অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়। স্থল বন্দর হলে বৈধভাবে ভারতে যাওয়া যাবে এবং বৈধভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করা সম্ভব হবে।
বরকল ভুষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ মামুন জানান, ঠেগামুখে স্থল বন্দর হলে দুই দেশ লাভবান হবে। যত দ্রুত সম্ভব স্থল বন্দর নির্মাণ কাজ চালু হওয়া দরকার।
বিজিবির ঠেগামুখ ক্যাম্পের ভরপ্রাপ্ত অধিনায়ক শাহাদাত ও উপ-ক্যাম্প অধিনায়ক মাসুদ বলেন, সীমান্ত এলাকায় দু’দেশের মানুষ সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। বরকলে ঠেগামুখে স্থলবন্দর হলে আরো সুযোগ সুবিধা বাড়বে।
চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেছেন, স্থানীয় সার্কেল চীফ, আঞ্চলিক পরিষদ, হেডম্যান, কার্বারীসহ স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে কয়েক বছর সময় হাতে নিয়ে কাজ করা উচিত। এতে কোন সমস্যা হবে না। যদি এক তরফা কাজ করা হয় তাহলে এখানে আতঙ্ক দেখা দিবে এবং সংঘাত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
বিষয়টি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে সাধারণ মানুষের মতে, বরকলে ঠেগামুখে স্থলবন্দর হলে রাঙ্গামাটি জেলার জুড়াছড়ি, বিলাইছড়ি এবং বরকল উপজেলা মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।
বাসস/সংবাদদাতা/১৮১০/মরপা
Home 0সকল সংবাদ বাসস বাজিস বাজিস-৬ : আঞ্চলিক পরিষদের সাড়া না পাওয়ায় থেমে গেছে ঠেগামুখে স্থল বন্দর...