বাজিস-২ : নড়াইলে ৭৯৮ ভিক্ষুকের হাত কর্মীর হাতে পরিণত

155

বাজিস-২
নড়াইল-ভিক্ষুক
নড়াইলে ৭৯৮ ভিক্ষুকের হাত কর্মীর হাতে পরিণত
নড়াইল, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : জেলার তিন উপজেলায় ৭৯৮ ভিক্ষুকের হাত এখন কর্মীর হাতে পরিণত হয়েছে। খুলনা বিভাগের প্রথম ভিক্ষুকমুক্ত জেলা নড়াইলের ৭৯৮ জন ভিক্ষুক বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত হয়ে এখন স্বাবলম্বী হবার পথে। এর মধ্যে ২০ জন দৃষ্টিহীন, দু’জন বধির ও দু’জন বোবাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ৩৯জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছেন।
তিনটি পৌরসভা ও তিনটি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়নে ৭৯৮জন ভিক্ষুককে চিহিৃত করে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে সব এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে নারী ভিক্ষুক আছেন ৫৫৪ জন এবং পুরুষ ভিক্ষুক ২৪৪ জন। আড়াই বছর আগেও যারা ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালাতো সরকারি উদ্যোগের ফলে তারা এখন অন্য ভালো পেশায় নিয়োজিত হয়ে আয়-রোজগার করছেন। জেলার বিভিন্ন বাস্ট্যান্ড, ফেরিঘাট, হাট-বাজার, বাসা-বাড়ি, শহর-বন্দর, গ্রামাঞ্চলসহ বিভিন্ন লোকালয়ে দোকানদারি,বাদাম,ছোলা মুড়ি বিক্রি করে, ওজন মেপে, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন এবং অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আয় করে সংসার চালাচ্ছেন। ভিক্ষার জন্য এখন কেউ অন্যের কাছে হাত পাতেন না। প্রতিটি ভিক্ষুকের হাত এখন কর্মীর হাতে পরিণত হয়েছে।
লোহাগড়া উপজেলার পদ্মবিলা গ্রামের এক সময়ের অন্ধ ভিক্ষুক ফারুক হোসেন (৪৫) জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার পর এখন মুদি দোকানের ব্যবসা করি। এ ব্যবসা থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে ভালোভাবে তার সংসার চলছে বলে তিনি জানান।
নড়াইল সদর উপজেলার কালুখালি গ্রামের লিটন মোল্যা জানান, তিনি একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে ঋণ নিয়ে হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন।একই উপজেলার আগদিয়াচর গ্রামের গোলাপী জানান, তিনিও একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে ঋণ নিয়ে হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ভিক্ষুকদের কর্মমুখী ও পুনর্বাসন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ১৭ লক্ষ নগদ টাকা, ১৩২ জনকে বসবাসের ঘর পাঁচটি গরু, পাঁচটি ওজন পরিমাপক যন্ত্র, ছয়টি সেলাই মেশিন, ৩০৭টি ছাগল, ৯১০টি হাঁস, ২৯০টি মুরগি, ১৩টি ভ্যান, ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ২৫৩টি দোকান, দুই বান্ডিল টিন প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকার বেশি ভিক্ষুকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে, ৬২০ জনকে বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান এবং জিআর চালসহ ইজিপিপি ও ১০ টাকা কেজি দরের চালের সুবিধাও দেয়া হয়েছে। ১৫ জনকে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষকর্মী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। ৭৯৮জন পুনর্বাসিত ভিক্ষুককে দেখভালের জন্য একজন করে তদারককারী কর্মকর্তা নিয়োজিত আছেন। এক্ষেত্রে শিক্ষক, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য সহকারী, চৌকিদারসহ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের চাকুরিজীবীরা স্বেচ্ছাশ্রমে পুনর্বাসিত ভিক্ষুকদের তদারকি করেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইয়ারুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসনের প্রচেষ্টায় নড়াইলকে ভিক্ষুকমুক্ত জেলায় পরিণত করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ জেলাকে ভিক্ষুকমুক্তকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়। সব এলাকা থেকে ভিক্ষুকদের তালিকা করে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সহযোগিতায় তাদের (ভিক্ষুকদের) পুনর্বাসন করা হয়েছে।
ভিক্ষুকদের স্বাবলম্বী করার জন্য খুলনা রেঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা একদিনের বেতনের টাকাও প্রদান করেছেন। অসহায় ভিক্ষুকদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে খুলনা রেঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের একদিনের বেতনের ৫৮ লাখ ১২ হাজার ২০৯ টাকার চেক গত ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে কালিয়া উপজেলার নড়াগাতি থানার অরুনিমা রিসোর্স সেন্টারের হল রুমে তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনারের হাতে তুলে দেয়া হয়
বাসস/.সংবাদদাতা/১২৩৫/-মরপা