বাসস ক্রীড়া-৬ : রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ প্রিভিউ : ডি

239

বাসস ক্রীড়া-৬
ফুটবল-বিশ্বকাপ- প্রিভিউ
রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ প্রিভিউ : ডি
ঢাকা, ৩১ মে ২০১৮ (বাসস) : রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরু হতে বাকি আর মাত্র দুই সপ্তাহ। এরই মধ্যে ফুটবল ভক্তদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে আসর শুরুর গ্রুপ পর্ব। কোন্্ দল কোন্্ গ্রুপে পড়েছে এবং কোন্্ গ্রুপ থেকে কোন্্ দলটি নক-আউট পর্বে উঠে আসবে, ইত্যাদি নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। এখানে রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের দল এবং খেলা নিয়ে আলোচনা করা হল।
গ্রুপ ডি : আর্জেন্টিনা,আইসল্যান্ড, ক্রেয়েশিয়া, নাইজেরিয়া
আর্জেন্টিনা : এটি বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয় যে, আর্জেন্টিনার মতো দলকে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে কোয়ালিফাই করতে শেষ ম্যাচটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের মূল আসরে আর্জেন্টিনা। এখন গোটা বিশ্ববাসীর দৃস্টি আর্জেন্টিনার ওপর নিবদ্ধ। কারণ সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের কাতারে থাকা লিওনেল মেসি রয়েছেন আর্জেন্টিনা দলে।
আর্জেন্টিনার বর্তমান দলটিতে মেধাবিদের ছড়াছড়ি। সেখানে আক্রমণ ভাগেই রয়েছে অধিকাংশ তারকা। যেমন রয়েছেন লিওনেল মেসি, গঞ্জালো হিগুইন, পাওলো দিবালা এবং সার্জিও এগুয়েরো। এতো তারকার ভিড়ে শেষ পর্যন্ত ইন্টার মিলানের অধিনায়ক ও সিরি এ লীগে যৌথ সর্বোচ্চ গোলদাতা মাওরো ইকার্ডিকে দলে রাখতে পারেননি কোচ।
তবে গোল রক্ষক হিসেবে তিনি পাচ্ছেন চেলসির দ্বিতীয় পছন্দের তালিকায় থাকা উইলি ক্যাবালোরোকে। তবে রক্ষণ ও মধ্য মাঠের জন্য তিনি যেসব খেরোয়াড়দের পাচ্ছেন তাদের ওপর খুব বেশী ভরসা করা যায় না। তারপরও দলে নিকোলাস ওটামেন্ডি ও এঞ্জেল ডি মারিয়ার মতো তারকা খেলোয়াড় আছেন।
প্রশ্ন রয়েছে এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে নিয়োগ পাওয়া দেশটি তৃতীয় কোচ জর্জ সাম্পাওলিকে নিয়েও। বর্তমান কোচ সাম্পাওলি দায়িত্ব নিয়ে এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক মাত্র একটি ম্যাচে জয়ের স্বাদ পেয়েছেন। যে কারণে আসন্ন রাশিয়া সফরে আর্জেন্টিনা কি সফল হবে, নাকি ২০০২ সালের মতো গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হবে সেটিই দেখার বিষয়। তবে আপাত দৃষ্টিতে গ্রুপ শীর্ষ দল হিসেবে তাদের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠার সম্ভাবনা কমই মনে হচ্ছে।
আইসল্যান্ড : মাত্র ৩ লাখ ৪০ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত আইসল্যান্ড বিশ্বকাপের চূড়ান্ত আসরে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট দেশ। বিস্ময়করভাবে তাদের উত্থান। বিশ্বকাপের চূড়ান্ত আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জনকারী দলটি ২০১৬ ইউরো টুর্নামেন্টেও চূড়ান্ত আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এখানেই শেষ নয়, ওই আসরে তারা ইংল্যান্ডের মতো দলকে হটিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে।
ক্রোয়েশিয়া ও ইউক্রেনকে পেছনে রেখে বিশ্বকাপের টিকিট অর্জনের মাধ্যমে তারা প্রমান করেছে কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে বড় কিছু অর্জন করা যায়। যেটি তাদের প্রথমবারের মতো বিশ্বের সব চেয়ে বড় মঞ্চে পৌঁছে দিয়েছে। তবে বিশ্ব আসরে গিয়েই যে দলটি কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলতে পারবে সে রকম ভাবার কোন কারণ নেই। তবে দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ তারকা জিলফি সিগার্ডসন ও অ্যারন গানারসন ইনজুরি কাটিয়ে ফিরে আসছেন। এটি খুবই ভাল সংবাদ। এখন দেখা যাক দুই বছর আগের মত দক্ষতা গ্রুপ পর্বে প্রদর্শন করতে পারে কিনা। যেমনটি তারা করেছিল পর্তুগাল ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
গ্রুপের বাকী দলগুলোও এবার যথেষ্ঠ হোম ওয়ার্ক করেই বিশ্ব মঞ্চে আসছে। তাই আইসল্যান্ডকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী নেবিচকই হচ্ছে। গ্রুপের বাকী দলগুলো শক্তিশালী হওয়ায় তাদের সেখানেই সংগ্রাম করতে হবে। ফলে তলানীতেই থাকতে পারে নবাগত দলটিকে।
ক্রোয়েশিয়া : টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছানোর জন্য বেশ সংগ্রাম করতে হয়েছে ক্রোয়েশিয়াকে। তবে যেভাবে তারা শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের টিকিট সংগ্রহ করেছে সেটা অবশ্যই মনোমুগ্ধকর। অ্যান্টে ক্যাসিচের কাছ থেকে যখন নতুন কোচ হিসেবে জøাটকো ডেলিস দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ বাকী। এর আগেই ইউক্রেনকে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে তারা। শেষ ম্যাচে গ্রীসের বিপক্ষে ৪-১ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া।
দলটির মধ্যমাঠে যেমন লুকা মড্রিক ও ইভান রাকিটিচের মতো তারকা খেলোয়াড়রা আছেন তেমনি আক্রমণ ভাগে আছেন নিকোলা কালিনিচ, আন্দ্রেই ক্রামারিচ, ইভান পেরিসিচ ও মারিও মানজুকিচের মতো ডাকসাইটে তারকা। যারা যে কোন শক্তিশালী রক্ষনভাগ ভেঙ্গে ফেলার যোগ্যতা রাখে।
যদিও বিশ্বকাপের ড্র ক্রোয়েশিয়ার প্রতি সদয় ছিলনা। যে কারণে ‘ডেথ গ্রুপেই’ ঠাই হয়েছে ক্রোয়েশিয়ার। এই গ্রুপ থেকে অবশ্য যে কোন দলই দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছে যেতে পারে। যদিও নিজেদের আসল দক্ষতা এখনো দেখাতেই পারেনি আর্জেন্টিনা। সেটি হলে তাদের সঙ্গে পাল্লা দেয়া যে কোন প্রতিপক্ষের জন্য কঠিন হবে। তবে সম্ভাবনার কথা বাদ দিলে এই মুহূর্তে গ্রুপ সেরা হিসেবে ক্রেয়েশিয়াকেই ধরা যেতে পারে।
নাইজেরিয়া : আফ্রিকা অঞ্চল থেকে প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত টিকিট পেয়েছে নাইজেরিয়া। দলটি এমন এক গ্রুপ থেকে উঠে এসেছে যেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে ছিল আফ্রিকা অঞ্চলের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ক্যামেরুন, সাবেক চ্যাম্পিয়ন জাম্বিয়া এবং ২০১০ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করা আলজেরিয়া।
গত নভেম্বরে একটি প্রীতি ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ৪-২ গোলে হারিয়েছিল সুপার ঈগলরা।
দলে রয়েছে বেশ কজন প্রতিশ্রুতিশীল ফুটবলার। তবে গোটা দলটি মধ্যম মানের। শক্তিশালী আক্রমনভাগের সামনে সহজেই ভেঙ্গে পড়তে পারে তাদের দুর্বল রক্ষণ। আর্জেন্টিনার শক্তিশালী আক্রমণবাগ এবং ক্রেয়েশিয়ার দুর্দান্ত মিডফিল্ডারদের সামনে টিকে থাকা কঠিন হবে সুপার ঈগলসদের জন্য। যে কারণে গ্রুপ পর্বে সর্বোচ্চ তৃতীয় স্থান দখল করতে পারে তারা।
বাসস/এমএইচসি/১৬৫৫/-স্বব