বাসস ক্রীড়া-৫ : রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ প্রিভিউ : সি

239

বাসস ক্রীড়া-৫
ফুটবল-বিশ্বকাপ- প্রিভিউ
রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ প্রিভিউ : সি
ঢাকা, ৩১ মে ২০১৮ (বাসস): রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরু হতে আর বাকি মাত্র দুইু সপ্তাহ। এরই মধ্যে ফুটবল ভক্তদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে আসর শুরুর গ্রুপ পর্ব। কোন দল কোন গ্রুপে পড়েছে এবং কোন গ্রুপ থেকে কোন দলটি নক আউট পর্বে উঠে আসবে, ইত্যাদি নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। এখানে রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের দল এবং খেলা নিয়ে আলোচনা করা হল।
গ্রুপ সি : ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, পেরু ও ডেনমার্ক
ফ্রান্স : যে কোন বড় টুর্নামেন্টে ফ্রান্স থাকে ফেভারিটের তালিকায়। ২০১০সালের বিশ্বকাপে হতাশাজনক পারফর্মেন্সের পর দারুন উন্নতি ঘটেছে ফ্রান্সের। সর্বশেষ ২০১৬ ইউরোর ফাইনালে অংশ নিয়েছে স্বাগতিক ফরাসিরা। তবে চুড়ান্ত ম্যাচে পর্তুগালের কাছে হেরে শিরোপা জয় করতে পারেনি তারা।
এরপর লেস ব্লুসরা শুধু শক্তিই সঞ্চয় করেছে। দলে মেধাবী খেলোয়াড়ের সংখ্যা এতেই বেড়েছে যে চূড়ান্ত স্কোয়াড গড়তে রিতিমত ঘাম ঝরেছে কোচ দিদিয়ের দেশ্যমের। তারপরও ২৩ সদস্যের বিশ্বকাপগামী চূড়ান্ত স্কোয়াডে তিনি রাখতে পারেননি কিংসলে কোম্যান, এন্থনি মার্টিয়াল এবং আলেক্সান্দ্রে ল্যাকাজেট্টির মত তারকাদের।
দলে ঠাই পাওয়াদের মধ্যে আছেন আতোয়ন গ্রিজম্যান, যিনি লা লীগায় দাপুটে পারফর্মেন্স দিয়ে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সেনসেশন হয়ে আছেন। লিস্টার সিটি ও চেলসির হয়ে পর পর চ্যাম্পিয়ন শিরোপা জয় করা এনগলো কন্টের মতো তারকা। সেই সঙ্গে আছেন সর্বকালের সর্বাধিক দামী খেলোয়াড়দের তিনজন পল পগবা, ওসমানে ডেম্বেলে ও কিলিয়ান এমবাপে।
দিদিয়ের দেশ্যমের দলটি দুই বছর আগের চেয়েও অনেক বেশী শক্তিশালী বলে মনে করেন অনেকেই। তবে দেখার বিষয় হচ্ছে নানান বিতর্ক কাটিয়ে তিনি দলকে একীভুত করতে পারেন কিনা। সইে সঙ্গে মনোসংযোগের ঘাটতি পুরণ করতে পারেন কিনা। গ্রুপ পর্ব পার হবার জন্য একটি দলের যতটুকু সামর্থ্যের প্রয়োজন এর চেয়ে অনেক বেশী শক্তি ধারণ করে আছে ফরাসি দলটি। যে কারণে গ্রুপ শীর্ষ হয়েই পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি দলটির।
অস্ট্রেলিয়া : রাশিয়া বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের জন্য যথেষ্ঠ ঘাম ঝড়াতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। গোল ব্যবধানে সৌদি আরবের চেয়ে পিছিয়ে থাকার কারণে সিরিয়া ও হন্ডুরাসের সঙ্গে প্লে অফের বাঁধা টপকে তবেই রাশিয়ার টিকিট নিশ্চিত করেছে সকারুসরা।
প্রধান কোচ এ্যাঞ্জে পস্তেকোগলু পদত্যাগ করায় বিশ্বকাপে দায়িত্ব পাওয়া বার্ট ফন মারউইক অন্তত দলটিকে নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার আশা করছেন।
এর বাইরে দলটির প্রধান ভিত্তি হচ্ছে তারুন্য নির্ভরতা। এই দলটিই অবশ্য চার বছর আগে অংশ নিয়েছিল ব্রাজিল বিশ্বকাপে। ২০১৫ সালে শিরোপা জয়ের মাধ্যমে দলটি বর্তমানে এএফসির চ্যাম্পিয়ন।
তারপরও সকারুসদের গ্রুপ পর্বের বাঁধা টপকাতে না পরার সম্ভাবনাই বেশী। কারণ ফ্রান্স ও ডেনমার্কের মত পাওয়ার হাউজের সঙ্গে লড়াই করতে হবে তাদের। গ্রুপের আরেক দল পেরুর সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন রাখার কোন সুযোগ নেই। সবকিছু মিলিয়ে গ্রুপের তলানীতেই হয়তো ঠাই হবে অস্ট্রেলিয়ার।
পেরু : ১৯৮২ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপে ফিরেছে পেরু। উত্তর আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে তারা পঞ্চম অবস্থান লাভ করেছিল। যে কারণে প্লে-অফে খেলতে হয়েছে পেরুকে। যেখানে তারা নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের চুড়ান্ত আসরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। ওয়াটার টাইট ডিফেন্স নিয়ে দলটি ২০১৭ সালের আট ম্যাচে মাত্র ৭ গোল হজম করেছে।
এবারের আসরে লড়তে যাবার আগে তাদের সামনে বড় একটি বিপর্যয় হিসেবে এসেছে দলের অধিনায়ক ও তারকা খেলোয়াড় পাওলো গুয়েরেরোর উপর ফিফার নিষেধাজ্ঞা। নিষিদ্ধ ঘোষিত কোকেন সেবনের অভিযোগে তার উপর ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য দেশটি আবেদন করলেও এখনো এর নিস্পত্তি হয়নি। সুতরাং এই নিষেধাজ্ঞার কারণে আসন্ন বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারবেননা এই ফুটবল তারকা।
বাছাই পর্বে পেরু কিছু কিছু ম্যাচে বেশ ইতিবাচক ফলাফল করেছে। এছাড়া আর্জেন্টিনার মতো দলের সঙ্গে দুইবার ড্র করার পাশাপাশি হারিয়েছে উরুগুয়েকে। কোচ রিকার্ডো গ্যারেসা দলটিকে একতাবদ্ধভাবে রেখেছেন এবং রাশিয়ায় ভাল কিছু করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন।
তারপরও দলটির গ্রুপ পর্বের বাঁধা অতিক্রম নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে। দ্বিতীয় অবস্থান পাওয়ার মতও উপযুক্ত নয় পেরু। তবে হয়তো অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে এগিয়ে থেকে তৃতীয় স্থানেই থাকতে হবে দলটিকে।
ডেনমার্ক : ২০১২ সালের ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশীপের পর বড় কোন আসরে খেলা হয়নি ডেনমার্কের। পোল্যান্ড ও মন্টেনেগ্রোর কাছে পরপর দুই হারের পর ১১ ম্যাচে অপরাজিত ছিল ডেনমার্ক। শেষ পর্যন্ত পোল্যান্ডের কাছে শীর্ষস্থান খোয়ানোর কারণে রাশিয়ার টিকিটের জন্য প্লে অফে অংশ নিয়েছে ডেনমার্ককে। যেখানে তারা আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রকে হারিয়ে সফলতা লাভ করে।
ডেনমার্কের বড় অনুপ্রেরনা হচ্ছে যাদুকরী খেলোয়াড় ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন। টোটেনহ্যাম হটস্পারের হয়ে এই মৌসুমে তিনি ১০ গোল কারার পাশাপাশি সহায়তা করেছেন ১১ গোলে। ডেনমার্কের অন্য উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড়দের মধ্যে আছেন লিস্টার সিটির গোল রক্ষক ক্যাসপার, সেভিয়ার ডিফেন্ডার সিমন কেযায়ের ও রোজেনবার্গের স্ট্রাইকার নিকোলাস বেন্ডটনার।
এই দলটির ফ্রান্সকে বিপদে ফেলার মতে যোগ্যতা রয়েছে। যে কারণে গ্রুপভুক্ত পেরু ও অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে এগিয়ে থাকবে ডেনমার্ক।
বাসস/এমএইচসি/১৬৩০/-স্বব