বাজিস-৩ : মিরাশার চাষি বাজার জাজিরার কৃষকদের অর্থনীতির প্রবেশদ্বার

176

বাজিস-৩
শরীয়তপুর-মিরাশর বাজার
মিরাশার চাষি বাজার জাজিরার কৃষকদের অর্থনীতির প্রবেশদ্বার
॥ এস এম মজিবুর রহমান ॥
শরীয়তপুর, ৭ জানুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : জেলার জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নের কাজিরহাট সংলগ্ন শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়কের পূর্ব পাশের্^র বহুমুখী সমবায় ভিত্তিক মিরাশার চাষি বাজারটি ২০০৮ সালে স্থাপিত হয়। একই বছর উপজেলা সমবায় সমিতির রেজিষ্ট্রেশনভুক্তও হয় বাজারটি। মাত্র ৩২ শতক জমির উপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাজারটি শুরু হওয়ার পর থেকে এটি কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠার ১০ বছরের ব্যবধানে বাজারটি সম্প্রসারিত হয়ে এখন ১০০ শতকে পৌছেছে। কৃষকরা সমবায় ভিত্তিতে বাজারটিতে এখন ৭০টি ঘর তুলে তাদের উৎপাদিত পণ্য এখানে বেচা-কেনা করছেন। এখন বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার কৃষি পণ্যে এখানে বেচা-কেনা হয়। কোন মধ্য সুবিধাভোগী না থাকায় কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে বেশী লাভবান হওয়ায় প্রতি বছরই বাজারে বাড়ছে ক্রেতা বিক্রেতার সমাগম। কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষক সমবায় ভিত্তিক এ বাজারটি প্রচলিত কৃষি পণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনাকে ছাপিয়ে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। যা কৃষি বাণিজ্যিকীকরণকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বছরের ছয় মাস কিছু কিছু বেচা-কেনা হলেও নভেম্বর থেকে মার্চ/এপ্রিল পর্যন্ত বাজারের বেচাকেনা থাকে জমজমাট। প্রতিদিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কৃষক, স্থানীয় পাইকার ও দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারের পদচারনায় মুখর থাকে। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এখানে প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি টাকার কৃষিপণ্য বেচা-কেনা হয়। এখানে কোন মধ্য সুবিধাভোগী না থাকায় কৃষকদের পাশা পাশি পাইকাররাও বেশ লাভবান হচ্ছেন। এ বাজারের সবজিসহ কৃষি পণ্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলাসহ রপ্তানী হয় বিদেশেও। তাই মিরাশার চাষি বাজারের খ্যাতি এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।
জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নের মিরাশার গ্রামের কৃষক মো: ফারুক হোসেন মোল্লা বলেন, মিরাশার চাষি বাজারটি আমাদের কাছে আশির্বাদ স্বরূপ। এ বাজারটি প্রতিষ্ঠার আগে আমাদের সবজি দালালদের (মধ্য সুবিধাভোগী) দৌরাত্বের কারণে অনেক কম দামে বিক্রি করতে হতো। আবার দূরের বাজারে গেলে অনেক খাজনাও দিতে হতো। কিন্তু মিরাশার চাষি বাজার বহুমুখী সমবায় সমিতি চালু হওয়ার পর থেকে এখন আমাদের সবজি বিক্রি করতে কোন কষ্ট হয়না। এখন আমরা সবজিসহ বিভিন্ন কৃষি ফসলের দাম অন্য বাজারের তুলনায় বেশি পাাচ্ছি। তাছাড়া আমাদের দিনের কৃষিকাজ শেষ করে বিকেলে যখন কাজ থাকেনা তখন অতি সহজেই এখানে নিয়ে আসতে পারি। ফলে আমাদের ক্ষেতের কৃষি কাজেরও কোন ক্ষতি হয় না।
মিরাশার চাষি বাজার সমবায় সমিতির নিয়মিত পাইকার মো: জলিল মিয়া বলেন, এ বাজারের করলা, বেগুন, টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন, কাচামরিচ, ফুলকপি, বাধাপকি, পটলসহ নানা সবজি নিয়মিত বেচা-কেনা হয়। এ সকল সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে পাশর্^বর্তী জেলা মাদারীপুর, ফরিদপুর, বরিশাল, ভোলাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা কিনে নেয়। এ বাজারে টাটকা সবজি পাওয়া যায় বলে চাহিদাও অনেক বেশি। তাছাড়া নভেম্বর থেকে জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত গড়ে প্রতিদিন ৬৫-৭০ মণ করলা ঢাকার কারওয়ান বাজারে যায়। সেখান থেকে পরে বাছাই করে ২৫-৩০ মণ করলা অন্য বড় পাইকারের মাধ্যমে বাহরাইন, দুবাই ও ইটালীতে রপ্তানী হয়।
বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. রতন মিয়া বলেন, কৃষক ও পাইকারদের হয়রানি বন্ধে বাজার কমিটির লোকজন সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে। কোন অভিযোগ থাকলে আমরা তাৎক্ষণিক তা সমাধান করি। ৩২ শতক জমির প্রথম প্রতিষ্ঠা হলেও সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এখন এ বাজারের পরিধি ১০০ শতক ছাড়িয়ে গেছে। এ বাজারটির সুনাম এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। বছরে গড়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকার কৃষি পণ্য এই বাজারে বেচা কেনা হয়।
জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রশান্ত বৈদ্য বলেন, মিরাশার চাষি বাজারটি কৃষক সমবায় সমিতির মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ায় প্রধানত কৃষকরাই বেশি লাভবান হচ্ছেন। কৃষি পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখতে আমাদের মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাগন কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করছেন। এ বাজারে মধ্য সুবিধাভোগী না থাকায় এখানে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের দামও তুলনা মুলক একটু বেশি পায়। তাই এখানে দিন দিন কৃষকসহ ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ বাজারটি দেশের প্রচলিত কৃষি পণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনাকে দেখাতে পারে এক নব দিগন্তের।
বাসস/সংবাদদাতা/রশিদ/১১০০/নূসী