লিভারপুলের অপরাজয়ের ধারা ভেঙ্গে শিরোপার দৌঁড়ে ফিরল ম্যানসিটি

379

ম্যানচেস্টার (ইউকে), ৪ জানুয়ারি ২০১৯ (বাসস/এএফপি) : ম্যানচেস্টার সিটি একটি ‘ফাইনালে’ জয় পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ক্লাবটির প্রধান কোচ পেপ গার্দিওলা। বৃহস্পতিবার প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলের শ্বাস রুদ্ধকর ম্যাচে সফরকারী লিভারপুলকে ২-১ গোলে হারিয়ে শিরোপার দৌঁড়ে ফেরার পর এ মন্তব্য করেছেন কাতালান কোচ। ইত্তেহাদ স্টেডিয়ামে অনুষ্টিত ম্যাচে জয়ের মাধ্যমে টেবিলের শীর্ষ পয়েন্টধারীদের অপরাজিত থাকার ধারাবাহিকতাটিও ভেঙ্গে দিল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
সম্প্রতি ক্রিস্টাল প্যালেস ও লিস্টার সিটির কাছে পরপর পরাজয়ে পিছিয়ে পড়েছিল সিটেজনরা। ফলে ১৯৯০ সালের পর প্রথম শিরোপা জয়ের পথে তাদেরকে অনেকখানিই ছাড়িয়ে যায় লিভারপুল। ৭ পয়েন্টের বিশাল এক ব্যবধান রচনা করেছিল পয়েন্ট টেবিলে।
তবে গতকালের এই জয়ের ফলে জার্গেন ক্লপের দলের চেয়ে এখন মাত্র চার পয়েন্টে পিছিয়ে রয়েছে চ্যাম্পিয়নরা। শেষ বাঁশি বাজার মাত্র ১৮ মিনিট আগে লেরয় সানের গোলটি পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে সহায়তা করে সিটিজেনদের। এর আগে সার্জিও এগুইরোর প্রথামার্ধে দেয়া গোলটি দ্বিতীয়ার্ধে শোধ করে দেন লিভারপুল তারকা রবার্তো ফিরমিনো।
খেলা শেষে সিটি কোচ গার্দিওলা বলেন, ‘এটি ছিল আমাদের জন্য ফাইনাল ম্যাচ। কারণ হেরে গেলে শিরোপার প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকেই ছিটকে পড়তে হতো। এখন আমরা তাদের চেয়ে ৪ পয়েন্টে পিছিয়ে আছি। তাই আগামীতেও ব্যাপক লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। তবে এই জয় আমাদের দারুনভাবে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।’
কাতালান কোচ বলেন, ‘আমি ছেলেদের নিয়ে গর্বিত। শুধু আজকের ম্যাচের কারণে নয়, চার ম্যাচের মধ্যে দুটিতেই আমরা হেরেছি। কিন্তু বিগত ১৬ মাস ধরে তা যা করে চলেছে তা ভুলে গেলে চলবে না।’
লীগে এই মৌসুমে এর আগে পরস্পরের মুখোমুখি না হওয়া দল দুটির আরেকটি ম্যাচ এখনো বাকি রয়েছে। সেটি হবে লিভারপুলের মাঠে। তবে গত আসরে ১০০ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপা জয় করা সিটিজেনদের কাছে হেরে এখন উল্টো চাপের মধ্যে পড়ে গেছে লিভারপুল। কোচ জার্গেন ক্লপ বলেন,‘ ম্যানসিটির বিপক্ষে দুই ম্যাচ শেষে কেউ যদি আমাকে বলে আমরা ৪ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছি তাহলে তাকে আমি টাকা দিতাম। আমরা কখনো দল হিসেবে তাদের সঙ্গে জয় পাইনি। তাই যতটুকু সম্ভব শক্তিমত্তা দিয়েই আমাদেরকে মৌসুম শেষ করতে হবে। আমরা এখনো কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছি।’
ম্যাচের ১৯তম মিনিটে নিশ্চিত গোল খাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছিল সিটি। মোহাম্মদ সালাহর পাস থেকে বল পেয়ে সাদিও মানের নেয়া শটের বলটি ফিরে আসে বারে লেগে। এ সময় সিটি ডিফেন্ডার জন স্টোনস বলটি ক্লিয়ার করতে গেলে নিজ দলের গোল রক্ষক এডানসনের গায়ে লেগে সেটি নিজেদের জালের দিকেই গড়িয়ে গড়িয়ে এগুতে থাকে। পরে গোল লাইন অতিক্রম করার আগেই তিনি বলটিকে বিপদমুক্ত করেন।
এরপর মোহাম্মদ সালাহকে বিপজ্জনকভাবে বাঁধা দেয়ার অপরাধে সিটি অধিনায়ক ভিনসেন্ট কোম্পানিকে কার্ড দেখানো থেকে বিরত থাকেন কর্তব্যরত রেফারি এ্যান্থনি টেইলর। কারণ আগেই হলুদ কার্ড পাওয়া এই তারকা যদি ফের কার্ড দেখতেন তাহলে তাকে মাঠ ছাড়তে হতো।
ম্যাচের ৪০তম মিনিটে এসে প্রথম গোলের দেখা পায় ম্যানচেস্টার সিটি। বার্নার্ডো সিলভার পাস থেকে বল পেয়ে বাঁ পায়ের জোড়ালো শটে লক্ষ্য ভেদ করে দলকে এগিয়ে দেন ক্লাবের আর্জেন্টাইন তারকা সার্জিও এগুইরো (১-০)। এটি ছিল চলতি আসরে তার ১০ম গোল। ফলে ১-০ গোলের লীড নিয়েই বিরতিতে যায় স্বাগতিক দল।
বিরতির পরও আক্রমনাত্মক মেজাজে ছিল উভয় দল। ম্যাচের ৬৪তম মিনিটে গোলটি পরিশোধ করে সফরকারীরা। আলেক্সান্ডার আর্নন্ডের ক্রসের বল আড়াআড়ি ভাবে হেডে গোলপোস্টের সামনে পাঠিয়ে দেন এন্ড্রু রবার্টসন। সেটি প্রতিহত করতে ব্যর্থ হন সিটি গোল রক্ষক। ফলে দৌড়ে আসা ফিরমিনো ঝাপিয়ে পড়ে নিচু হেডে জালে জড়ান বল (১-১)।
ম্যাচের ৭২তম মিনিটে রাহিম স্টালিংয়ের বাড়ানো বলটি ডি বক্সের মধ্যে পেয়ে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বাঁ পায়ের নীচু শট নেন লেরয় সানে। দ্বিতীয় পোস্টের ভেতরের কানায় লেগে বলটি জড়িয়ে যায় লিভারপুলের জালে (২-১)। এতেই উন্মাদনায় মেতে উঠে স্বাগতিক দর্শকরা।
বাকি সময় এগুইরো, স্টার্লিং ও সালাহ গোলের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে না পারায় ২-১ ব্যবধানেই শেষ হয় ম্যাচটি। এই জয়ে ৫০ পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে ম্যানচেস্টার সিটি। সমান সংখ্যক ম্যাচ থেকে ৫৪ পয়েন্টের সংগ্রহ নিয়ে টেবিলের শীর্ষে রয়েছে লিভারপুল। ৪৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে নেমে গেছে টোটেনহ্যাম হটস্পার্স। ৪৪ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে চেলসি।