বাজিস-১ : বরগুনায় বাঁশ-বেত শিল্পে স্বচ্ছলতা ফিরেছে ঋষি পরিবারগুলোতে

194

বাজিস-১
বরগুনা-বাঁশ
বরগুনায় বাঁশ-বেত শিল্পে স্বচ্ছলতা ফিরেছে ঋষি পরিবারগুলোতে
বরগুনা, ৪ জানুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : পূর্বপুুরুষ থেকে আজ অবধিবাঁশ ও বেত দিয়ে গৃহস্থলির কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র তৈরি করে আসছে ঋষি পল্লীর লোকেরা। আর তা বিক্রি করে চলে তাদের জীবিকা। গত কয়েক বছরে বেত-বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা নতুন করে বেড়েছে। তাই আর্থিক ভাবে স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়েছে তারা।
বরগুনার বিভিন্ন গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার বাঁশ ও বেত শিল্পের কাজ করে আসছে। এতে তাদেও স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ আর্থিক সক্ষমতাও বেড়েছে। এদের মধ্যে তালতলী উপজেলার পঁচাকোড়ালিয়া ও ছোটবগী ইউনিয়নের ৩ গ্রামেই রয়েছে এমন দেড়শ’ ঋষি পরিবার।
এখানকার কারিগররা জানান, গত ৩ দশক আগে বাঁশ ও বেতের তৈরী জিনিসপত্রের তেমন চাহিদা না থাকায় কোনো রকমেই জীবন-যাপন করতে হতো ঋষিপল্লীর লোকদের। তাদের সন্তানরা শিক্ষাক্ষেত্রে ছিল অনেক পিছিয়ে। ৮০’র দশকে উপকূলীয় ওই অঞ্চলে চিংড়ি ও মাছ চাষ শুরু হওয়ার পর থেকে বাড়তে থাকে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা। উৎপাদন ও সরবরাহকারীদের চাহিদা অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ করে থাকে ঋষি পল্লীর কারিগররা। ঘরে বসেই নারী ও পুরুষ মিলে তৈরি করেন জিনিসপত্র।
বাশেঁর তৈরী জিনিেিসর মধ্যে ঝুড়ি, ডালা, চাঁই, কুলা, চালুনি, সাজি, ধানের মোড়া আবার বেত দিয়ে তৈরী হচ্ছে বসার মোরা, চেয়ার, পোলো, ধান-চাল মাপার ছোট পাত্র বিশেষ ইত্যাদি।
আমতলী শহরে প্রতি হাটের দিনে এসব মালামাল বিক্রি করতে আসা রণজিৎ দাস জানিয়েছেন, প্লাস্টিকের মালামালের আগ্রাসনে তাদের তৈরি মালামালগুলোর চাহিদা কমলেও তারা টিকে আছে।
ঋষি পল্লীর পরিবারগুলোতে সবাই কাজ করে। কেউ ফাঁড়ে (চেরাই) বাঁশ, কেউ আবার সুন্দর করে সাইজ করে বাঁশের শলাকা। এক কথায় পরিবারের সবাই মিলে কাজ করে তৈরি করেন সুন্দর ও মজবুত জিনিসপত্র। তৈরিকৃত জিনিস বিক্রি করে পরিবারের ভরণপোশন যোগান দেয়ার পাশাপাশি সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলছেন সন্তানদের।
বগী গ্রামের সমির চন্দ্র দাসসহ আরও কয়েকজন জানান, গতকয়েক বছরে বাঁশের তৈরি জিনিস পত্রের চাহিদা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একসময় বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিস শুধুমাত্র গৃহ¯া’লির কাজেই ব্যবহৃত হতো। এখন চিংড়ি, কাঁকড়া ও মাছ সরবরাহের কাজে বাঁশের ঝুড়ির প্রয়োজন হয়, আর প্রয়োজনীয় ঝুড়িগুলো আমাদেরকে সরবরাহ করতে হয়। ফলে জিনিসের চাহিদা বাড়ার কারণে জীবন-মান ও উন্নত হয়েছে। দুই ছেলে মেয়েই বর্তমানে লেখা পড়া করছে। এভাবেই প্রায় প্রতিটি পরিবারের ছেলে মেয়েরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠছে। পুঁজির অভাবে কাঁচা মাল সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেকটাই বেগ পেতে হয়। বিলুপ্ত প্রায় এ শিল্পের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি সহায়তার প্রয়োজন বলে মনে করছেন ঋষি পল্লীর পরিবারগুলো।
বরগুনা সমাজ সেবা বিভাগের কর্মকর্তা আজম চৌধুরি জানান, সমাজসেবা অধিদপ্তর এদের অনেককেই ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। তবে সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে পারলে বঁশ-বেত শিল্প আরও প্রসার লাভ করবে।
বরগুনার জেলা চেয়ারম্যান (সাবেক সাংসদ) মো. দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, বাঁশ-বেতের মালামাল বিক্রির জন্য জেলার ৬টি উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাজারে তাদের জায়গা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সহযোগিতা করা হবে।
বাসস/সংবাদাদতা/১৫২৫/মরপা