বাসস ক্রীড়া-৫ : প্রথমবারের মত সিরিজ জিততে চায় ভারত, হার এড়াতে মরিয়া অস্ট্রেলিয়া

213

বাসস ক্রীড়া-৫
ক্রিকেট-সিডনি টেস্ট
প্রথমবারের মত সিরিজ জিততে চায় ভারত, হার এড়াতে মরিয়া অস্ট্রেলিয়া
সিডনি, ১ জানুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : প্রথম তিন ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে ভারত। চার ম্যাচ টেস্ট সিরিজে এখন বাকী একটি টেস্ট। চতুর্থ ও শেষ টেস্ট জয় বা ড্র করলেই সিরিজ নিশ্চিত হবে ভারতের। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবারের মত সিরিজ জয়ের সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না টিম ইন্ডিয়া। তাই জয়কে প্রধান লক্ষ্য করেই সিডনিতে খেলতে নামবে ভারত। অপরদিকে, সিরিজ হার এড়াতে নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি উজার করে দিতে মরিয়া অস্ট্রেলিয়া। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আগামী ৩ জানুয়ারি চতুর্থ ও শেষ টেস্টটি শুরু হবে বাংলাদশ সময় ভোর সাড়ে পাঁচটায়।
দলের সেরা দুই খেলোয়াড় স্টিভেন স্মিথ-ডেভিড ওয়ার্নার না থাকায় ভারতের বিপক্ষে নিজেদের কন্ডিশনে ফেভারিটের তকমাটা পায়নি অস্ট্রেলিয়া। তাই ভারতের সমান অবস্থানে থেকেই টেস্ট সিরিজ শুরু করেছিলো অসিরা। স্মিথ-ওয়ার্নার না থাকার পার্থক্য প্রথম ম্যাচেই বুঝিয়ে দেয় ভারত। ব্যাট-বল হাতে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করে ৩১ রানে ম্যাচ জিতে নেয় টিম ইন্ডিয়া।
সিরিজে দুর্দান্ত শুরুর পর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় ভারতের। অন্যদিকে, সিরিজে ফেরার জন্য তেতে ছিলো অস্ট্রেলিয়া। অ্যাডিলেডে না পারলেও পার্থের নতুন ভেন্যুতে ঠিকই জ্বলে উঠে স্বাগতিকরা। বোলারদের বিধ্বংসী রুপের সামনে অসহায় আত্মসমর্পন করেন ভারতের ব্যাটসম্যানরা। ফলে ১৪৬ রানের বড় ব্যবধানে ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা আনে অস্ট্রেলিয়া।
ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের এমন অসহায়তে অধিনায়ক কোহলির মনে ক্ষোভের জন্ম নেয়। পার্থ টেস্ট শেষে তিনি বলেন, ‘ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ব নিতে হবে। নয়তো ভালো কিছুর আশা ছেড়ে দিতে হবে।’
মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টে বড় পরিবর্তন এনে সিরিজের তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামে ভারত। দুই ওপেনার মুরালি বিজয় ও লোকেশ রাহুলকে একাদশের বাইরে রাখতে বাধ্য হয়। প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে নেমে ৪ ইনিংসে বিজয় ৪৯ ও রাহুল ৪৮ রান করেন। ফলে তৃতীয় টেস্টের জন্য তাদের বিবেচনা করেনি ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট।
মেলবোর্নে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমেই ওপেনার হিসেবে সুযোগ পান মায়াঙ্ক আগারওয়াল। শুরুতে তার সঙ্গী হন হানুমা বিহারি। দুই ইনিংসেই নিজের জাত চিনিয়েছেন আগারওয়াল। প্রথম ইনিংসে ৭৬ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪২ রানের দায়িত্ব পুর্ন ইনিংস খেলেন আগারওয়াল। আর ঐ টেস্টেই ব্যাট হাতে জ্বলে উঠেন ব্যাটসম্যানরা। তাই প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটে ৪৪৩ রানের বড় সংগ্রহ পায় ভারত। এরপর বোলারদের নৈপুন্য ভারতকে টেস্ট জয়ের স্বাদ দেয়। বিশেষভাবে ডান-হাতি পেসার জসপ্রিত বুমরাহ। ম্যাচে ৯ উইকেট নেন তিনি। তাই ম্যাচ সেরার পুরস্কারও পান এই পেসার। ভারত ম্যাচ জিতে ১৩৭ রানের বড় ব্যবধানে। ফলে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে বিরাট কোহলির দল।
সিরিজে এগিয়ে থাকায় বেশ ফুরফুরা মেজাজে ভারত। তবে সিরিজের শেষ টেস্টে আরও ভালো পারফরমেন্স করতে মুখিয়ে আছে তারা। কারন অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবারের মত সিরিজ জয়ের কাজটা এবারই সাড়তে চায় ভারত। ১৯৪৭ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ খেলছ ভারত। আজ অবধি কোন টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি টিম ইন্ডিয়া।
তবে এবার প্রথমবারের মত সিরিজ জয়ের স্বাদ নিতে চায় দল বলে জানালেন ভারতের সহ-অধিনায়ক আজিঙ্কা রাহানে, ‘আমরা কখনও অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জিততে পারিনি। এবার দারুন এক সুযোগ তৈরি হয়েছে আমাদের সামনে। জয় বা ড্র হলেই সিরিজ জিতে নিতে পারবো আমরা। এই সুযোগ যেভাবেই কাজে লাগাতে চাই। তবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য ম্যাচ জয়। কারন আমাদের সবার মধ্যে আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি। এখানে আমরা জিততে পারি, সেটি প্রমান করেছি। তাই আর একটি টেস্টে ভালো খেলতে পারলেই সিরিজ জিতে নিতে পারবো। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ জয় করা অনেক বড় ব্যাপার। এটি ভারতের ক্রিকেটের বড় অর্জনই হবে।’
২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় এখন আর সিরিজ জয় করা সম্ভব নয় অস্ট্রেলিয়ার। তবে সিরিজ হার এড়ানোর সুযোগ রয়েছে তাদের। সে জন্য সিডনি টেস্টে জিততেই হবে, জয় ছাড়া কোন পথ খোলা নেই অসিদের। তাই পুরো দল ঘুড়ে দাঁড়াতে প্রস্তুত বলে জানালেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার জশ হ্যাজেলউড, ‘আমরা এখন ব্যাকফুটে। তবে আমরা সাহস হারায়নি। পুরো দল নিজেদের উপর আস্থা রেখেছে। কারন আমরা জানি, কিভাবে লড়াই করতে হয় এবং সিরিজ বাঁচাতে হয়। অতীতেও এমন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছি আমরা। পার্থে যেভাবে ভারতকে ঘায়েল করেছি, ঠিক সেভাবেই আমরা ফিরে আসবো এবং সিরিজ হার এড়াবো।’
ভারত দল : বিরাট কোহলি (অধিনায়ক), মায়াঙ্ক আগারওয়াল, রবীচন্দ্রন অশ্বিন, কুলদীপ যাদব, ভুবেনশ্বর কুমার, হার্ডিক পান্ডিয়া, পার্থিব প্যাটেল, লোকেশ রাহুল, মুরালি বিজয়, চেতেশ্বর পূজারা, আজিঙ্কা রাহানে, হানুমা বিহারি, ঋসভ পান্থ (উইকেটরক্ষক), রবীন্দ্র জাদেজা, মোহাম্মদ সামি, উমেশ যাদব, ইশান্ত শর্মা ও জসপ্রিত বুমরাহ।
অস্ট্রেলিয়া দল : টিম পেইন (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), এ্যারন ফিঞ্চ, পিটার হ্যান্ডসকম্ব, মার্কাস হ্যারিস, ট্রাভিস হেড, উসমান খাজা, মার্নাস লাবুশনেগে, মিচেল মার্শ, নাথান লিঁও, শন মার্শ, প্যাট কামিন্স, পিটার সিডল, মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজেলউড।
বাসস/এএমটি/১২০০/স্বব