২০১৮ সালের সেরা পাঁচ ওয়ানডে দল

4578

দুবাই, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : ২০১৮ সালে তৃতীয় সেরা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেট দল। সাফল্যের বিচারে সেরা দলের স্থানটি করে নিয়েছে ইংল্যান্ড। সেরা পাঁচ-এ রয়েছে ভারত আফগানিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা দলও।
১. ইংল্যান্ড : ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর দুর্দান্ত ক্রিকেটে খেলেছে ইংল্যান্ড। দারুনভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দলটি। তারই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে ২০১৮ সালেও। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ৪-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতে বছর শুরু করে ইংলিশরা। সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচই জিতেছিলো ইংল্যান্ড। চতুর্থ ম্যাচ হারলেও, জয় দিয়ে সিরিজ শেষ করতে পারে তারা।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ শুরু করে ইংল্যান্ড। সিরিজটি জিততে বেশ ঘাম ঝড়াতে হয় তাদের। তারপরও পঞ্চম ওয়ানডে জিতে সিরিজ জয় করে নেয় ইয়োইন মরগানের দল।
বছরের শুরুতে দু’টি দুর্দান্ত ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর এডিনবার্গে স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড। ওয়ানডে র‌্যাংকিং-এর নিচের সারির দল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সহজ জয়ের আশাই করেছিলো ইংল্যান্ড। কিন্তু ইংলিশদের স্বপ্ন চুরমার করে দেয় স্কটিশরা। মাত্র ৬ রানে ম্যাচ জিতে নেয় স্কটল্যান্ড। প্রথমে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ৩৭১ রান করে স্কটল্যান্ড। জবাবে ৩৬৫ রান তুলে অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড।
স্কটল্যান্ডের কাছে হারের স্মৃতি নিয়ে নিজেদের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামে ইংল্যান্ড। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে অসিদের হোয়াইটওয়াশ করে ইংলিশরা। তাই স্কটিশদের কাছে হারের স্মৃতি কিছুটা হলেও ভুলে যায় ইংল্যান্ড।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়ে ইংল্যান্ড। ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৪৮১ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় তারা। এরপর ২৪২ রানের জয় পায় ইংলিশরা। পুরো সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার উপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে ইংল্যান্ড।
অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়শের পর ভারতের মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড। ওয়ানডে ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিধর দল ভারত। তাদের বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু করে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে ইংল্যান্ড। ইংলিশদের জয়ে প্রধান ভূমিকা রাখেন জো রুট, আদিল রশিদ ও মঈন আলি।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দু’বার, নিউজিল্যান্ড-ভারতের বিপক্ষে একটি করে সিরিজ জয়ের পর দুর্দান্তভাবে বছর শেষ করেছে ইংল্যান্ড। শ্রীলংকার মাটিতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৩-১ ব্যবধানে জিতে মরগান-রুটরা। এ বছর ওয়ানডেতে এমন সাফল্য আগামী বছর দেশের মাটিতে বিশ্বকাপে ভালো পারফরমেন্স করতে উৎসাহী করবে ইংল্যান্ডকে।
২. ভারত : ওয়ানডে ফরম্যাটে বছরের শুরুটা দুর্দান্তভাবে করে ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে টেস্ট সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারলেও, ওয়ানডেতে বিরাটা কোহলির দল ছিলো দুর্দান্ত। ছয় ম্যাচের সিরিজ ৫-১ ব্যবধানে জিতে তারা। ব্যাট হাতে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিরাট কোহলি। ছয় ম্যাচে তিন সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।
তবে ইংল্যান্ডের মাটিতে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি ভারত। জয় দিয়ে সিরিজ শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত ২-১ ব্যবধানে হারে টিম ইন্ডিয়া।
নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে ছাড়াই এশিয়া কাপে খেলতে নামে ভারত। দলের নেতৃত্বে ছিলেন রোহিত শর্মা। অবশ্য প্রথম ম্যাচে হংকং-এর কাছে বড় লজ্জা থেকে রক্ষা পায় ভারত। ২৮৬ রানের টার্গেট পেয়ে এক পর্যায়ে বিনা উইকেটে ১৭৪ রান তুলে ফেলে হংকং। তবে প্রথম উইকেট পতনের পর এলোমেলো হয়ে পড়ে হংকং। ভারতীয় বোলারদের তোপে ৮ উইকেটে ২৫৯ রান পর্যন্ত যেতে সক্ষম হয় হংকং। তারপরও ক্রিকেট বিশ্বে হংকং-এর পারফরমেন্স প্রশংসা ঝড়েছে সর্বত্র।
স্বস্তির জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর পর দাপটের সাথে এশিয়া কাপ ফাইনালে নাম লেখায় ভারত। প্রতিপক্ষ হিসেবে এবার ভারতের সামনে বাংলাদেশ। টাইগারদের ২২২ রানে আটকে দিয়ে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখে ভারত। কিন্তু এত সহজে ছেড়ে দেয়ার দল যে নয় বাংলাদেশ, সেটি আবারো প্রমাণ করে মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করে ৩ উইকেটে ম্যাচ ম্যাচ জিতে শিরোপা ঘরে তুলে ভারত।
বছরের শেষটাও ভালো হয়েছে ভারতের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৩-১ ব্যবধানে জিতে ভারত। এ বছর ২০ ম্যাচে ১৪ জয়ের স্বাদ নেয় টিম ইন্ডিয়া। যা এ বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয়। তবে জয়ের হার হিসেবে সর্বোচ্চ। ৭৫ শতাংশ ম্যাচ জিতেছে ভারত।
৩. বাংলাদেশ : চলতি বছরে তৃতীয় সর্বোচ্চ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। বছরের শুরুতে শ্রীলংকা-জিম্বাবুয়েকে নিয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম চার ম্যাচের তিনটিতেই জিতে টাইগাররা। কিন্তু ফাইনালে ভাগ্য সাথে ছিলো না স্বাগতিকদের। লংকানদের কাছে শিরোপা জয়ের ম্যাচে হারতে হয় মাশরাফির দলকে।
জানুুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের পর জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নামে বাংলাদেশ। ফেভারিট হিসেবে খেলতে নেমে জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করে টাইগাররা। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচ হেরে যায় মাশরাফির দল। তবে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ঠিকই বাজিমাত করে বাংলাদেশ। তামিম ইকবালের ১০৩ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৬৭ রানের সুবাদে ১৮ রানে ম্যাচ জিতে সিরিজ দখলে নেয় মাশরাফির দল।
দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোর চাইতে এশিয়া কাপটি ছিলো বাংলাদেশের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ। কারন ২০১২ সালে ফাইনালে গিয়ে শিরোপা ধরা করা হয়নি তাদের। তাই এশিয়া কাপের ১৪তম আসরে শিরোপার বন্ধ্যাত্ব ঘোচানো ছিলো বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য। লক্ষ্য পূরণের জন্য ফাইনালেও পৌঁছে যায় টাইগাররা। কিন্তু এখানেও ভাগ্য সহায় হয় না মাশরাফির দলের। ভারতের কাছে শেষ বলে ম্যাচ হারে বাংলাদেশ।
আবারো এশিয়া কাপের শিরোপা জিততে না পারার দুঃখে পুড়তে হয় বাংলাদেশকে। তবে ভালোভাবে বছর শেষ করতে পারে টাইগারার। দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জয়লাভ করে বাংলাদেশ।
চলতি বছর ২০ ম্যাচে অংশ নিয়ে ১৩টি জয় ৭টি হারের স্বাদ নেয় বাংলাদেশ। শতকরা জয়ের হার ৬৫ শতাংশ।
৪. আফগানিস্তান : চলতি বছর জয়ের দিক দিয়ে চতুর্থস্থানে আছে আফগানিস্তান। ২০ ম্যাচের ১২টিতে জয় ও ৭টিতে হারে তারা। শতকরা জয়ের হার ৬৩ দশমিক ৫০। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও সিরিজ জিতে নেয় আফগানরা। এশিয়া কাপে প্রথম পর্বের বাধা পেরিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে পারে আফগানিস্তান। সেখানে ভারতের সাথে ম্যাচও তারা টাই করে ।
৫. দক্ষিন আফ্রিকা : ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়ে চলতি বছর যাত্রা শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজে ভারতের কাছে তুলোধুনো হয় প্রোটিয়ারা। ছয় ম্যাচের সিরিজে ৫-১ ব্যবধানে হারে তারা।
ভারতের কাছে হারের পর ঘুরে দাঁড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর তিনটি ওয়ানডে সিরিজ খেলে তারা। তিনটিই জিতে নেয় প্রোটিয়ারা। শ্রীলংকার বিপক্ষে ৩-২ ব্যবধানে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে দক্ষিণ আফ্রিকা।
চলতি বছর ১৭ ম্যাচে ৯টিতে জয় ও ৮টিতে হার মানে দক্ষিণ আফ্রিকা।