ভোলায় এলজিইডি’র ৮৪০ কোটি টাকার উন্নয়ন

362

॥ হাসনাইন আহমেদ মুন্না ॥
ভোলা, ২৯ মে, ২০১৮ (বাসস) : জেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে গত ৮ বছরে (২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর) ৮৪০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এসব উন্নয়নমূলক কাজের মধ্যে ব্রিজ নির্মাণ, বিভিন্ন সড়ক নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন, ভূমি অফিস নির্মাণ, সাইক্লোন সেল্টার, স্কুল, কালভার্ট নির্মাণ, হাটবাজার উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ রয়েছে। বিশেষ করে সড়ক উন্নয়নের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মানুষের জীবন মানের অনেক পরিবর্তন এসেছে। গ্রামীণ জনপদের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আজ পাকা সড়ক। এছাড়া ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণে সহজ হয়েছে যাতায়াত ব্যবস্থা।
এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বাসস’কে বলেন, গ্রামগুলোতে এলজিইডি’র সড়ক নির্মাণের ফলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষি পন্য সহজেই বাজারজাত করা যাচ্ছে। এতে করে কৃষকরা আগের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন। গত ৮ বছরে সরকারের ব্যাপক উন্নয়নে জেলার সকল বাজার-হাটেই যোগাযোগ নির্বিঘœ হয়েছে। বিশেষ করে সদর উপজেলায় কোন কাঁচা রাস্তা নেই বললেই চলে। মানুষের জীবন মানের অনেক উন্নতি হয়েছে। এর পিছনে এলজিইডির উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে তিনি মনে করেন।
এলজিইডি সূত্র জানায়, এসব উন্নয়ন কাজের মধ্যে ২০০৯-১০ অর্থবছরে হয়েছে ৫৯ কোটি ৮৮ লাখ ২৩ হাজার টাকার উন্নয়ন। পরের বছর ৮৮ কোটি ৮৭ লাখ ৯২ হাজার টাকার কাজ হয়েছে। ২০১১-১২ বছরে হয়েছে ১০২ কোটি ৬৩ লাখ ১৩ হাজার টাকার উন্নয়ন কাজ। ২০১২-১৩ সালে হয়েছে ৯৮ কোটি ৭২ লাখ ৩৯ হাজার টাকার। পরের বছর ১১০ কোটি ৭২ লাখ ২৬ হাজার টাকার। একইভাবে ২০১৪-১৫ বছরে ১২৫ কোটি ৭৫ লাখ ২৬ হাজার টাকার কাজ হয়েছে। ২০১৫-১৬ বছরে ১২৭ কোটি ২ লাখ ৬ হাজার টাকার উন্নয়ন হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে হয়েছে ১১০ কোটি ৭০ লাখ ৩৯ হাজার টাকার কাজ। আর চলতি অর্থবছরে প্রায় ১১৫ কোটি টাকার কাজ সম্পন্নের পথে রয়েছে।
জেলা এলজিইডি’র কর্মকর্তারা জানান, এসব উন্নয়ন কাজের উল্লেখযোগ্য হলো প্রায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গজারিয়া-মানিকা ভায়া দুলারহাট-আঞ্জুরহাট সড়কে মায়া নদীর ওপর ৩৭৮ দশমিক ৪০ মিটার ব্রিজ নির্মাণ। ২০১০-১১ অর্থবছরে লালমোহন, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, ভোলা সদর ও চরফ্যাসন উপজেলায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে ১১টি সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ। ভোলা বাইপাস-শান্তিরহাট-ভেলুমিয়া ইউপি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে। ২০১২-১৩ বছরে প্রায় সারে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নাজিরপুর-পূর্বচর উম্বে ভায়া ফরাসগঞ্জ ইউপি সড়কের চেইনেজে ৩৮০০ মিটারে ২০২ দশমিক ০৫ মিটার গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ। ২০১৩-১৪ বছরে নির্মাণ করা হয়েছে ৪২টি স্কুল কাম সাইক্লোন সেল্টার প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে। ১ কোটি টাকায় বোরহানউদ্দিন-সিকদার হাট-মনিরাম-মির্জাকালু সড়ক উন্নয়ন করা হয়েছে।
একইসাথে ২০১৫-১৬ সালে সদরের দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের বাংলাবাজার খায়ের হাট-শান্তিরহাট-বটতলা নতুন হাট সড়কে ২৭০০ মিটার চেইনেজে ৩৯ মিটার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকায়। ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষক সেবা কেন্দ্র স্থাপন ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ পাইলট প্রকল্পের আওতায় সদরের বাপ্তা ইউনিয়নে কৃষক সেবা কেন্দ্রের ভবন ও অবকাঠামো নির্মাণ হয়েছে পৌনে ২ কোটি টাকায়। কাচিয়া সিকদারহাট সড়ক উন্নয়ন হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকায়। ২ কোটি ৮৭ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে চরফ্যাসনের চরকুকরী-মুকরী ইউপি অফিস আমিনবাজার খালে ২৬শ’ ৫৫ মিটার চেইনেজে ৩০.০০ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ।
অন্যদিকে সদরের বাঘমারা আরএইচডি ব্যাংকের হাট ভায়া শরীফ খায়ের হাট সড়ক উন্নয়ন হয়েছে ১ কোটি ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৫১৬ টাকা ব্যয়ে। ৪০ কোটি টাকায় বাঘমারা ব্রিজ নির্মাণ। রাজাপুর ও ইলিশা ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ হয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা ব্যয়ে। চরফ্যাসনে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ৩টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন হয়েছে।
জেলা এলজিইডি’র জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুস সালাম বাসস’কে বলেন, পূর্বে যাতায়াতের অনুপযোগী দুর্গম এলাকায় ব্রিজ, কালভার্ট ও সড়ক নির্মাণে মানুষের চলাচল অনেক সহজ হয়েছে। গ্রামগঞ্জে সড়ক যোগাযোগের ফলে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জীবন মান উন্নত হয়েছে। এখন মানুষ গ্রামে থেকেই শহরের সুবিধা পাচ্ছে। প্রাইমারি স্কুল নির্মাণ হওয়ায় ঝড়ে পরা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমছে ও শিক্ষার মান বাড়ছে। বহু সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ করায় দুর্যোগকালীন সময়ের আতংকও কেটে যাচ্ছে মানুষের বলে জানান তিনি।
এদিকে এলজিইডি’র মাধ্যমে বিভিন্ন নিত্য নতুন সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণ হওয়ায় মানুষের জীবনযাত্রা যেমন সহজ হয়েছে তেমনি তাদের আর্থিক অবস্থারও পরিবর্তন হয়েছে। সড়ক হওয়াতে গ্রামের জমির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণে মানুষের কষ্ট লাঘব হয়েছে। সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়ন এলাকার কলেজ ছাত্র মো. সোলায়মান ও রফিক হোসেন জানান, তারা বাংলাবাজার ফাতেমা খানম কলেজের ছাত্র। দুই বছর আগেও যখন ব্রিজ ছিল না তখন খেয়া নৌকায় করে কলেজে আসতে হত। এছাড়া বর্ষার সময় নৌকা পাড়াপাড়ে চরম দুর্ভোগ হতো। এখন ব্রিজ হওয়াতে তাদের সেই দুর্ভোগ কেটে গেছে। বোরহানউদ্দিন উপজেলার বাসিন্দা কৃষক লোকমান আলী ও রহমত ব্যাপারী বলেন, সড়ক নির্মাণ হওয়াতে এখন মাঠ থেকেই সরাসরি তাদের ফসল বিক্রি করতে পারছেন।