বাজিস-১ : মেহেরপুরে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশবাগান

287

বাজিস-১
মেহেরপুর-বাঁশ বাগান
মেহেরপুরে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশবাগান
॥ দিলরুবা খাতুন ॥
মেহেরপুর, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : জেলা থেকে এখন হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশবাগান। মেহেরপুর সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার গ্রামাঞ্চল থেকে ধীরে-ধীরে বিলীনের পথে অনেক বাঁশবাগান। উজাড় হওয়া জায়গাগুলো পরিণত হয়েছে বসত বাড়ি ও কৃষি জমিতে। কয়েক বছর আগেও এসব অঞ্চলে বিভিন্ন গ্রামের আনাচে-কানাচে প্রচুর বাঁশবাগান দেখা যেত। কিন্তু গ্রাম এলাকায় সেই চিরচেনা চিত্র এখন আর অহরহ চোখে পড়ে না। দিন বদলের সাথে-সাথে গ্রাম বাংলার চিত্রগুলোও বদলে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষ ঘর বাড়ি, গবাদি পশুর বাসস্থান, নদী পারা পারে সাঁকো তৈরি ছাড়াও গৃহস্থালীয় নানা কাজে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার করতো বাঁশ। বর্তমানে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে মানুষের চিন্তা ধারাও আমূল পরিবর্তন এসেছে। মানুষ এখন প্রয়োজনের তাগিদেই নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্থ হচ্ছে। বাঁশ দিয়ে ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করা হবে এমন কল্পনা এখন করতে পারছেন না গ্রামবাংলার মানুষ। সময় ও সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে বাঁশের জায়গা দখল করেছে ইট- পাথরসহ রড- সিমেন্টের খুঁটি। রড সিমেন্ট ও ইট-পাথরের মূল্য বেশি হলেও সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং অধিক টেকসই নিরাপত্তার কারণে ঘর বাড়ি নির্মাণে বাঁশের ব্যবহার অনেকটা কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে ওইসব কাজে বাঁশের গুরুত্ব বিত্তবান মানুষের কাছে আগের মত না থাকলেও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে বাঁশের কদর একেবারেই কমেনি। নিজস্ব প্রয়োজনে মানুষ আগে বাঁশ চাষে আগ্রহী ছিল। এক সময় গ্রাম এলাকার প্রায় প্রতি কৃষকের বসতভিটায় বাঁশবাগান ছিল। কিন্তু এখন নেই বললেই চলে। কয়েক বছর আগেও গ্রামাঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকার আনাচে-কানাচে বড় বড় বাঁশবাগান দেখা গেছে। ওইসব বাঁশবাগান ছিল অত্যন্ত ঘণ ও লম্বা। দেখে মনে হতো যেন বাঁশের বন বাগান। বাঁশবাগানগুলো উজাড় হলেও পরিবেশের প্রয়োজনে নদীভাঙ্গন ও পাহাড়ি অঞ্চলে নতুন করে বাঁশবাগান সৃষ্টিতে বন বিভাগ উদ্যোগ করলেও খুলনা বিভাগে সেই উদ্যোগ নেই।
কোল সম্প্রদায়ের বনলতা হালদার জানান- বাঁশ দিয়ে কুলা, মাছধরা পলো, বৃত্তি, ডালা, টোকা ইত্যাদি তৈরি করে জীবীকা নির্বাহ করতেন। বর্তমানে বাঁশ যেমন দুষ্প্রপ্য হচ্ছে তেমনি দাম বেড়েছে। ফলে প্লাস্টিকের সামগ্রীর সাথে পাল্লা দিয়ে তারা আর টিকতে পারছে না।
মেহেরপুর জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেবে এখনও এক হাজার বিঘা জমিতে বাঁশ বাগান আছে। জেলা খামার বাড়ির উপ-পরিচালক ড. মো. আক্তারুজ্জামান জানান- বাঁশের চাহিদার কারণে নতুন করে ফের বাঁশচাষে উদ্যোগী হয়েছে মানুষ। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রয়োজন আছে বাঁশ। এজন্যই পৃথিবী থেকে বাঁশ সহজে বিলুপ্তি হবে না।
বাসস/সংবাদদাতা/১১৩০/গিউ/-নূসী