আগামী ২০২২ সালের মধ্যে দেশের ২৪ শতাংশ বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকায় উন্নীত করা হবে

397

ঢাকা, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : দেশের বিদ্যমান ২২ শতাংশ বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা সম্প্রসারণ করে ২৪ শতাংশে উন্নীত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে সরকার। আগামী ২০২২ সালের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) ড. নুরুল কাদির বাসস’কে বলেন, ‘প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা, গবেষণা, উদ্ভিদ জরিপ এবং বন উন্নয়নের মাধ্যমে টেকসই পরিবেশ ও বন নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দশটি বিশেষ উদ্যোগের একটি ‘পরিবেশ সুরক্ষা’র অধীনে এসব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, সময় উপযোগী ও মানানসই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যেমে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে সমগ্র বনাঞ্চল সম্প্রসারিত করাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য।
এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে শিল্প কারখানার বর্জ্য নির্গমনের মাধ্যমে দূষণকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় জনসচেতনতামূলক কর্মাকান্ড পরিচালনা করা হচ্ছে।
ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে বায়ুর মানোন্নয়ন এবং ১৫ শতাংশ জলাভূমিকে শুকনো মৌসুমে জলাশয় হিসেবে সংরক্ষণ করতেও উদ্যোগ গহণ করেছে সরকার।
ড. কাদির বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায়, ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে সরকার ‘জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করে এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর পর্যস্ত এই ফান্ডে মোট ৩ হাজার ৫ শত কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়।
তিনি জানান, এই ফান্ডের আওতায় ঘূর্ণিঝড় আইলা আক্রান্ত উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় সহনশীল গৃহ নির্মাণ, ৮৭২ দশমিক ১৯ কিলোমিটার খাল পুন:খনন, ৩৫২ দশমিক ১২ কিলোমিটার নদী তীর প্রতিরক্ষা ও ১৬১ দশমিক ২৩ কিলোমিটার উপকূল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, ৪ হাজার ১ শত ৪৮ টি গভীর নলকূপ স্থাপন, ১ হাজার ৫০ টি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণাগার নির্মাণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১৭ হাজার ১ শত ৪৫ টি সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়াও বর্জ্য পরিশোধন করতে এপর্যন্ত ১ হাজার ৭ শত ১১ টি শিল্প কারখানায় ‘বর্জ্য পরিশোধনাগার’ (ইটিপি) স্থাপন করা হয়েছে।
পরিবেশ রক্ষায় সরকার, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধিত) আইন-২০১০, পরিবেশ আদালত আইন-২০১০, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন-২০১০ এবং বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য নীতিমালা-২০১২ প্রণয়ন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতাকালে বলেন, আগামী পাঁচ বছরে দেশের বিদ্যমান ২২ শতাংশ বনাঞ্চলকে ২৪ শতাংশে উন্নীত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
উপ-বন সংরক্ষক মো. জহির ইকবাল বলেন, বাংলাদেশ বন বিভাগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় যৌথ উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের বনের বাইরে ও ভেতরে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার মূল্যায়ণ : ২০০০ থেকে ২০১৪’ নামে একটি স্যাটেলাইট ভিত্তিক গবেষণা পরিচালনা করে।
এই গবেষণায় দেখা যায়, সরকার কর্তৃক বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে দেশে (শিল্পাঞ্চল, ছোট আকারে বৃক্ষরোপন, গ্রামাঞ্চলে বনায়ন এবং লোকালয়ে বৃক্ষ রোপনসহ) ক্রমেই বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ বাড়ছে।
১৯৮০ সাল থেকে বনায়নের জন্য সহায়তা প্রদান, লোকালয়ে বনায়নের সম্প্রসারণ এবং ক্ষয়প্রাপ্ত ভূমিতে বৃক্ষ রোপনসহ সরকারি ও বেসরকারিভাবে বনের বাইরে টেকসই বৃক্ষ ব্যবস্থাপনার উপর জোর দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচেছ বলেও জানান তিনি।