বাজিস-৩ : কেরাণীগঞ্জের পোশাক পল্লীতে শীতবস্ত্রের ব্যবসা জমজমাট

150

বাজিস-৩
কেরাণীগঞ্জ-শীতবস্ত্রের ব্যবসা
কেরাণীগঞ্জের পোশাক পল্লীতে শীতবস্ত্রের ব্যবসা জমজমাট
কেরানীগঞ্জ, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জের পাইকারি পোশাকপল্লীতে জমে উঠেছে শীতবস্ত্রের বেচাকেনা। সব বয়সের মানুষের জন্য নানা রকম শীতবস্ত্রের পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এসব বস্ত্র কেনার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন। বিক্রি হচ্ছে দেদার।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চলতি বছর শীতে জাতীয় নির্বাচন থাকায় এবার ব্যবসা ভালো হবে। কারণ গ্রাম থেকে শহরে নিজ নিজ দলের প্রার্থীর জন্য দিনরাত নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত থাকছে অধিকাংশ মানুষ। শীতের মধ্যে বেশিরভাগ সময় ঘরের বাইরে থাকায় শীতের পোশাক প্রয়োজন হচ্ছে বেশি।
জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ গার্মেন্ট ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. স্বাধীন বলেন, এখানকার ব্যবসায়ীরা শীত বাজার ধরতে প্রস্তুতি শেষ করেছে। এর মধ্যে শীত পোশাক তৈরি করে পাইকারি দোকানগুলোতে থরে থরে সাজানো হয়েছে। বিক্রিও শুরু হয়েছে। তবে শীত যদি একটু বেশি পড়ে, তবে বিক্রি আরও বেড়ে যাবে। আর এবারের শীতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ায় বিক্রিবাট্টা বাড়বে।
সরেজমিন কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লী ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার প্রত্যেকটি দোকানে শীত পোশাক বিক্রিতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে দোকান মালিকরা। স্থানীয় কারখানায় তৈরি ও দেশের বাইরের থেকে আমদানি করা শীত পোশাক ঝুলিয়ে ও থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন দোকানের কর্মচারীরা। ক্রেতা আসলে বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক দেখাচ্ছেন দোকানিরা। ক্রেতাদের পছন্দ হলে কিনছেন। সেখানে মেয়েদের কার্ডিগান ও ছেলেদের জন্য সোয়েটার, জ্যাকেট, ব্লেজার, ট্রাউজারসহ বিভিন্ন ধরনের গরম কাপড় পাওয়া যাচ্ছে। দাম ও মানে ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এ সময় এসব বস্ত্র কিনতে ভিড় করতে শুরু করেছেন খুচরা বিক্রেতারা।
পূর্ব আগানগরস্থ জেলাপরিষদ মার্কেটের মুসলিম কালেকশনের মালিক মো. মুসলিম ঢালী বলেন, শীতবস্ত্র বিক্রির জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। দোকানে বিভিন্ন ধরনের শীতের পোশাক উঠিয়েছি। এরই মধ্যে সারা দেশে আস্তে আস্তে শীত জেঁকে বসতে শুরু করেছে। এ কারণে পাইকারি ক্রেতারাও আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তবে আমরা আরও ক্রেতার অপেক্ষায় আছি। তারা আসলেই জমজমাট হয়ে উঠবে কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লী।
তিনি আরও বলেন শীতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ায় এ ধরনের পোশাকের কদরও বাড়বে অনেক। এ জন্য সব কিছু চিন্তা করে খুচরা বিক্রেতারা এবার বেশি করে মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন বলেও মন্তব্য তার।
স্থানীয় খাজা-সুপার মার্কেটের আলিয়া এন্টারপ্রাইজ এর মালিক মোঃ নুরুল আমীন লিটন জানান,বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাকের মার্কেট এটি। চলতি শীত মৌসুমকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই পাইকার আসা শুরু হয়েছে এবং এবছর ব্যবসা ভালো হওয়ার সম্ভাবনার কথাও তিনি জানান। তিনি বলেন,বিগত বছরগুলোতে বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে তাদেরকে অনেক সমস্যায় পড়তে হত। কিন্তু কেরাণীগঞ্জে এখন আর কোন বিদ্যুৎ সমস্যা নাই। যে কারণে তাদের উৎপাদন এবছর আগের তুলনায় অনেকটাই বেশি। তিনি বলেন, এবারের শীতে ছেলেদের শীতকালীন কোর্ট-স্যুট , ব্লেজার ও স্যুয়েটারের পাশাপাশি মেয়েদের জন্যও রয়েছে বাহরী ডিজাইনের সব ধরনের শীতকালীন পোশাক। তিনি আরো বলেন, যে কোন রুচিশীল তৈরি পোশাক এখানে অত্যন্ত সহজ মূল্যে পাওয়া যাওয়ার কারনে পাইকারদের তেমন বেশি ঘোরাঘুরি করতে হয় না। তাছাড়া রাজধানীর যে কোন পাইকারী বাজারের তুলনায় আমাদের এখানে কেনাকাটা করে পাইকার সাধারণরা কোরকম যানজট ছাড়াই নিরাপদে তাদের গন্তব্যে পৌছতে পারে। যে কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাইকারদের কাছে দিন দিন আমাদের কদর বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
বাগেরহাট থেকে আসা পোশাক ব্যবসায়ী শরীফ আহমেদ বলেন, দেশের প্রত্যেকটি ধর্মীয় উৎসব ও শীত মৌসুমে কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লী থেকে বিভিন্ন ধরনের পোশাক নিয়ে বিক্রি করেন। এবারও শীতকে ঘিরে পোশাক কিনতে এসেছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, একই স্থানে দেশি ও বিদেশি অনেক ধরনের শীত পোশাক পাওয়া যায়। কাপড়ের মান অনেক ভালো। ডিজাইনও অনেক চমৎকার। আর সব বয়সের মানুষের জন্য সব ধরনের শীত পোশাক পাওয়া যায়। ক্রেতারাও এ পোশাকগুলো পছন্দ করে কিনে নেয়। এতে কিছু টাকা লাভ করা যায়। তাই প্রতিবছর এখান থেকেই শীত পোশাক নিয়ে ব্যবসা করি।
সাভার থেকে আসা খুচরা পোশাক ব্যবসায়ী মো. ফারুক হোসেন বলেন, পোশাকের মানের তুলনায় দাম কম হওয়ায় প্রতিবছর এখানে শীতের পোশাক কিনতে আসেন। পোশাকের সেলাই থেকে শুরু করে কাপড়ের মান ভালো হওয়ায় মার্কেটে বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন। আর ক্রেতারাও তাদের পছন্দ অনুযায়ী শীত পোশাক পেয়ে সন্তুষ্ট থাকেন।
ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আ. আজিজ জানান, কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লীতে বিক্রয় কেন্দ্র ও কারখানার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজারের বেশি। এখানকার বিক্রয় কেন্দ্র ও কারখানায় দুই থেকে আড়াই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া দেশের শীত পোশাকের প্রায় ৭০ শতাংশ কেরাণীগঞ্জ থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হবে না।
বাসস/সংবাদদাতা/১২৩৫/নূসী