সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচেও পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চায় টাইগাররা

392

ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : পিছিয়ে পড়েও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-২০ দাপটের সাথে জিতে তিন ম্যাচের সিরিজে সমতা এনেছে বাংলাদেশ। তাই তৃতীয় ও শেষ টি-২০ ম্যাচটি এখন সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচে রুপ নিয়েছে। পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা বজায়ে রেখে সিরিজ নির্ধারনী এ ম্যাচেও জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছে না টাইগাররা। টেস্ট-ওয়ানডের পর টি-২০ সিরিজ জয়ই এখন প্রধান লক্ষ্য বাংলাদেশের। সিরিজ জয়ের লক্ষ্য রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও। সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়েই আগামীকাল সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-২০তে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিকেল ৫টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
ব্যাট-বল-ফিল্ডিং তিন বিভাগে নিষ্প্রভ থাকলে সে ম্যাচ থেকে কিছুই পাওয়ার থাকে না। সিলেটের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দলের কাছ থেকে সেটাই দেখা গেছে। সিলেটে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন বিভাগেই বাংলাদেশের পারফরমেন্স ছিলো অনুজ্জল, তাই ফলাফলও ছিলো ‘শূন্য’।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিধ্বংসী পারফরমেন্সের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশ। ৮ উইকেটে ম্যাচ হারে টাইগাররা। টেস্ট-ওয়ানডেতে জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করতে পারলেও টি-২০তে সেটি আর করা সম্ভব হয়নি।
ব্যাপারটা বেশ ভালোই টের পেয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব। টের পেলেও দ্বিতীয় টি-২০ নিয়ে দলের সতীর্থদের সাথে কোন কথাই বলেননি। কথা বলেননি, তা ঠিক নয়। কথা বলেছেন, তবে ম্যাচ নিয়ে নয়। হয়তো যার যার দায়িত্ব নিজ থেকেই সতীর্থরা বুঝে নিক এটাই চেয়েছিলেন সাকিব। আর নিজের কাজ কি, তা তো সাকিব নিজেই বোঝেন। প্রতি ম্যাচেই বাংলাদেশের জার্সি গায়ে সেই প্রমানও দেন টাইগার নেতা।
হ্যাঁ, সতীর্থরা নিজেদের দায়িত্ব ঠিক-ঠিকই বুঝে নিয়েছেন। যা দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচে স্পষ্ট। টস হারলেও আগ্রাসী মনোভাবেই ব্যাট হাতে ক্রিজে ছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। তাই মাত্র ২৫ বলে উদ্বোধণী জুটিতে ৪২ রান যোগ করেন তারা। শুরুর আগ্রাসনটা তিন নম্বরে নামা সৌম্য সরকারকে নিয়ে ধরে রেখেছেন লিটন। দ্বিতীয় উইকেটে ৪৩ বলে ৬৮ রান যোগ করেন লিটন-সৌম্য।
লিটন হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৩৪ বলে ৬০ ও সৌম্য ২২ বলে ৩২ রান করে ফিরেন। এই দু’জনসহ মুশফিকুর রহিমের দ্রুত বিদায়ে ১০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে খেই হারিয়ে ফেরার উপক্ষম হয় বাংলাদেশের। কিন্তু বাংলাদেশকে সেই পথে হাটতে দেননি সাকিব-মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ইনিংসের শেষ ৪২ বলে অবিচ্ছিন্ন ৯১ রান যোগ করেন তারা। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ২১১ রানের পাহাড় দাঁড় করায় টাইগাররা। মিরপুরের এই ভেন্যুতে কোন আন্তর্জাতিক দলের এটিই সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রান হয়। ৫টি চার ও ১িিট ছক্কায় ২৬ বলে সাকিব ৪২ ও ৭টি চারে ২১ বলে মাহমুদুল্লাহ অপরাজিত ৪৩ রান করেন।
জবাবে সাকিবের ঘুর্ণিতে দিশেহারা ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তার ক্যারিয়ার সেরা টি-২০ বোলিং-এ ক্যারিবীয়দের লক্ষ্যের ধারেকাছে পৌছতে দেননি সাকিব। ৪ ওভারে ২০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে সফরকারীদের ১৭৫ রানেই বেঁেধ ফেলেন সাকিব। ফলে ৩৬ রানে ম্যাচ জিতে সাকিবের হাত ধরেই সিরিজে সমতা আনতে পারে বাংলাদেশ। প্রথম টি-২০তেও পারফরমেন্সে একমাত্র উজ্জল ছিলেন সাকিব। তাই দেশের জার্সিতে নিজের দায়িত্বটা যথাযথ পালন করতে মুখিয়ে থাকেন সাকিব। দ্বিতীয় ম্যাচে তো জ্বর-ঠান্ডা, পেটের পীড়া নিয়ে মাঠে নামেন সাকিব।
এখন তৃতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নেয়ার কাজটা পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন করতে চান সাকিব। দ্বিতীয় টি-২০ শেষে শেষ ম্যাচ নিয়ে তার ভাবনা জানতে চাওয়া হলে সাকিব বলেন, ‘টার্গেট থাকবে অবশ্যই জেতা।’
দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচের জন্য দলের ব্যাটসম্যানদের প্রশংসাও করেন সাকিব, ‘আমার মনে হয় আজকে আমাদের ভাল একটা দিন ছিলো। ফিল্ডিংয়ে একটু ঘাটতি ছিলো। তারপরেও মনে হয় সব মিলে ভাল একটা টি-২০ ম্যাচ খেলেছি। বোলারদের জন্য দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করাটা কঠিন ছিলো। অনেক শিশির ছিলো। তবে যেহেতু ভাল একটি রান ছিলো। বোলাররা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বল করেছে। আমাদের ব্যাটিংয়ের শুরুটা খুবই ভালো শুরু হয়। লিটন, সৌম্যর পর আমার ও রিয়াদ ভাইয়ের জুটিটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। কারণ ওই সময় যদি আমরা উইকেট হারাতাম তাহলে হয়তো এত বড় রান হতো না। বাড়তি ২০-৩০টা রানের শক্তিটা পেতাম না। সেদিক থেকে বলবো ব্যাটিংই আজকে আমাদের আসল কাজটা করে দিয়েছে।’
জয় দিয়ে সিরিজ শুরুর পরও দ্বিতীয় ম্যাচে নিজেদের সেরাটা ধরে রাখতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের তকমাটা ক্যারিবীয়দের গায়ে লেগে আছে, তাই শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে মরণ কামড় দেয়ার জন্য অস্থির থাকবে হোপ-হেটমায়াররা। তবে কাজটি সহজ হবে না তাদের জন্য। কারন মিরপুরের কন্ডিশনে বাংলাদেশ যে কতটা ভয়ংকর সেটি দ্বিতীয় টি-২০তে দেখিয়েছে সাকিব বাহিনী।
বাংলাদেশ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (সহ-অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাজমুল ইসলাম অপু, মোহাম্মদ মিঠুন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, আবু হায়দার রনি ও আরিফুল হক।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল : কার্লোস ব্র্যাথওয়েট (অধিনায়ক), ড্যারেন ব্রাভো, শিমরোন হেটমায়ার, ফ্যাবিয়ান এ্যালেন, কেসরিক উইলয়ামস, কিমো পল, খারি পিয়েওে, এভিন লুইস, নিকোলাস পুরান, রোভম্যান পাওয়েল, দিনেশ রামদিন, শাই হোপ, শেরফান রাদারফোর্ড, শেলডন কট্রেল ও ওশানে টমাস।