বাজিস-১ : বরগুনায় ভোটের রাজনীতিতে উন্নয়ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ামকের কাজ করবে

148

বাজিস-১
বরগুনা-ভোট
বরগুনায় ভোটের রাজনীতিতে উন্নয়ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ামকের কাজ করবে
বরগুনা, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : বুলেট ট্রেন চালু, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ স¤পন্ন, গ্যাস সরবরাহ, পায়রা বন্দর, গ্রামকে শহরে উন্নতি, কৃষির উন্নতিসহ নানা খাতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহারে দক্ষিণাঞ্চলকে অগ্রাধিকার দিয়ে আরও বহু পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এছাড়া পরপর মেয়াদের বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সারা দেশের মতো দক্ষিণাঞ্চলেও অভূতপূর্ব উন্নয় ঘটেছে। রাস্তাঘাট, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়াও মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন দ্রুতগতিতে বেড়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন-তথ্যপ্রযুক্তি অনেকটাই মানুষের হাতের মুঠোয়।
অবাধ তথ্যপ্রবাহের কারণে মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। সেই সাথে বর্তমান সরকার বরগুনা-পটুয়াখালী অঞ্চল জুড়ে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সমুদ্র বন্দর, সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন, সাবমেরিন ঘাঁটিসহ নানা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে জলবায়ু তহবিলে এবং সরকারি ও বেসরকারিভাবে আরও কয়েকহাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে। এ সব উন্নয়ের ছোঁয়া ইতোমধ্যে মানুষ পেতে শুরু করেছে। যার প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই রাজনীতিতেই পড়ছে বলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
সারা দেশের মতো বরগুনার ভোটের রাজনীতিতে গণমুখী নির্বাচনী ইশতেহার, দলীয় প্রাধান্যের পাশাপাশি উন্নয়নের মাপকাঠি গুরুত্বপূর্ন নিয়ামকের ভূমিকা পালন করবে। জনকল্যাণমুখিতার বিবেচনায় অন্যান্য যে কোন দল থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনেক এগিয়ে রয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এছাড়াও তরুণসহ বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা, ‘প্রথম ভোটার’ ও সমান সংখ্যক নারী ভোটার থাকায় জন সমর্থনে বরাবরই বরগুনা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি আওয়ামী লীগ শীর্ষে রয়েছে। এ জেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রথম প্রতিবাদ হয়েছিল।
‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ ইশতেহারের বরাত দিয়ে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাবেক সাংসদ ও বর্তমান জেলা চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থানকে বিবেচনায় নিয়ে জেলাভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করা হবে। জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে দায়িত্ব বিভাজন সুনির্দিষ্ট করা হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের উপযোগী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। নগর ও শহরে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, পরিকল্পিত উন্নয়ন এবং নগর ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও জনগণের অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরের ওপর নির্ভরতা কমানোর জন্য পটুয়াখালীর পায়রাতে একটি ‘গভীর সমুদ্রবন্দর’ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পায়রা বন্দরের পরিপূর্ণ উন্নয়নের জন্য ১৯ প্রকার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই বন্দরের মাধ্যমে ২০১৬ সালে প্রাথমিকভাবে মালামাল উঠানো-নামানো শুরু হয়েছে। ভোলা গ্যাস পাইপ লাইন ও উপকূলীয় অঞ্চলে একটি পেট্রোকেমিক্যালস কারখানা স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ গ্রামকে আওয়ামী লীগ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কেন্দ্রীয় দর্শন হিসেবে বরাবরই বিবেচনা করে এসেছে। স্বাধীন দেশে জাতির পিতা সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষিবিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিকরণের ব্যবস্থা, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল পরিবর্তন সাধনে রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে অঙ্গীকার যুক্ত করেছিলেন। বর্তমান সরকার প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে। উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানস¤পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, ক¤িপউটার ও দ্রুতগতিস¤পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানস¤পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সকল সুবিধাদি দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা চেয়াম্যানসহ বরগুনার আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন উঠোন বৈঠকে আলোচনা করছেন, স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুগোপযোগী করতে কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অধিকতর বিনিয়োগ করা হবে। তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রসারিত করা হবে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তরুণদের কল্যাণ ও উন্নয়ন কাজে প্রশাসনিক গতি আনতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় গঠন করা হবে পৃথক যুব বিভাগ। দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দুটি নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। কর্মঠ প্রকল্পর অধীনে স্বল্প শিক্ষিত/স্বল্প দক্ষ/অদক্ষ শ্রেণির তরুণদের শ্রমঘন, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের উপযোগী জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। কর্মসংস্থানে কৃষি, শিল্প ও সেবার অংশ যথাক্রমে ৩০, ২৫ ও ৪৫ শতাংশে পরিবর্তন করা হবে। ২০২৩ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। এছাড়া উক্ত সময়ে নতুনভাবে ১ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হবে।
বরগুনায় শীতল হাওয়ার সাথে বইছে জমজমাট জাতীয় নির্বাচনের হাওয়া। আওয়ামীলীগের শক্ত ঘাঁটি জেলা সদর, আমতলী এবং তালতলী উপজেলা নিয়ে বরগুনা-১ আসনটি। ২টি পৌরসভা এবং ২৪টি ইউনিয়ন নিয়ে এ নির্বাচনী এলাকায় ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৯২ হাজার ৫৮২। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামীলীগ ৫ বার, আওয়ামীলীগেরই বিদ্রোহী একবার, বিএনপি ১, জাতীয় পার্টি ২, জাসদ ১ বার করে এ আসনে জয় পেয়েছে। বরগুনা ১ অর্থাৎ বরগুনা সদর-আমতলী-তালতলী আসনে বর্তমান এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে এ পর্যন্ত ৬ বার মনোনয়ন দিয়েছে দল। এর মধ্যে ৪ বার জিতেছেন তিনি। উপমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। বর্তমান এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর দাবী বরগুনাকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বানানোসহ দৃশ্যমান ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন তিনি। অসমাপ্ত উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড শেষ করার জন্য আবারও তিনি প্রার্থী হয়েছেন।
বরগুনা-২ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকা তিনটি উপজেলা বামনা, পাথরঘাটা ও বেতাগী নিয়ে গঠিত। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন এ আসনের কোলঘেঁষেই অবস্থিত। তাছাড়া মৎস্য বন্দর হিসেবে পাথরঘাটার পরিচিতি দেশজুড়ে। স্বাধীনতার পর থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এ আসনে ১১ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ তিনবার, বিএনপি দ’ুবার, স্বতন্ত্র তিনবার, জাতীয় পার্টি দু’বার ও ইসলামী ঐক্যজোট একবার জয়ী হয়েছে। এবার একাদশ জাতীয় নির্বাচনে এগিয়ে থাকতে চায় আওয়ামীলীগ। নবম সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের এমপি গোলাম সবুর টুলু সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে উপনির্বাচনে এমপি হন আওয়ামীলীগের শওকত হাচানুর রহমান রিমন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও জয়ী হন তিনি। বর্তমান এমপি ও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শওকত হাচানুর রহমান রিমন এবারেও আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি জানান, ‘আমি দু’বার ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদে একবার ও জাতীয় সংসদ সদস্য দু’বার নির্বাচিত হয়েছি। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি।
বাসস/সংবাদদাতা/১২৪৫/-মরপা