নওগাঁয় সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে এক যুবকের সাফল্য অর্জন

464

নওগাঁ, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : জেলায় হাঁস, মাছ এবং সবজি চাষের মাধ্যমে সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তুলে সাফল্য অর্জন করেছেন বনফুল নামের বিদেশ ফেরত এক যুবক। তার এ সফলতা এখন এলাকায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
নরওয়ে’র অসলোতে দীর্ঘদিন থেকে দেশে ফিরে আসেন বনফুল। তিনি নওগাঁ শহরের হাট-নওগাঁ মহল্লার আলমগীর হোসেনের পুত্র। শহরের দক্ষিণাঞ্চলে ভর অঞ্চল। এ এলাকার দিঘলী বিলে জমি কিনে তৈরি করেছেন ৬ বিঘা জলা বিশিষ্ট একটি পুকুর। এ পুকুরপাড়ে ঘর বানিয়ে শুরু করেছেন হাঁস চাষ। আজ থেকে প্রায় ৬ মাস পূর্বে তিনি মোট সাড়ে ৬শ’ ক্যাম্বেল হাঁস দিয়ে খামারটি গড়ে তোলেন। নাম দিয়েছেন বনফুল এগ্রো ফার্ম।
হাঁসগুলো উন্মুক্ত বিলে চড়ে বেড়ায়। সকাল হলেই সেগুলোকে ছেড়ে দেয়া হয়। সারাদিন বিলে উন্মুক্তভাবে চড়ে বেড়ায়। প্রাকৃতিকভাবেই তাদের খাবার সংগ্রহ করে এবং খেয়ে সন্ধ্যা হলেই তারা এ ঘরে ফিরে আসে। হাঁস দেখাশুনার জন্য ৩ জন কর্মীকে নিয়োজিত রাখা হয়েছে। এখান থেকে এ তিনজনের সংসারের খরচ সংকুলান হচ্ছে।
বনফুল জানান, বিলে উন্মুক্তভাবে চড়ে খায় বলে তাদের খাদ্য খরচ অনেক কম লাগে ফলে অধিক লাভজনক হয়েছে। বর্তমানে তার এ খামার থেকে প্রতিদিন ৪শ ডিম সংগ্রহ হচ্ছে। এ ৪শ ডিম প্রতিটি ১০ টাকা হিসেবে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকায়। ডিম বিক্রেতারা তার খামার থেকে ডিম কিনে নিয়ে যায় বলে বাজারজাতকরণে কোন সমস্য হয় না। সেই হিসেবে প্রাতিমাসে ডিম বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। লেবার খরচ, পরিচর্যা খরচ, ওষুধপত্র খরচ ইত্যাদি বাবদ প্রতিদিনি ১ হাজার টাকা হিসেবে মাসে মোট খরচ হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে তিনি নীট লাভ করছেন ৯০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে বছরে তার হাঁস থেকে আয় হচ্ছে ১০ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।
অপরদিকে তার এ পুকুরে মাছ চাষ করেও লাভবান হয়েছেন তিনি। তিনি তার ৬ বিঘা জলা বিশিষ্ট এ পুকুরে ১ কেজি ওজনের ১ হাজার ৮শ মাছ ছেড়েছেন। এক বছরে এই মাছগুলো কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ কেজি ওজনে দাঁড়াবে। তার মাছের দাম, খাবার, পিরচর্যা ইত্যাদি বাবদ মোট খরচ হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। লেবার খরচ আরও ১ লক্ষ টাকা। প্রতিটি মাছ কমপক্ষে ৪ কেজি ওজনের হবে। ১ হাজার ৮শ মাছের মোট ওজন হবে ৭ হাজার ২শ কেজি। কমপক্ষে ৩শ টাকা কেজি হিসেবে উৎপাদিত মাছের মোট মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ২১ লাখ টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে নীট মুনাফা থাকবে ১০ লাখ টাকা।
হাঁস এবং মাছ থেকে প্রতি বছর প্রায় ২১ লাক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব বলে তিনি জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে বনফুল বলেছেন বাংলাদেশে হাঁস, মাছ চাষ করে সফলতার এমন সুযোগ রয়েছে যে বিদেশে যাওয়ার আর কোন প্রয়োজন নেই। তাকে দেখে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন এমন উদ্যোগ গ্রহণ করতে।
অপরদিকে তিনি এ পুকুরের চারপাশে পেঁপে, শিম, ডাটা, বেগুন’ ঢেড়শ, লাউ, পুঁইশাকসহ শাকসবজির চাষ করেছেন। এ সবজি বাগান থেকে ফার্মে কর্মরত শ্রমিক এবং নিজের বাসার সারা বছরের সবজির চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাস বলেছেন, দিঘলী বিলের বনফুল এগ্রোফার্মের কথা তিনি শুনেছেন। কিন্তু যাওয়া হয়নি। তবে তিনি বলেছেন, বর্তমানে হাঁস এবং মাছ চাষ খুবই লাভজনক। পরিকল্পিতভাবে যদি এসব চাষ করা হলে খুবই লাভবান হওয়া সম্ভব।