বাজিস-৩ : বোরো বীজতলা তৈরীতে ব্যস্ত নকলার কৃষক

138

বাজিস-৩
শেরপুর-বোরো জীবতলা
বোরো বীজতলা তৈরীতে ব্যস্ত নকলার কৃষক
শেরপুর, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : আমন ধান ঘরে তুলার সাথে সাথে শুরু হয়েছে বোরো আবাদের জন্য বীজতলা তৈরির কাজ। শেরপুরের নকলার কৃষকরা বোরো বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগত বোরো মৌসুমে উপজেলায় ১৩ হাজার ২৪৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে হাইব্রিড জাতের ধান চাষের জন্য ৭ হাজার ১১ হেক্টর, উফসী জাতের ৬ হাজার ২০৬ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের জন্য ৩০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব জমিতে ধানের চারা রোপণের জন্য ৮১০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে উপজেলা কৃষি অফিস। লক্ষ্যমাত্রার বীজতলার মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধানের বীজতলা ৪৩০ হেক্টর, উফসী জাতের ধানের বীজতলা ৩৭০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ধানের বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হেক্টর জমি। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির কাজ শেষে করেছেন কৃষকরা।
আর ওইসব জমি থেকে উৎপাদিত ধান হতে চাল পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৭ হাজার ৬৮৭ মেট্রিকটন। এতে হাইব্রিড প্রতি হেক্টরে ৪.৭৫ মেট্রিকটন করে ৩৩ হাজার ৩০২ মেট্রিকটন, উফসী প্রতি হেক্টরে ৩.৯২ মেট্রিকটন করে ২৪ হাজার ৩২৭ মেট্রিকটন এবং স্থানীয় জাতের ধান হতে চাল পাওয়ার আশা করা হচ্ছে প্রতি হেক্টরে ১.৯৪ মেট্রিকটন করে ৫৮ মেট্রিকটন।
এবছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম ফেজ প্রজেক্ট (এনএটিপি-২)’র আওতায় প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে কমিউনিটি (আদর্শ) বীজতলা তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। আদর্শ বীজতলা তৈরি করার জন্য চলছে কৃষক ও জমি নির্বাচন।
আদর্শ বীজতলা তৈরির জন্য কয়েক বছর ধরে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে লাভবান হওয়ায় এবছর নিজ থেকেই আদর্শ বীজতলা তৈরিতে কৃষকরা ঝুঁকছেন। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে উপজেলার সব বীজতলা কমিউনিটি (আদর্শ) পদ্ধতিতে করা হবে বলে আশা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। তাতে একদিকে কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন, অন্যদিকে কৃষি অর্থনীতি আরও সচল হবে বলে মনে করছেন কৃষি গবেষক ও কৃষি কর্মকর্তাসহ সুধিজন।
বানেশ্বরদী ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ও চন্দ্রকোনা ব্লকের আনোয়ার হোসেন জানান, কৃষকরা আগেবাগেই বীজতলা তৈরি করেছেন। তবে আগাম সরিষা ও আলু উঠানোর পরে উপজেলার অনেক কৃষক নাবী জাতের ধান রোপণ করবেন।
বানেশ্বরদী গ্রামের জুয়েল মিয়া, ভূরদী কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সভাপতি ছাইয়েদুল হক, সাধারণ সম্পাদক হেলাল, কৃষক ঈসমাইল, কমলসহ কয়েকজন আলু চাষি জানান, তারা আলু উঠানোর পরে ওইসব জমিতে প্রতিবছর ধান চাষ করেন। এত করে একই জমিতে আলু ও ধানের আবাদ করে তারা অধিক লাভবান হচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ ও কৃষিবিদ শেখ ফজলুল হক মনি জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বরাবরের ন্যায় উপজেলায় এবারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জন বেশি হতে পারে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাশ বলেন, এবছর এসআর-৮, তেজ গোল্ড, এসিআই-৬, জনকরাজ, রূপসী বাংলা, সোনার বাংলা, কৃষিবিদ, হীরা-১, ২, ৩, ৪ ও ৫; ব্যাবিলন-১ ও ২; বালিয়া-১ ও ২; ইস্পাহানী-১ ও ২, ময়না, টিয়া, সম্পদ এবং উফসী জাতের ব্রি ধান-২৮, ২৯, ৫৮, ৬৯ ও ৭৪ এবং বিআর-২৬ জাতের ধান চাষে কৃষকরা বেশি আগ্রহী। তিনি আরও জানান, বোরো আবাদের উপযোগী সব জমিকে চাষের আওতায় আনতে জমির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করে, কৃষি পণ্য উৎপাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও কৃষি প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে।
গতবছর (২০১৭ সালে) বোরো আবাদের জন্য ৮০৫ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ২৪০ হেক্টর জমির হাইব্রিড ধানের আবাদ থেকে ৩৪ হাজার ২৯৫ মেট্রিকটন চাল এবং উফসী ও স্থানীয় জাতের ধানের ৬ হাজার ২৭০ হেক্টর জমির আবাদ থেকে প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার মেট্রিকটন চাল উৎপাদন হয়েছিল।
বাসস/সংবাদদাতা/আহো/১৫৩০/নূসী