বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) (সংযোজনসহ) : সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাণে আওয়ামী লীগকে ভোট দিন : প্রধানমন্ত্রী

135

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) (সংযোজনসহ)
শেখ হাসিনা-পথসভা-ভাংগা
সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাণে আওয়ামী লীগকে ভোট দিন : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভাপতি জনসভায় সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য দেশবাসীকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট প্রদানের আহবান জানান।
বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় থাকার সময় বাংলাদেশ পর পর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘এখন দুর্নীতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে এবং সেজন্য বিশ্বের স্বীকৃতিও আমরা পেয়েছি।’
তিনি বলেন, একটি দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাস মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমার লক্ষ্য এবং এই লক্ষ্য অর্জনে নৌকা প্রতীকে আপনাদের ভোট একান্তভাবেই প্রয়োজন।
বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতা বেগম মুজিব তাঁদের সমগ্র জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনিও বাংলার মানুষের প্রয়োজনে জীবন দিতে দ্বিধা করবেন না এবং শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম তিনি চালিয়ে যাবেন।
দেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন ও সাফল্যের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের আলোর পথে যাত্রা শুরু হয়েছে এবং এই অগ্রযাত্রা আর কেউ রুখতে পারবে না।’
নবীন প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তিনি তাঁর বর্তমানকে উৎসর্গ করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের এই অগ্রগতিকে অব্যাহত রাখার জন্য এবং দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকাটা অত্যন্ত জরুরি।
তিনি বলেন, যদি জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে পুনঃনির্বাচিত করে তাহলে আগামীর বাংলাদেশ হবে দারিদ্র ও ক্ষুধা মুক্ত, যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তা পাবে।
শেখ হাসিনা এ সময় নৌকায় ভোট দিবেন কিনা, জনগণের কাছে জানতে চাইলে উপস্থিত জনতা দু’হাত তুলে উচ্চকন্ঠে সম্মতি জানায়।
জনগণের প্রতিশ্রুতির জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমিও প্রতিশ্রতি দিচ্ছি আপনারা ভোট দিয়ে আবার ক্ষমতায় আনলে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ আপনাদেরকে উপহার দিব।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতি ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে এবং আওয়ামী লীগ পুণরায় ক্ষমতায় আসলেই কেবল ব্যাপক-উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে এ দু’টি দিবস উদযাপিত হবে। কাজেই আপনারা বুঝতেই পারছেন আপনাদের এক একটি ভোট আমাদের কাছে কতটা মূল্যবান।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশব্যাপী চলমান সন্ত্রাস,জঙ্গিবাদ এবং মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে বলেন, যাদের মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে।
তিনি এই সামাজিক ব্যাধিগুলো সমাজ থেকে উচ্ছেদে এ সময় সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন।
তিনি সমাজের সর্বস্তরের জনগণ বিশেষ করে মাতা-পিতা,অভিভাবক, শিক্ষক, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং সকল শ্রেনী পেশার জনগণকে এ সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহবান জানান, যাতে করে কারো সন্তান যেন ভুল করে এই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদকের পথে পা বাড়াতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের সন্তানরা কি করে, কোথায় যায় এবং কার সঙ্গে মেশে সে বিষয়ে আপনাদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।’
তিনি বলেন,‘আমরা চাই আমাদের সন্তানেরা এবং যুবসমাজ সুন্দর জীবন এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। যাতে করে তাঁদের মেধাকে আমরা দেশগঠনের কাজে লাগাতে পারি।’
বিদ্যুৎসহ দেশের বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সময়োপযোগী দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা যথাযখভাবে বাস্তবায়নের ফলেই আজকে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হওয়ায় দেশের শতকরা ৯৩ শতাংশ মানুষ আজ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে তাহলে প্রতিটি ঘরেই আমরা বিদ্যুতের আলো জ্বালবো এবং দেশ ও সমাজকে শিক্ষিত করে আলোকিত করে গড়ে তুলবো।’
তাঁর সরকারের সময়ে ফরিদপুরের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রসংগ টেনে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই জেলাটি একদা অবহেলিত ছিল কারণ ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো এই জেলার উন্নয়নে কিছুই করেনি।
তারা কেবল লুটপাট এবং দুর্নীতিতেই নিমজ্জিত ছিল উল্লেখ করে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ফরিদপুরকে এক সময় ‘ফকিরপুর’ বলেও অবজ্ঞা করা হত।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পরই দেশের অবহেলিত দক্ষিণ জনপদের উন্নয়নে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। এই জেলার মানুষও ভাল করেই জানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই কেবল তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়।
ফরিদপুরকে বিভাগে উন্নীত করার জনগণের দাবির প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি প্রত্রিয়াধীন রয়েছে এবং আমরা পুণরায় নির্বাচিত হতে পারলে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবো।
বর্তমান সরকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নয়নে পৃথক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যাপক সংখ্যক জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টিও এসব প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।
কোমারপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দোকার মোশাররফ হোসেন বক্তৃতা করেন।

ফরিদপুরে জনসভায় বক্তৃতাকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি ২০০১ থেকে ২০১০৬ পর্যন্ত পাঁচ বছরের দুঃশাসনের জন্য বিএনপি-জামায়াতের তীব্র সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি-জামায়াত) জনগণের কোন উন্নয়ন করেনি। বরং হত্যা ও লুটপাটে লিপ্ত ছিল। তারা এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছে। আর বিএনপি-জামায়াতের হাতে অনেক মা তাদের সন্তান হারিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত চক্র ২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু জনগণ তাদের অশুভ চক্রান্ত রুখে দিয়েছে।
তিনি বলেন, জনগণ ২০১৪ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের ডাকে সাড়া দেয়নি।
প্রধানমন্ত্রী সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মডেল।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ও সমুদ্র সীমা অর্জনের মাধ্যমে আকাশ ও সমুদ্র জয় করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা গঙ্গার পানির ন্যায্যহিস্যা বাস্তবায়ন এবং ভারতের সাথে স্থল ও সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করেছি।
পরে প্রধানমন্ত্রী দৌলতদিয়া বাস টার্মিনাল, পাটুরিয়া ট্রাক টার্মিনাল, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, ধামরাই হার্ডিঞ্জ হাই স্কুল মাঠ ও সাভার বাসস্ট্যান্ডে পৃথক পৃথক নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতা করেন।
জনসভায় বক্তৃতায় শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি দেশের সম্পদ কাজে লাগায়নি বরং তারা সেসব লুট করেছে।
বিএনপি ধ্বংস ছাড়া কিছুই করেনি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছে।’ এখন তিনি দুর্নীতির জন্য কারাগারে আছেন, কোন রাজনৈতিক কারণে নয়।
শেখ হাসিনা খুনি, লুটেরা ও দুর্নীতিবাজরা যাতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরতে না পারে সেজন্য দেশবাসীর প্রতি সতর্কতা থাকার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন বিশেষ করে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরেন।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ গত অর্থবছরের ৭.৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং মূল্যস্ফীতি প্রায় ৫.৪ শতাংশতে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক চাঙ্গা থাকার কারণে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বিপুল পরিমাণ বেড়েছে।
‘একজন দিনমজুর তার দৈনিক আয় দিয়ে ১০ কেজি চাল কিনতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আবার নির্বাচিত হলে প্রথম পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করার পর দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করার কথা বিবেচনা করবো।
বাসস/একেএইচ-এসএইচ/অনুবাদ-এফএন-এইচএন/২৩৪০/রশিদ/-অমি/এবিএইচ