জয়পুরহাট হানাদার মুক্ত দিবস আগামীকাল

380

জয়পুরহাট, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : জয়পুরহাট পাক হানাদার মুক্ত দিবস ১৪ ডিসেম্বর আগামীকাল। ১৯৭১ সালের এ দিনে পাক হানাদারদের হটিয়ে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে শ’ শ’ মুক্তিযোদ্ধা ভোরের আকাশ রাঙ্গিয়ে ওঠার আগেই শীতের কুয়াশা ছিন্ন করে ঝাঁক ঝাঁক ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে ও উল্লাসের মধ্যদিয়ে জয়পুরহাটের ডাক বাংলোতে প্রবেশ করে। হানাদার পাকিস্তানি সৈন্য বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার আলবদররা তখন পালিয়ে বগুড়া ও ঘোড়াঘাটের দিকে ছুটে যায় জীবন বাঁচাতে।
জয়পুরহাটের ডাক বাংলো প্রাঙ্গণ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ’জয়বাংলা’ স্লোগানে মাটি কেঁপে ওঠে। সমবেত কন্ঠে ’আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানের মধ্যদিয়ে প্রথম স্বাধীনতার বিজয় কেতন সোনালী বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খন্দকার আসাদুজ্জামান বাবলু (বাঘা বাবলু)। এ স্বাধীনতার জন্য মূল্য দিতে হয়েছে অনেক মা-বাবা, ভাই-বোনকে। স্বজনদের হারিয়ে অনেকেই এখনও শোকে পাথর হয়ে আছেন।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিক থেকে দেশের অনেক জেলা যখন পাক-হানাদার মুক্ত হতে থাকে তখনও যুদ্ধ চলে জয়পুরহাটে। ৯ মাস ধরে হানাদার বাহিনীর সদস্যরা নির্মম নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালায় এখানে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে নিয়ে এসে ১০ হাজারের বেশী মানুষকে ব্যানট দিয়ে খুঁচিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় জয়পুরহাটের পাগলা দেওয়ানে। এখানে শুয়ে আছে কত মায়ের অজানা সন্তান। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি এ পাগলা দেওয়ান। এখানে পাক হানাদার বাহিনীর একটি পরিত্যক্ত বাংকার এখনও হত্যা যজ্ঞের ভয়াল স্মৃতি বহন করছে। এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ থেকে প্রাণে বেঁচে আসা অনেকেই এখনও সেই করুন স্মৃতি বহন করছেন। এছাড়াও কড়ই কাদিপুর গ্রামে ৩৭১ জন মৃৎ শিল্পী (কামার-কুমার) কে গুলি করে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী ও এ দেশীয় দোশর রাজাকার আল বদর বাহিনীর সদস্যরা। এখানে একটি বধ্যভূমি রয়েছে। বিজয়ের এ দিনকে স্মরণ রাখার জন্য জয়পুরহাটে শহীদ ডাঃ আবুল কাসেম ময়দানে ৭১ ফুট উচ্চ শহীদ স্মৃতি বিজয় স্তম্ভ নির্মান করা হয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর পাক হানাদারদের নিকট থেকে মুক্তির এ দিনটি জয়পুরহাটবাসী স্মরণ করে পাগলা দেওয়ান স্মৃতি সৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ ও বিজয় পতাকা শোভাযাত্রা বের করার মাধ্যমে। জেলা প্রশাসন বিজয় দিবস উদযাপনে তিন দিন ব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়াও মানবাধিকার নাট্য পরিষদ জয়পুরহাট শাখা হানাদার মুক্ত দিবস পালন উপলক্ষে পতাকা মিছিল ও মানচিত্রে প্রদীপ প্রজ্জলন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বলে জানান, জেলা শাখার সভাপতি নাট্যজন রাজা চৌধুরী।