বাসস ক্রীড়া-১৭ : জয় দিয়ে মাশরাফির দুইশতম ম্যাচকে স্মরণীয় করে রাখলো বাংলাদেশ

556

বাসস ক্রীড়া-১৭
ক্রিকেট-ওয়ানডে
জয় দিয়ে মাশরাফির দুইশতম ম্যাচকে স্মরণীয় করে রাখলো বাংলাদেশ
ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮ (বাসস) : আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার ২শতম ওয়ানডে ম্যাচকে জয় উপহার দিয়ে স্মরণীয় করে রাখল বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল মাশরাফির দল। ৩০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হয়েছেন মাশরাফি।
দেশের হয়ে না হলেও বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ২শতম ওয়ানডে খেলতে পারাটা তো চাট্টিখানি কথা নয়। যদি ব্যক্তিটি হয়ে থাকেন মাশরাফি। ২০০১ সালে ওয়ানডে অভিষেক হয় মাশরাফির। এরপর বার ইনজুরির সঙ্গে সন্ধি করেও আজ ২শতম ওয়ানডে খেলতে নামেন ম্যাশ। টস হেরে ফিল্ডিং পেলেও, সেটি খুব বেশি সমস্যার নয় তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি।
বল হাতে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি। অবশ্য বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন দলের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। মেহেদি হাসান মিরাজের সাথে বোলিং শুরু করে অষ্টম ওভারের শেষ বলে উইকেট তুলে নেন সাকিব। ২৭ বলে ১০ রান করা কাইরেন পাওয়ালকে থামান সাকিব।
মিরাজ-সাকিবের পর তৃতীয় বোলার হিসেবে আক্রমণে আসেন মুস্তাফিজুর রহমান। এতক্ষণে দ্বিতীয় উইকেটে বড় জুটির ইঙ্গিত দিতে থাকেন আরেক ওপেনার শাই হোপ ও তিন নম্বরে নামা ড্যারেন ব্রাভো। ৩৬ রানের জুটিও গড়েন ফেলেন তারা। মিরাজ-সাকিবের সাথে মুস্তাফিজকে দিয়েও এই জুটি ভাঙ্গতে পারছিলেন না মাশরাফি। অবশেষে নিজেই এই জুটি ভাঙ্গেন ম্যাশ। ব্রাভোকে বিদায় দেন তিনি। তবে এই উইকেটের জন্য সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিতে হয় ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবালকে।
মাশরাফির অফ-স্টাম্পের বেশ বাইরের বলকে মারতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন ব্রাভো। বল যাচ্ছিলো এক্সট্রা-কভারের দিকে। লং-অফ থেকে দৌঁড়ে এক্সট্রা-কভারে গিয়ে হাওয়ায় ভেসে ক্যাচটি নিজের তালুবন্দি করেন তামিম। বিদায় ঘটে ৫১ বলে ১৯ রান করা ব্রাভোর।
ব্র্রাভোকে শিকারের কিছুক্ষণ পর আরও একটি সাফল্য বাংলাদেশকে এনে দেন মাশরাফি। উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া হোপকে শিকার করেন তিনি। মিরাজের দুর্দান্ত ক্যাচে ৫৯ বলে ৪৩ রানে থেমে যান হোপ।
৭৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলকে চাপমুক্ত করার দায়িত্ব ছিলো হার্ড-হিটার শিমরোন হেটমায়ার ও অভিজ্ঞ মারলন স্যামুয়েলসের। টেস্ট সিরিজে মারমুখী মেজাজে ব্যাট করা হেটমায়ার ইনিংসের শুরু থেকে বেশ সর্তকই ছিলেন। উইকেটে সেট হয়ে বিধ্বংসী হতে চেয়েছিলেন হেটমায়ার। কিন্তু হেটমায়ারকে সেই রুপ ধারন করতে দেননি মিরাজ।
এই সফরে পঞ্চমবারের মত হেটমায়ারকে শিকার করেন মিরাজ। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের চার ইনিংসেই হেটমায়ারকে আউট করেছিলেন মিরাজ। আজ মাত্র ৬ রান করেন হেটমায়ার।
দলীয় রান ১শতে পৌঁছে যাবার আগেই থামতে হয় হেটমায়ারকে। তবে স্যামুয়েলসকে নিয়ে দলের রান তিন অংকে নিয়ে যান অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েল। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। তবে তাদের পথে কাটা হয়ে দাঁড়ান বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি। প্রথম স্পেলে ৭ ওভারে ১৪ রানে ২ উইকেট নেয়া মাশরাফি নিজের অষ্টম ওভারের প্রথম বলেই ১৪ রান করা পাওয়েলকে থামান।
পাওয়েলের বিদায়ের পর-পরই থামতে হয় ৪৭ বল খেলে উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া স্যামুয়েলসকে। নিজের মুখোমুখি হওয়া ৪৮তম বলে থামেন তিনি। রুবেল হোসেনের প্রথম শিকার হবার আগে ২টি চারে ২৫ রান করেন স্যামুয়েলস। ফলে ১২৭ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই অবস্থায় দেড়’র নীচে গুটিয়ে যাবার শংকায় পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
কিন্তু সপ্তম উইকেটে দায়িত্বপূর্ণ জুটি গড়েন রোস্টন চেজ ও কেমো পল। মারমুখী মেজাজে থেকে পাল্টা আক্রমণ করার চেষ্টা করেন তারা। তাদের সেই পরিকল্পনা কাজে দেয়। তাই সম্মানজনক স্কোর গড়ার পথ পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ পর্যন্ত চেজের ৩৮ বলে ৩২ ও পলের ২৮ বলে ৩৬ রানে সুবাদে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৯৫ রানের সংগ্রহ পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
মাশরাফি ১০ ওভারে ৩০ রানে ৩ উইকেট নেন। মুস্তাফিজুর রহমানও ৩ উইকেট নিয়েছেন ৩৫ রান খরচায়। এছাড়া ১টি করে উইকেট নেন মিরাজ-সাকিব-রুবেল।
জয়ের জন্য ১৯৬ রানের টার্গেট নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। তামিম সর্তক থাকলেও রান তোলার কাজটি করছিলেন লিটন। শেষ পর্যন্ত রোস্টন চেজের বলে ১২ রানে থেমে যেতে হয় প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করা তামিমকে।
তামিমের পর উইকেটে আসেন ইমরুল কায়েস।ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার ওশানে থমাসের দ্রুতগতির সামনে অহায় আত্মসমর্পন করেন ইমরুল। বাউন্ডারি দিয়ে ইনিংস শুরু করা ইমরুল ব্যক্তিগত ৪ রানে বোল্ড হন।
৪২ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর দলকে ভালো অবস্থায় নিয়ে যান লিটন ও মুশফিকুর রহিম। ৫৯ বলে ৪৭ রানের জুটি গড়েন তারা। একবার জীবন পেয়ে ৪১ রানের বেশি করতে পারেননি লিটন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরেক দ্রুতগতির পেসার কেমো পলের বলে বোল্ড হন লিটন।
৮৯ রানে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে লিটন যখন বিদায় নেন, তখন জয়ের জন্য বাংলাদেশের বড় একটি জুটির প্রয়োজন ছিলো। সেই প্রয়োজন মিটিয়েছেন মুশফিক ও সাকিব। প্রতিপক্ষ বোলারদের বিপক্ষে দ্রুতগতিতে রান তুলতে থাকেন তারা। এতে দলের স্কোর দেড়শ’র কাছাকাছি পৌঁছে যায়। তবে দেড়শ স্পর্শ করার আগেই বিদায় নেন সাকিব। ৪টি চারে ২৬ বলে ৩০ রান করে রোভম্যান পাওয়েলের বলে আউট হন তিনি সাকিব। মুশফিক-সাকিবের জুটিতে ৪৭ বলে ৫৭ রান আসে।
সাকিবের বিদায়ে উইকেটে আসেন দলের চার নম্বর ওপেনার সৌম্য সরকার। তখন জয় থেকে ৫০ রান দূরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। ম্যাচটি তাড়াতাড়ি শেষ করার ইচ্ছা হয়তো ছিলো সৌম্যর। তাই ২টি চার ও ১টি দশর্নীয় ছক্কায় নিজের ইনিংস শুরু করেন তিনি। তবে ১৯ রানে গিয়ে আটকে যান এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান।
সৌম্যর বিদায়ের পরের দিকে ম্যাচ জিততে কোন সমস্যাই হয়নি বাংলাদেশের। কারণ ষষ্ঠ উইকেটে মাথা ঠান্ডা রেখে অবিচ্ছিন্ন ২১ রানের জুটি গড়ে টাইগারদের জয় নিশ্চিত করেন মুশফিক ও মাহমুুদুল্লাহ। ওয়ানডে ক্রিকেটের ৩১তম হাফ-সেঞ্চুরিতে ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। তার ৭০ বলের ইনিংসে ৫টি চার ছিলো। অপরপ্রান্তে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদুল্লাহ।
আগামী ১১ ডিসেম্বর একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে।
স্কোর কার্ড :
ওয়েস্ট ইন্ডিজ :
কাইরেন পাওয়েল ক রুবেল ব সাকিব ১০
শাই হোপ ক মিরাজ ব মাশরাফি ৪৩
ড্যারেন ব্রাভো ক তামিম ব মাশরাফি ১৯
মারলন স্যামুয়েলস ক লিটন ব রুবেল ২৫
শিমরোন হেটমায়ার বোল্ড ব মিরাজ ৬
রোভম্যান পাওয়েল ক লিটন ব মাশরাফি ১৪
রোস্টন চেজ ক ব মুস্তাফিজুর ৩২
কেমো পল ক মিরাজ ব মুস্তাফিজুর ৩৬
কেমার রোচ অপরাজিত ৫
দেবেন্দ্র বিশু ক এন্ড ব মুস্তাফিজুর ০
ওশানে টমাস অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (লে বা-৩, ও-২) ৫
মোট (৯ উইকেট, ৫০ ওভার) ১৯৫
উইকেট পতন : ১/২৯ (পাওয়েল), ২/৬৫ (ব্রাভো), ৩/৭৮ (হোপ), ৪/৯৩ (হেটমায়ার), ৫/১১৯ (রোভম্যান), ৬/১২৭ (স্যামুয়েলস), ৭/১৭৮ (চেজ), ৮/১৯৪ (পল), ৯/১৯৫ (বিশু)।
বাংলাদেশ বোলিং :
মেহেদি হাসান মিরাজ : ১০-০-৩০-১,
সাকিব আল হাসান : ১০-০-৩৬-১,
মুস্তাফিজুর রহমান : ১০-০-৩৫-৩,
মাশরাফি বিন মর্তুজা : ১০-০-৩০-৩ (ও-১),
রুবেল হোসেন : ১০-০-৬১-১ (ও-১)।
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ইকবাল ক বিশু ব চেজ ১২
লিটন দাস বোল্ড ব পল ৪১
ইমরুল কায়েস বোল্ড ব থমাস ৪
মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ৫৫
সাকিব আল হাসান ক হোপ ব পাওয়েল ৩০
সৌম্য সরকার ক পাওয়েল ব চেজ ১৯
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অপরাজিত ১৪
অতিরিক্ত (লে বা-৬, নো-২, ও-১৩) ২১
মোট (৫ উইকেট, ৩৫.১ ওভার) ১৯৬
উইকেট পতন : ১/৩৭ (তামিম), ২/৪২ (ইমরুল), ৩/৮৯ (লিটন), ৪/১৪৬ (সাকিব), ৫/১৭৫ (সৌম্য)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং :
রোচ : ৬-০-৩৫-০ (ও-৫, নো-১),
চেজ : ৯-১-৪৭-২ (ও-২),
থমাস : ৫-০-৩৪-১ (ও-৩, নো-১),
পল : ৮-০-৩৭-১ (ও-৩),
বিশু : ৬.১-০-৩০-০,
পাওয়েল : ১-০-৭-১।
ফল : বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মাশরাফি বিন মর্তুজা (বাংলাদেশ)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
বাসস/এএসজি/এএমটি/২০৫০/মোজা/স্বব