বাসস দেশ-২৪ : নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ ও সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস আগামীকাল

333

বাসস দেশ-২৪
মুক্ত দিবস-আগামীকাল
নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ ও সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস আগামীকাল
ঢাকা, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : আগামীকাল ৭ ডিসেম্বর। এদিনে নোয়াখালী, গাপালগঞ্জ ও সাতক্ষীরা হানাদার মুক্ত হয়।এ সংক্রান্ত বাসস’র প্রতিবেদকদের পাঠানো প্রতিবেদন:
নোয়াখালী : অগামীকাল নোয়াখালী মুক্ত দিবস। মুক্তিসেনারা এদিন জেলা শহরের পিটিআই’তে রাজাকারদের প্রধান ঘাঁটির পতন ঘটিয়ে নোয়াখালীর মাটিতে উড়িয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় পতাকা।
নোয়াখালীকে হানাদার মুক্ত করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতি যখন প্রায় চুড়ান্ত, ঠিক তখনই ৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে মাইজদী পিটিআই ও বেগমগঞ্জ টেকনিক্যাল হাইস্কুল ক্যাম্প ছেড়ে কুমিল্লা সেনানিবাসের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যেতে থাকে পাকিস্তানী মিলিটারি ও মিলিশিয়ারা। এ সময় বেগমগঞ্জ-লাকসাম সড়কের বগাদিয়া ব্রিজ অতিক্রম করতেই সুবেদার লুৎফুর রহমান ও শামসুল হকের নেতৃত্বাধীন মুক্তি বাহিনীর হামলায় অসংখ্য মিলিটারি সদস্য ও মিলিশিয়া নিহত হয়।
মুক্তিযোদ্ধা মিয়া মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, ৭ ডিসেম্বর ভোররাত থেকে মুক্তিযোদ্ধারা নোয়াখালীকে শত্রুমুক্ত করার চুড়ান্ত অপারেশন শুরু করেন। সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে সকল মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে চতুর্দিক থেকে আক্রমণ চালিয়ে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা সংলগ্ন টেকনিক্যাল হাইস্কুলে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্প মুক্ত করে।
৭ ডিসেম্বর নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিনটি পালন করবে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
এ উপলক্ষে মাইজদি পিটিআই সংলগ্ন বিজয় মঞ্চে আলোচনা সভা, মুক্তিযুদ্ধের গান ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
গোপালগঞ্জ : আগামীকাল ৭ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ শহর পাক হানাদার মুক্ত হয়। গোপালগঞ্জ মুক্ত হওয়ার আগে এই অঞ্চলে পাক হানাদারদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লড়াই হয়। দিনটি পালন উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
পাক সেনারা ৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানা উপজেলা পরিষদ (বর্তমানে) সংলগ্ন জয় বাংলা পুকুর পাড়ের মিনি ক্যান্টমেন্ট ছেড়ে পালিযে যায়। ৭ ডিসেম্বর ভোরে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করে মুক্তিযোদ্ধারা, আর সেই সাথে মুক্ত হয় গোপালগঞ্জ শহর ও এর আশপাশ এলাকা। দিনটি পালন উপলক্ষে গোপালগঞ্জে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন জয় বাংলা পুকুর পাড়ের বধ্যভূমিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং পৌর পার্ক থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার অংশগ্রহণে র‌্যালি বের করা হবে।
সাতক্ষীরা : ৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে সাতক্ষীরার দামাল ছেলেরা মান্ধাতার আমলের থ্রি নট থ্রি আর এসএলআরের ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে সাতক্ষীরা শহরে প্রবেশ করে। ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। সন্তান হারানোর বেদনা ভুলে সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সাথে রাস্তায় নেমে আসে মুক্তিপাগল আপামর জনতা। দীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সেদিনের সাহসী সন্তানরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। পাক হানাদার ও তাদের দোসররা মা-বোনের ইজ্জত হরণ করেছিল। ধ্বংস করতে চেয়েছিল বাঙ্গালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে। শত্রুর বুলেটের এত সব আঘাত সহ্য করেও সাতক্ষীরার সন্তানরা ১৬টি সম্মুখ যুদ্ধের মোকাবেলা করেছিল।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে শত্রুদের গুলিতে সাতক্ষীরার যে সকল বীর সন্তান শহীদ হন তারা হলেন শহীদ আব্দুর রাজ্জাক, এ্যাড. ক্যাপ্টেন কাজী, আনসার, কাজল, খোকন, নাজমুল, নারায়ণ, হাফিজউদ্দিন, মনোরঞ্জন, নুর মোহাম্মদ, আবু বকর, ইমদাদুল হক, জাকারিয়া, শাহাদাত হোসেন, আব্দুর রহমান, আমিনউদ্দিন গাজী, আবুল কালাম আজাদ, সুশীল কুমার, লোকমান হোসেন, আব্দুল ওহাব, দাউদ আলী, সামছুদ্দোহা খান, মুনসুর আলী, রুহুল আমীন, জবেদ আলী, শেখ হারুন অর রশিদ প্রমুখ।
দিবসটি বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হবে।
বাসস/সংবাদদাতা/মমআ/১৯২৮/মরপা