বাসস দেশ-২২ : হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুড়িগ্রাম, মেহেরপুর ও যশোর মুক্ত দিবস পালিত

288

বাসস দেশ-২২
মুক্ত দিবস-পালিত
হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুড়িগ্রাম, মেহেরপুর ও যশোর মুক্ত দিবস পালিত
ঢাকা, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : আজ ৬ ডিসেম্বর। এ দিনে হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুড়িগ্রাম, মেহেরপুর ও যশোর হানাদারমুক্ত হয়। এ সংক্রানÍ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা’র প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ মুক্ত দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হবিগঞ্জ সদর উপজেলা ইউনিট। বৃহস্পতিবার সকালে মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতি দুর্জয়ে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে এক শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জ-৩ (সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট মোঃ আবু জাহির। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফজলুল জাহিদ পাভেল, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী পাঠান, লাখাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদ, জেলা পরিষদ সদস্য ফাতেমাতুজ জোহরা রিনা প্রমুখ। এতে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেন।
পরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
৬ ডিসেম্বরের ক’দিন আগেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শায়েস্তানগর ও উমেদনগরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রচন্ড গুলি বর্ষণের মাধ্যমে তাদের আগমন বার্তা ঘোষণা করেছিল। শায়েস্তানগর এলাকায় বর্তমানের টেলিফোন এক্সচেঞ্জর স্থানে পাকিস্তানী মিলিশিয়াদের একটি ক্যাম্প ছিল। তারা ৫ ডিসেম্বরেই শহর ছেড়ে চলে যায়। পাকিস্তনীদের দালাল এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুল¬া’র শায়েস্তানগরস্থ বাসভবনে একা হামলা চালাতে গিয়ে রাজাকারের গুলিতে নিহত হন মুক্তিযোদ্ধা সাবেক সেনা সদস্য নূরুল ইসলাম মাসুদ। তিনি শহীদ হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা শহরে আর কোন প্রতিরোধের সম্মুখীন হননি। রাজাকার, আলবদর আর সামস্ বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র হামলার মুখে রাতেই শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। ৬ ডিসেম্বরে শীতের সকালে রক্তিম সূর্য তার তীক্ষèতা দিয়ে বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের আরো সতেজ করে তোলে। শহরবাসী বাংলার দামাল মুক্তিযোদ্ধাদের অভিবাদন জানায়। তারা জয় বাংলা সেøাগান দিয়ে মুক্ত হবিগঞ্জ শহরের রাস্তায় নেমে এসে বিজয়ের উল্লাস প্রকাশ করে।
আখাউড়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় আজ বৃহস্পতিবার আখাউড়া মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল ৯টায় আখাউড়া পৌরশহরের সড়ক বাজারে উপজেলা ডাকঘরের সামনে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের পতাকা উত্তোলন করেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানেরা। ১৯৭১ সালের এ দিনে পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার খ্যাত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম রণাঙ্গণ আখাউড়া উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এ রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছিলেন শহীদ সিপাহী বীর শ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালসহ অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ জামসেদ শাহ, ডেপুটি কমান্ডার বাহার মিয়া মালদার, সাদেক উল্লাহ, নজরুল ইসলামসহ আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা।
কুড়িগ্রাম : আজ ৬ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনা, রাজাকার ও আলবদরদের হটিয়ে কুড়িগ্রামকে মুক্ত করে। দিবসটি উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বর্ণাঢ্য র‌্যালি, পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহন করে।
স্বাধীনতার বিজয়স্তম্ভে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডল, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম টুকু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহবায়ক শ্যামল ভৌমিক প্রমুখ। এছাড়া বেসরকারি সংগঠন সলিডারিটির উদ্যোগে এক আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংক, বীর প্রতীক আব্দুল হাই, মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ লাল, নুর উন নবী বাবু, রওশন আরা চৌধুরী প্রমুখ।
মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ে ৫ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা কুড়িগ্রাম মুক্ত করতে পাক হানাদার বাহিনীকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে সাঁড়াশি আক্রমণ চালায়। পরে ৬ ডিসেম্বর ভোর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি মিত্র বাহিনী বিমান হামলা চালায়। এসময় টিকতে না পেরে পিছু হটে পাকিস্তানী বাহিনী। সেদিন বিকেলে ৬নং সেক্টরের কোম্পানী কমান্ডার বীরপ্রতীক আব্দুল হাই মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্রথমে কুড়িগ্রাম শহরের ওভারহেট পানির ট্যাংকে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করে কুড়িগ্রামকে হানাদারমুক্ত ঘোষণা করেন।
মেহেরপুর : মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সম্মিলিতভাবে ৫ ডিসেম্বর মেহেরপুরে প্রবেশ করে পাকবাহিনীর পুঁতে রাখা অসংখ্য মাইন অপসারণের মধ্য দিয়ে মেহেরপুর পুরোপুরিভাবে হানাদার মুক্ত হয় ৬ ডিসেম্বর।
১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে মুক্তিবাহিনী পাকহানাদার বাহিনীর ওপরে ম্যারাথন আক্রমণ চালাতে শুরু করে। পাকহানাদার বাহিনী অবস্থা বেগতিক দেখে যুদ্ধ সরঞ্জাম গুটাতে থাকে। ওই দিনেই মুক্তিবাহিনী সকাল থেকে মেহেরপুরের পাকবাহিনীর আস্তানা লক্ষ্য করে অবিরাম গুলি বর্ষণ চলে। এতে আহতও হয় বেশ কয়েকজন। ২৮ এবং ২৯ নভেম্বর মুক্তিবাহিনীর একের পর এক হামলায় হানাদার বাহিনী মেহেরপুরে কোনঠাসা হয়ে পড়ে। পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে পাকবাহিনী ৩০ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে গোপনে পিছু হটতে থাকাকালে হানাদার বাহিনী আমঝুপি ব্রিজ, দিনদত্ত ব্রিজের কিছু অংশ বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়ে যায়। একই রাতে পালানোর সময় মুক্তিবাহিনীর মর্টার হামলায় কুলপালা নামক স্থানে বেশ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়।
দিবসটি উপলক্ষে ৬ ডিসেম্বর মেহেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিজয় র‌্যালি ও আলোচনাসভার আয়োজন করে।
যশোর : ১৯৭১ সালের এদিনে যশোর জেলা পাকহানাদার বাহিনী মুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর প্রচন্ড প্রতিরোধে এদিন যশোর সেনানিবাস ছেড়ে পালিয়ে যায় পাক হানাদার বাহিনী। শত্রুমুক্ত হয় যশোর জেলা।
দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরের টাউন হল ময়দান থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র‌্যালি শেষে মনিহারের সামনে (পুরাতন বাস টার্মিনালের পাশে) বিজয় স্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন সর্বস্তরের মানুষ।
১৯৭১ সালের ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এ সময় মিত্র বাহিনী সীমান্ত এলাকা থেকে যশোর সেনানিবাসসহ পাক আর্মিদের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে পর্যদস্ত পাকবাহিনী ৫ ডিসেম্বর থেকে পলায়ন শুরু করে। যশোর সেনানিবাস থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে খুলনার গিলাতলা সেনানিবাসের দিকে পালাতে থাকে। পাক বাহিনী ৫ ও ৬ ডিসেম্বর পলায়নকালে রাজারহাটসহ বিভিন্নস্থানে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাদের প্রচন্ড লড়াই হয়। ৬ ডিসেম্বর বিকেলের আগে যশোর সেনানিবাস খালি করে পালিয়ে যায় পাকহানাদার বাহিনী। ৬ ডিসেম্বর বিকেলে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যশোর সেনানিবাসে প্রবেশ করে।
বাসস/সংবাদদাতা/মমআ/১৯১৮/মরপা