বাজিস-১০ : শেরপুরে লেবু চাষ করে কৃষকরা লাভবান

262

বাজিস-১০
শেরপুর -লেবু
শেরপুরে লেবু চাষ করে কৃষকরা লাভবান
শেরপুর, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : শেরপুর সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার চরাঞ্চলে প্রতিবছর বন্যায় হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ী ও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সেই চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ এখন লেবুর চাষ করে লাভবান হচ্ছে। ওইসব এলাকায় যতদুর চোখ যায় শুধু লেবুর বাগান আর বাগান। শেরপুর-জামালপুর ফিডার রোড় থেকে নেমে গ্রামের মেঠো পথ ধরে ডানে-বামে কিছু দূর গেলেই চোখে পড়ে শুধু লেবুর বাগান।
সদর উপজেলার বলায়ের চরের ধোপার চর, চরশ্রীপুর, রামের চরসাহাব্দি, জঙ্গলদি, ঘুঘরাকান্দি চরপক্ষিমারির সাতপাকিয়া, কুলুরচর, চরশেরপুর, রৌহা ও কামারিয়ার অন্তত ২০ গ্রামের কয়েকশ’ একর জমিতে লেবুর চাষ করা হয়েছে । এই লেবুকে কেউ জাফরি কেউ বিচি ছাড়া (সিড লেছ) সুগন্ধি লেবু বলেই জানে। প্রান্তিক চাষিরা প্রায় প্রতিদিন গাছ থেকে লেবু তুলে বিক্রি করে।
তবে বড় চাষিরা ১৫ দিন অন্তর লেবু তুলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের কাছে বিক্রি করে। এখন প্রতি হাজার লেবুর দাম ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। লেবু চাষিদের মাধ্যমে জানা গেছে, ১০/১২ বছর আগে ২/৩টি বাগানের মাধ্যমে এই চাষের সূচনা হয়।
টাঙ্গাইলের জনৈক জাফর (জাফরের নাম অনুসারে জাফরি লেবু) নামের এক লোকের কাছ থেকে শেরপুরে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারি ও চরাঞ্চলের বাসিন্দা মনিরুজ্জামানের মাধ্যমে এর চাষ হয়। জানা গেছে, এক একর জমিতে লেবু চাষ করতে আড়াই বছর পর্যন্ত সব খরচসহ মোটামুটি (জমি ভাড়াসহ) দেড় থেকে ২ লাখ টাকা লাগে।
প্রতি বছর পরিচর্যাসহ আরও খরচ পড়ে ৫০ হাজার। আর পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন শুরু হয় আড়াই বছর পরেই। বছরে ওই এক একর জমি থেকে কমপক্ষে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার লেবু আসে।
আড়াই বছর পর থেকে ১২ বছরে ওই একর একর জমিতে খরচ হয় ৭ থেকে ৮ লাখ আর আয় আসে ১৭ থেকে ১৮ লাখ টাকা।
লেবু চাষকে কেন্দ্র করে এখানের মানুষজনের অর্থনীতি যেমন সমৃদ্ধ হচ্ছে তেমনি এক সময়ের অভাবি চরবাসীর ছেলেমেয়েরা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।
বলায়ের চর গ্রামের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী সজিব রানা জানান, পড়ার ফাঁকে ফাঁকে নিজের লেবুর বাগানে কাজ করি। গ্রামে লেবুর বাগানকে কেন্দ্র করে কেউ আর অতি গরিব বা না খেয়ে থাকে না। যাদের বাগান করার জমি নেই তারা অন্যের জমিতে শ্রম দিয়ে আয় করছে। আর মোটামুটি এক একরের একটি বাগান কোনো রকম ২ বছর ধরে রাখতে পারলেই পরবর্তী ১০ বছর খুব সামান্য খরচ করেই প্রতিদিন কিছু না কিছু আয় আসছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছে, চরাঞ্চলের বালু মাটি লেবু চাষের জন্য উপযুক্ত এ কৃষিতে মূলধন ও শ্রম দিতে হয় কম। ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় অবস্থান বলে বন্যা ওদের চির সাথী। গাছের নিচে ১০/১২ দিন পানি থাকলেও গাছের কোনো ক্ষতি হয় না। আর এ লেবু চাষ সাধারণত জৈব সার দিয়েই চাষ হয়ে থাকে। রাসায়নিক সারের তেমন প্রয়োজন হয় না, পরিশ্রমও কম। তাই এই লেবু চাষে সবার ঝোঁক।
এই এলাকার সবচেয়ে বড় লেবু চাষি মনিরুজ্জামান জানান, চরাঞ্চলের মানুষের কম ঝুঁকিতে এমন একটি দীর্ঘমেয়াদি ফসলের দরকার ছিল। এখন এখানে কেউ আর বেকার নেই।
লেবু সংশ্লিষ্ট শিল্প যেমন সাইট্রিক অ্যাসিড, লেবুর তেল, লেবুর জুস, লেমন গ্রাস (সাবানের কাঁচামাল), স্কোয়াস জেলি উৎপাদন করে বাজারজাতকরণ করতে পারলে আগামী দিনে লেবুর উৎপাদন ও কৃষকের লাভ হবে।
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন জানান, লেবু চাষে এ অঞ্চলের জমি খুবই উপযোগী। চরাঞ্চলে লেবু বিচিবিহীন রসালো, স¦াদ, গন্ধ ও ভিটামিনে পরিপূর্ণ।
বাসস/সংবাদদাতা/১৮০০/মরপা